Advertisement

ফ্যাক্ট চেক: সংবিধানের ৩০ নম্বর ধারা নিয়ে অসত্য-সাম্প্রদায়িক দাবি ছড়াল সোশ্যাল মিডিয়ায়  

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু মানুষ একটি পোস্ট শেয়ার করছেন। সেই পোস্টের সারবত্তা হল- সংবিধানের ৩০এ ধারা অনুযায়ী নাকি হিন্দু মন্দির থেকে ৭০ শতাংশ দানের অর্থ রাজ্য সরকার নিয়ে নিতে পারে। কিন্তু ৩০ নম্বর অনুচ্ছেদে নাকি চার্চ বা মসজিদকে তাদের অনুদানের অর্থ দিয়ে ধার্মিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়।

ফ্যাক্ট চেক: সংবিধানের ৩০ নম্বর ধারা নিয়ে অসত্য-সাম্প্রদায়িক দাবি ছড়াল সোশ্যাল মিডিয়ায়  ফ্যাক্ট চেক: সংবিধানের ৩০ নম্বর ধারা নিয়ে অসত্য-সাম্প্রদায়িক দাবি ছড়াল সোশ্যাল মিডিয়ায়  
ঋদ্ধীশ দত্ত
  • কলকাতা,
  • 18 May 2023,
  • अपडेटेड 10:49 AM IST

ভারতবর্ষের মহান গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোর মেরুদণ্ড হচ্ছে সংবিধান। কিন্তু এ বার নেটিজেনদের একাংশ এই সংবিধানের কিছু অনুচ্ছেদ নিয়েই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন ও দাবি করছেন, এখানে এমন দুটি ধারা রয়েছে যা নাকি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ অর্থাৎ হিন্দুদের বঞ্চিত রেখে, সংখ্যালঘুদের অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করে।

কী দাবি করা হচ্ছে?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু মানুষ একটি পোস্ট শেয়ার করছেন। সেই পোস্টের সারবত্তা হল- সংবিধানের ৩০এ ধারা অনুযায়ী নাকি হিন্দু মন্দির থেকে ৭০ শতাংশ দানের অর্থ রাজ্য সরকার নিয়ে নিতে পারে। কিন্তু ৩০ নম্বর অনুচ্ছেদে নাকি চার্চ বা মসজিদকে তাদের অনুদানের অর্থ দিয়ে ধার্মিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

এই পোস্ট শেয়ার করে অনেকেই দাবি করছেন, এই দুই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে হিন্দুদের প্রতি অবিচার এবং বৈষম্য করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এই আইন কংগ্রেস সরকারের তৈরি দাবি করে, ইউনিফর্ম সিভিল কোড অর্থাৎ এক দেশে এক আইন চালু করার দাবি জানানো হয়েছে।

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক টিম অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল পোস্টের দাবিটি সর্বৈব মিথ্যে। প্রথমত, সংবিধানে ৩০এ বলে কোনও ধারা নেই। দ্বিতীয়ত, ৩০ ধারায় কোনও মসজিদ বা চার্চের টাকা ব্যবহার করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরির কথা বলা হয়নি।

কীভাবে জানা গেল সত্যি?

সবার প্রথম আমরা খুঁজে দেখার চেষ্টা করি যে, ৩০এ সংবিধানের ধারা অনুযায়ী রাজ্য় সরকার মন্দিরের ৭০ শতাংশ অর্থ নিতে পারে, এমন কোনও নিয়ম রয়েছে কিনা। যদি এমন কোনও ধারা অনুযায়ী কোনও ঘটনা ঘটত, বা কোনও এমন বৈষম্যমূলক ধারাও থাকত, তবে অবশ্যই এই নিয়ে কোনও খবর প্রকাশ পেত। কিন্তু এমন কোনও খবর আমরা দেখতে পাইনি।

এরপর আমরা ভারতীয় সংবিধানের ৩০ বা ৩০এ নম্বর অনুচ্ছেদে কী রয়েছে, তা খুঁজে দেখতে ভারত সরকারের ওয়েবসাইটে থাকা সংবিধানের পিডিএফ কপি খুলে দেখি। সংবিধানের কপিতে দেখা যায়, ৩০এ বলে কোনও ধারা বা অনুচ্ছেদই নেই। বরং ৩০ নম্বর অনুচ্ছেদেও মোট তিনটি প্রাবধান রয়েছে। ৩০(১), প্রথমটি বলা হয়েছে, ধর্ম বা ভাষার ভিত্তিতে যে কোনও সংখ্যালঘুর অধিকার রয়েছে নিজের পছন্দ অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করার।

Advertisement

এরপরের দুটি প্রাবধান, অর্থাৎ ৩০(১এ)-তে বলা রয়েছে, এই ধরনের কোনও প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি যদি কোনও কারণে অধিগ্রহণের প্রয়োজন হয়, তবে সরকারকে সেই পরিমাণ অর্থ নিশ্চিত করতে হবে যাতে এই অনুচ্ছেদের প্রথম অধিকার লঙ্ঘিত না হয়। এবং তৃতীয়ত, ৩০(২) নম্বর প্রাবধান অনুসারে, সরকার আর্থিক সহায়তার সময় যেন কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধর্মীয় বা ভাষাগত কারণে সেই প্রতিষ্ঠানের প্রতি বৈষম্য না হয়।

অর্থাৎ, সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে, হিন্দু মন্দিরের থেকে অর্থ রাজ্য সরকারের অর্থ নেওয়ার দাবি, বা ভাইরাল পোস্টের পরবর্তীতে থাকা মসজিদ বা চার্চের অর্থ থেকে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরির অনুমতি থাকার দাবি আসলে ভুয়ো, এবং মনগড়া। এর সঙ্গে বাস্তবের কোনও যোগসূত্র নেই।

সেই সঙ্গে পোস্টে লেখা হয়েছিল যে কংগ্রেস সরকার নাকি এই আইন এনেছিল। এই নিয়ে সার্চ করে আমরা বিজনেস স্টান্ডার্ডের ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই। সেখানে লেখা হয় যে, এই ৩০ নম্বর ধারা ও তার প্রাবধানগুলি ১৯৪৮ সালের ৮ ডিসেম্বর সংবিধানের অন্তর্গত করেছিল সংবিধান প্রণেতা বিআর আম্বেদকরের অধীনে থাকা কমিটি। উল্লেখ্য, সেই সময় কংগ্রেস দল সরকারিভাবে ভারত শাসন করা শুরু করেনি। কারণ দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন ১৯৫১ সালের অক্টোবর মাস থেকে ১৯৫২ সালের মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। উপরন্তু, যে আইনের দাবি করা হয়েছে, তার অস্তিত্বই আসলে নেই। এই বিষয়টিও ইতিমধ্যেই প্রমাণিত।

এই নিয়ে অতিরিক্ত তথ্যের জন্য আমরা যোগাযোগ করি সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, ওড়িশা এবং মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি অশোক গাঙ্গুলির সঙ্গে। তিনি আমাদের স্পষ্ট জানান যে এই উভয় দাবি পুরোপুরি ভিত্তিহীন। তাঁর কথায়, "এমন কথা কোথাও লেখা নেই। আর্টিকেল ৩০ বা সাব-আর্টিকেল ৩০(১এ), কোনওটাই রাজ্য সরকারকে মন্দির থেকে অর্থ নেওয়ার এক্তিয়ার দেয় না।"

তিনি আরও বলেন, "৩০ নম্বর অনুচ্ছেদ সংখ্যালঘুদের সাংস্কৃতিক অধিকার বজায় রাখার একটি বিধান। এবং এটি সংখ্যালঘুদের ভাষাগত এবং ধর্মীয় উভয় অধিকারকে তাদের নিজস্ব পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করার অধিকার সংরক্ষণ করে।"

প্রাক্তন 'সুপ্রিম' বিচারপতির আরও সংযোজন, "অনুচ্ছেদ ৩০(১এ)-এর অধীনে, এটি বলা হয়েছে যে যদি একটি সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান আইনের কোনও বিধান দ্বারা বা সরকারের দ্বারা অধিগ্রহণ করা হয়, তাহলে ক্ষতিপূরণটি এমন হবে, যা অনুচ্ছেদ ৩০ অনুযায়ী সংখ্যালঘুদের তাদের অধিকার বজায় রাখার অনুমতি দেবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়কে বঞ্চিত করার সঙ্গে এই অনুচ্ছেদের কোনও সম্পর্ক নেই।"

ফলে বোঝাই যাচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় যে দাবিটি ভাইরাল হয়েছে, তা পুরোপুরি মিথ্যে।

 

Fact Check

Claim

ভারতীয় সংবিধানের ৩০ ধারা মসজিদ ও চার্চের দানের টাকা থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গঠনের অনুমতি দেয়। কিন্তু ৩০এ ধারা রাজ্য সরকারকে মন্দির থেকে ৭০ শতাংশ দক্ষিণা নেওয়ার অধিকার দেয়।

Conclusion

সংবিধানে ৩০এ বলে কোনও ধারাই নেই। সংবিধানের ৩০ নম্বর ধারা সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষিত করায় জোর দেয়। রাজ্য সরকার মন্দির থেকে ৭০ শতাংশ অর্থ নিতে পারবে, এই দাবিরও কোনও সত্যতা নেই।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  1. কাক: অর্ধসত্য
  2. একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  3. অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Do you think a messenge is a fake ?
To know the truth, send that to our Number73 7000 7000 you can email on factcheck@intoday.com
Read more!
Advertisement
Advertisement