চলছে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র রমজান মাস। আর এই মাসেই নাকি গরুর মাংস বিক্রি করার অপরাধে ভারতে মুসলিমদের বাড়ি-ঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই দাবিতে ফেসবুকে একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে।
৩০ সেকন্ডের এই ভিডিও-র শুরুতে এক বৃদ্ধকে ঘর-বাড়ির ধ্বংসস্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদতে ও কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। আরও এক বৃদ্ধা ও বৃদ্ধকে ভাঙাচোরা ইট সিমেন্টের কাঠামোর উপর বসে কাঁদতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিও-তে বিবিসি-র একটি লোগোও রয়েছে।
ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "ইন্নালিল্লাহ। ভারতে গরুর মাংস বিক্রি করার অপরাধে। মুসলমানদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে চড়ে শেষ করে দিচ্ছে। আল্লাহ এ সমস্ত জালিমদের থেকে মুসলমানদেরকে হেফাজত করুন। আমিন।"
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল ভিডিওটি পবিত্র রমজান মাসের নয় বরং গত জানুয়ারি মাসের। এবং গরুর মাংস বিক্রির জন্য ঘর-বাড়িগুলি ভাঙা হয়নি।
যেভাবে জানা গেল সত্যি
যেহেতু ভাইরাল ভিডিওতে বিবিসি-র একটি লোগো দেখা যাচ্ছিল, তাই একটা বিষয় আগে থেকেই পরিষ্কার যে ভিডিওটি সেই সংবাদ মাধ্যমের। তাই সেই মতো কিওয়ার্ড সার্চ করে ভিডিওটি বিবিসি গুজরাটির অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে পাওয়া যায়। ভিডিওটি ২০২৫ সালের ১৮ জানুয়ারি, অর্থাৎ রমজান মাস শুরু হওয়ার প্রায় দেড় মাসে আগে পোস্ট করা হয়েছিল।
এর থেকে প্রথম যে বিষয়টি পরিষ্কার হয় তা হলো এই ভিডিওটির সঙ্গে মুসলিমদের পবিত্র রমজান মাসের কোনও সম্পর্ক নেই। এরপর দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, এখানে বাড়ি-ঘর কেন ভাঙা হয়েছিল?
ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এই ভাঙচুরের ঘটনাটি দ্বারকার। দ্বারকা হলো গুজরাটের একটি শহর। এই সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চ করে ২০২৫ সালের ১১ জানুয়ারি প্রকাশিত টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি খবর পাওয়া যায়। সেই খবর অনুযায়ী, গুজরাটের বেত দ্বারকায় বিশাল অভিযান চালিয়ে ৬৫-র বেশি অবৈধ নির্মাণ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বেত দ্বারকা হলো গুজরাটের মূল ভূখণ্ড থেকে অনতিদূরত্বে অবস্থিত একটি দ্বীপ। খবর অনুযায়ী, এই দ্বীপের বালাপাড় এলাকায় এই অবৈধ নির্মাণ উচ্ছেদ অভিযান চালায় রাজ্য প্রশাসন। দ্বারকার প্রান্ত অফিসার আমোল আওয়াতে জানান যে ওই একদিনে, অর্থাৎ ১১ জানুয়ারি মোট ৬৫টি অবৈধ নির্মাণ ভাঙা হয় যার মধ্যে বেশিরভাগই ছিল অবৈধ বাড়ি। বাড়িগুলি সরকারি জমি দখল করে তৈরি করা হয়েছিল বলে জানান তিনি।
চলতি বছর ১৮ জানুয়ারি ইন্ডিয়া টুডের একটি খবরে বলা হয়, কয়েকদিন যাবৎ বেত দ্বারকা, ওখা এবং পিরতন দ্বীপে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। সর্বমোট প্রায় ২৫০টি বাড়ি ও কয়েকটি ধর্মীয় উপাসনালয় ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে প্রায় কয়েক কোটি টাকার সরকারি জমি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান আধিকারিকেরা।
গত ২৭ জানুয়ারি প্রকাশিত নিউজক্লিকের খবরে লেখা হয়, দ্বারকার আশেপাশে মোট ২০টি দ্বীপে ধরে-ধরে এই উচ্ছেদ ও অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলার অভিযান চালানো হয়। এই সমগ্র উচ্ছেদ অভিযানে একটি দরগাহ ও ৯টি মাজারও ভাঙা পড়ে। এই খবরগুলিতে কোথাও-ই গরুর মাংস বিক্রি সংক্রান্ত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
ফলে বুঝতে বাকি থাকে না যে গত জানুয়ারি মাসের একটি ভিডিওকে সাম্প্রতিক ঘটনার দাবিতে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে ছড়ানো হচ্ছে।
ভিডিওটি ভারতের যেখানে রমজান মাস চলাকালীন গরুর মাংস বিক্রির অপরাধে মুসলিমদের বাড়ি-ঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে।
এই ভিডিওটি গত জানুয়ারি মাসের, রমজান মাসের নয়। গুজরাট রাজ্য সরকার দ্বারকা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় সরকারি জমিতে অবৈধ দখল সরাতে নেমেছিল।