আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে নারকীয় ধর্ষণ-খুনের ঘটনা রাজ্য তথা দেশে নারী নিরাপত্তা নিয়ে ফের একবার প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হচ্ছে আনন্দবাজার পত্রিকা ডিজিটালের একটি ইনফোগ্রাফিক্স। এই গ্রাফিক কার্ডে উল্লেখ করা হয়েছে যে কোন রাজনৈতিক দলের কতজন বর্তমান বিধায়ক বা সাংসদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ রয়েছে।
এই গ্রাফিক কার্ডটি শেয়ার করে নেটিজেনদের অনেকেই দাবি করছেন যে, নারী নির্যাতনের মামলায় সিপিএমের বর্তমান কোনও সাংসদ বা বিধায়ক অভিযুক্ত নেই। এই গ্রাফিক্সে দেখা যাচ্ছে যে, নারী নির্যাতনের মামলায় বিজেপির ৫৪ নেতা, কংগ্রেসের ২৩, টিডিপি ১৭, আপ ১৩, তৃণমূল ১০, আরজেডি ৫ ও অন্যান্য দলের ২৯ নেতা অভিযুক্ত।
এই গ্রাফিক পোস্ট শেয়ার করে অনেকেই লিখছেন যে, "এখানেও CPIM শূন্য...... BJP জিতে গেছে, TMC লড়াই তে আছে।" কেউ কেউ আবার লিখেছেন, "হা হা! সিপিএম এখানেও শূন্য!"
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে দাবিটি সঠিক নয়। নারী নির্যাতনের মামলায় সিপিএম এবং সিপিআই(এমএল)-এর বর্তমান বিধায়কেরাও অভিযুক্ত রয়েছেন।
কীভাবে জানা গেল সত্যি
সবার প্রথম আমরা খোঁজার চেষ্টা করি যে আনন্দবাজারে এই সংক্রান্ত কোনও খবর প্রকাশ করেছিল কিনা। কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আমরা ২১ অগস্ট প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকার একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই। একই ইনফোগ্রাফিক ব্যবহার করে এই খবরে তুলে ধরা হয় যে কোন রাজনৈতিক দলে নারী নির্যাতন মামলায় অভিযুক্ত বর্তমান সাংসদ, বিধায়কদের সংখ্যা কত। এই পরিসংখ্যানের তথ্যসূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয় ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস’ (এডিআর)-এর একটি রিপোর্ট।
এই প্রতিবেদনে প্রত্যেক রাজনৈতিক দল ভিত্তিতে নেতাদের নামে নারী ঘটিত মামলা এবং এই রাজ্যের কোন দলের কতজন একই ধরনের অভিযোগে অভিযুক্ত তার বিশদ তথ্য ছিল। তবে সিপিএমের বিষয়ে কোনও তথ্য এখানে প্রকাশ করা হয়নি।
এই বিষয়ে বিশদে জানতে আমরা অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস’ (এডিআর)-এর গত ২১ অগস্ট প্রকাশিত রিপোর্ট খতিয়ে দেখি। সেই রিপোর্ট খুলে দেখা যায়, মহিলাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের ঘটনায় একজন সিপিএমের বিধায়কও রয়েছেন। শুধু তাই নয়, একই তালিকায় নাম রয়েছে এক সিপিআই(এমএল) বিধায়কেরও।
এই তালিকায় সিপিএমের ও সিপিআই(এমএল)-র ঠিক কোন-কোন বিধায়কের নাম রয়েছে তা জানতে আমরা এডিআর-র ৩০০ পাতার রিপোর্টটি খতিয়ে দেখা শুরু করি। ৩০০ পাতার এই রিপোর্টে কোন রাজ্যের কোন রাজনৈতিক দলের কোন নেতার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, তার বিশদ তথ্য দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক বিধায়ক বা সাংসদের নির্বাচনী হলফনামা থেকেই এই তথ্য সংকলন করা হয়েছে।
৩০০ পাতার এই রিপোর্টের ২৪৪ নম্বর পাতায় সবার প্রথম দেখা যায় কেরলের কোন্নি বিধানসভার নির্বাচিত সিপিএম বিধায়ক কেইউ জেনিস কুমারের। ভারতীয় দণ্ডবিধির কোন কোন ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে সেই বিষয়টিও সেখানে উল্লেখ করা হয়। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটেও এই আমরা ওই প্রার্থীর হলফনামা দেখতে পাই যেখান থেকে প্রমাণ হয়ে যায় যে তাঁর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা রয়েছে।
সেই সঙ্গে এই রিপোর্টের ২৬৯ নম্বর পাতায় সিপিআই(এমএল)-র এক বিধায়কের নামও ছিল। এই বিধায়ক বিহারের বলরামপুর বিধানসভা থেকে নির্বাচিত। তাঁর নাম মাহবুব আলম।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে সিপিএম বিধায়কদের বা সাংসদের বিরুদ্ধে মহিলা নির্যাতনের অভিযোগের সংখ্যা শূন্য, এই দাবিটি সত্য নয়।
নারী নির্যাতনের মামলায় অভিযুক্ত নন সিপিএমের কোনও বিধায়ক বা সাংসদ।
সিপিএমের কেরলের কোন্নি বিধানসভার বিধায়ক এবং সিপিআই(এমএল)-র বলরামপুর বিধানসভার বিধায়ক নারী নির্যাতনের মামলায় অভিযুক্ত রয়েছেন।