সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে যেখানে এক যুবককে মাটিতে ফেলে অপর দুই ব্যক্তি দ্বারা লাঠি এবং বাঁশ দিয়ে পেটাতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে অনেকেই লিখছেন যে আক্রান্ত এই যুবক একজন মুসলিম যাকে হিন্দুত্ববাদীদের দ্বারা নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে।
ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "বিজেপি শাসিত রাজ্যে মুসলিম হয়ে জন্মানো অপরাধ। উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে মিরাজ নামে এক মুসলিম যুবক নিজের কাজ সেরে বাড়ি যাওয়ার পথে কিছু হিন্দুত্ববাদী মৌলবাদী তার নাম জিজ্ঞাস করে তাকে শারীরিক ভাবে নির্যাতন করে, তার নির্মম ভিডিও বানিয়ে ভাইরাল করে।"
অনেকেই একই দাবিতে ভিডিওটি পোস্ট করেছেন।
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে দাবিটি মিথ্যে। এই ঘটনায় আক্রান্ত ও অভিযুক্ত দু'জনেই হিন্দু সম্প্রদায়ের।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে সেগুলিকে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খোঁজা হলে ওই একই দৃশ্যের স্ক্রিনশট-সহ একাধিক সংবাদ মাধ্যমের নিউজ রিপোর্ট পাওয়া যায়। ২৬ ও ২৭ জুন প্রকাশিত এবিপি নিউজ, অমর উজালা, জাগরণ এবং দৈনিক ভাস্করের মতো একাধিক রিপোর্টে এই ঘটনা সম্পর্কে সবিস্তারে লেখা হয়।
রিপোর্টগুলি থেকে জানা যায়, উক্ত ঘটনাটি উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদের নয়, বরং দেওরিয়া জেলার। এই ঘটনাটি গত ১৩ জুন দেওরিয়ার রুদ্রপুর থানা এলাকার বিট্ঠলপুর গ্রামে ঘটেছিল। প্রত্যেকটি খবরেই লেখা হয়, যে ১৯ বছরের যুবককে ক্ষেতের জমিতে ফেলে পেটাতে দেখা যাচ্ছে তার নাম হরিভজন নিশাদ উর্ফ ভোলু নিশাদ। যা থেকে অনুমান করা যায় যে আক্রান্ত ব্যক্তি মুসলিম নয় বরং হিন্দু।
এই ঘটনার পর আক্রান্ত হরিভজন নিশাদকে এই ঘটনার পর গোরক্ষপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু গত ২১ জুন সেখানেই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর পুলিশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। তদন্ত চালিয়ে একোন থানা এলাকার ভীম নিশাদ নামের যুবককে গ্রেফতার করা হয়। সেই সঙ্গে আক্রান্ত পরিবার প্রাথমিক অভিযোগ জানাতে গেলে গাফিলতি করার অভিযোগে রুদ্রপুর থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকেও সাসপেন্ড করা হয়।
এই ঘটনা নিয়ে দেওরিয়া পুলিশের এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করে বিশদে জানানো হয়। সেখানে লেখা হয়, মৃত যুবক হরিভজনের বাবার নাম রামনিবাস। এবং গ্রেফতার হওয়া যুবক ভীম নিশাদের বাবার নাম রাজ নিশাদ। এই ঘটনায় আরও দুই অভিযুক্ত রতনদীপ নিশাদ এবং সানি নিশাদ বর্তমানে পলাতক। পুলিশ তাদের সন্ধান করছে।
দেওয়ারি জেলার পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট বিক্রান্ত বীর এই বিষয়ে সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানান যে হরিভজন নিশাদের মৃত্যুর পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই ঘটনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত থানা আধিকারিকের গাফিলতির কারণে তাঁকে অবিলম্বে সাসপেন্ড করা হচ্ছে। ওই আধিকারিকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। দেওরিয়ার এসপি-র বক্তব্যের ভিডিও নীচে দেখতে পাওয়া যাবে।
সবমিলিয়ে বোঝাই যাচ্ছে যে এই ঘটনায় মৃত এবং অভিযুক্ত উভয়েই হিন্দু। অর্থাৎ উত্তর প্রদেশের একটি ঘটনাকে মিথ্যে সাম্প্রদায়িক দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তি ছড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ভিডিওটি উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদের যেখানে মিরাজ নামের এক মুসলিম যুবককে হিন্দুত্ববাদীরা নির্মমভাবে মারে।
ঘটনাটি গত ১৩ জুন দেওরিয়া জেলায় ঘটেছিল। এখানে আক্রান্ত এবং অভিযুক্ত সকলেই হিন্দু সম্প্রদায়ের।