Advertisement

ফ্যাক্ট চেক: দ্রৌপদী মুর্মুর মেকআপ না করার গল্পে মশগুল হচ্ছেন! সত্যিটা জানেন তো?

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে নিয়ে একটি গল্প ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দাবি করা হচ্ছে, অভ্র খনিতে কাজ করার সময় মৃত্যু হয় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর বাবা, মা, দুই ভাই ও বোনের। আর যেহেতু অভ্র দিয়ে মেকআপের সামগ্রী তৈরি হয়। তাই তিনি মেকআপ করেন না।

সুরাজউদ্দিন মণ্ডল
  • কলকাতা,
  • 28 Jun 2024,
  • अपडेटेड 5:01 PM IST

ভারতের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি হলেন দ্রৌপদী মুর্মু। সম্প্রতি তাঁর মেকআপ না করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি চমকপ্রদ গল্প ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দাবি করা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি মুর্মু ঝাড়খণ্ডের একটি আদিবাসী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পরে তাঁর নাম রাখা হয় শ্রীমতী রানী সোয়ামই। 

সেখানে আরও দাবি করা হয়েছে যে দ্রৌপদী মুর্মুর পরিবারের সকল সদস্য অভ্র খনিতে কাজ করতেন। সেই খনিতে কাজ করার সময় অসুস্থ হয়ে প্রথমে তাঁর এক ভাই এবং পরে খনি ধসের কারণে তাঁর বাবা, মা ও ছোট বোন-সহ গোটা পরিবারের সকল সদস্যদের মৃত্যু হয়। পরবর্তিতে তিনি একটি মন্দিরে আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং সেখান থেকে নিজের পড়াশুনা সম্পন্ন করে কেরলার মলাপ্পুরম জেলার জেলাশাসক হন। সেই সময় তিনি জানতে পারেন অভ্র থেকে মেকাআপ সামগ্রী তৈরি হয়। যেহেতু অভ্র খনিই তাঁর পরিবারের সকল সদস্যকে কেড়ে নিয়েছে। তাই তিনি আর মেকআপ করেন না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল এমন একটি পোস্টের সম্পূর্ণ সংস্করণ নীচে দেখা যাবে।

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, শ্রীমতী রানী সোয়ামই মালায়ালাম লেখক হেকিম মোরায়ুরের লেখা "শাইনিং ফেসেস" নামক গল্পের একটি কাল্পনিক চরিত্র মাত্র। যে গল্পের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি কখনও কোনও জেলার জেলাশাসক ছিলেন না। পাশাপাশি দ্রৌপদী মুর্মুর জন্ম ঝাড়খণ্ডে নয় ওড়িশার এক কৃষক পরিবারে হয়েছিল এবং তাঁর পরিবারের কেউ খনিতে কাজ করতেন না। 

আরও পড়ুন

কীভাবে জানা গেল সত্য?

ভাইরাল পোস্টের সত্যতা এবং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু জীবনী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমরা একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করি। সেই সার্চ করার সময় আমরা রাষ্ট্রপতি দপ্তরের সরকারি ওয়েবসাইটে দ্রৌপদী মুর্মুর প্রোফাইল দেখতে পাই। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৫৮ সালের ২০ জুন ওড়িশার ময়ূরভঞ্জের উপরবেদা গ্রামে একটি সাঁওতালি উপজাতি পরিবারে জন্মগ্রহণ করে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। তিনি গ্রামের স্কুল থেকে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন করেন এবং পরবর্তিতে ভুবনেশ্বরের রামাদেবী মহিলা কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনিই তাঁর গ্রামের প্রথম মহিলা ছিলেন যিনি স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। 

Advertisement

রাষ্ট্রপতি দপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে আমরা আরও জানতে পারি, দ্রৌপদী মুর্মু তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন ওড়িশা সরকারের সেচ ও বিদ্যুৎ দপ্তরের একজন জুনিয়ার সহকারি হিসাবে। পরবর্তীতে, তিনি রায়রাংপুরের শ্রী অরবিন্দ ইন্টিগ্রাল এডুকেশন সেন্টারে একজন সম্মানসূচক শিক্ষিকা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি ২০০০ সালে রায়রাংপুর থেকে ওড়িশা বিধানসভার বিধায়ক নির্বাচিত হন। এই সময়কালে, তিনি ২০০০ সালের ৬ মার্চ থেকে ২০০২ সালের ৬ আগস্ট পর্যন্ত ওড়িশা সরকারের বাণিজ্য ও পরিবহন এবং ২০০২ সালের ৬ আগস্ট থেকে ২০০৪ সালের ১৬ মে পর্যন্ত মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন বিভাগের স্বাধীন দায়িত্ব প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তিতে ২০১৫ সালের ১৮ মে তিনি ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল নিযুক্ত হয়েছিলেন৷ 

রাষ্ট্রপতি দপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে দ্রৌপদী মুর্মু ওড়িশাতে জন্মগ্রহণ করেন, ঝাড়খণ্ডে নয়। এবং তিনি কখনই কোনও জেলার জেলাশাসকও ছিলেন না। তবে এরপর আমরা তাঁর পরিবার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পুনরায় একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করি। তখন আমরা ২০২২ সালের ২১ জুলাই এবিপি নিউজের একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে মাত্র ছয় বছরে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তাঁর স্বামী, দুই ছেলে, মা এবং এক ভাইকে হারিয়েছেন। বর্তমানে ইতিশ্রী মুর্মু নামে তাঁর এক মেয়ে আছেন।

ভাইরাল পোস্টের দাবির সত্যতা জানতে এরপর  আমরা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর পিএ-র সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, “ভাইরাল পোস্টের সব দাবিই ভিত্তিহীন। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু কখনই কোনও জেলার জেলাশাসক ছিলেন না। পাশাপাশি তাঁর জন্ম ঝাড়খণ্ডে নয় ওড়িশার এক আদিবাসী কৃষক পরিবারে হয়েছিল এবং তিনি ছাড়াও তাঁর দুই ভাই ছিলেন। যাদের মধ্যে এক ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে এবং অপর ভাই এখনও বেঁচে আছেন ”

আমরা এরপর এবিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, “আমাদের বাবা ওড়িশার ময়ূরভঞ্জের উপরবেদা গ্রামের প্রধান ছিলেন এবং পেশায় তিনি ছিলেন একজন কৃষক। আজ থেকে প্রায় ২৭ বছর আগে বার্ধক্যজনিত কারণে আমাদের বাবা মৃত্যুবরণ করেন। আমরা দুই ভাই ও রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু হলেন আমাদের একমাত্র বোন। কয়েক বছর আগেই আমার মা বার্ধক্যজনিত কারণে ও আমার ভাই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। অন্যদিকে আমার বোন তথা দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুরও দুই ছেলে ও এক মেয়ে আছে। কিন্তু ২০০৯ সালে অস্বাভাবিক কারণে আমার বোনের এক ছেলে এবং ২০১২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় অপর আর এক ছেলে মারা যান। আমার বোনের স্বামীও ২০১৪ সালে হৃদরোগে মারা যান। তাঁর একমাত্র মেয়ে ইতিশ্রী মুর্মু ওড়িশার ইউকো ব্যাঙ্কে কর্মরত। ইতিশ্রী ২০১৫ সালে রাগবি খেলোয়াড় গণেশ হেমব্রমের সাথে বিয়ে করেন। তাঁদের একটি ছোট মেয়ে রয়েছে।”

এরপর আমরা ভাইরাল পোস্টের গল্পের আসল রহস্য খুঁজে বার করার চেষ্টা করি এবং জানার চেষ্টা করি কেরালার মালাপ্পুরাম জেলায় কখনও রানী সোয়াময়ী নামের কোনও জেলাশাসক ছিলেন কিনা। একই সঙ্গে এটিও দেখার চেষ্টা করি যদি এই নামে কোনও জেলাশাসক থেকে থাকেন তাহলে তাঁর সঙ্গে ভাইরাল গল্পের কোনও সম্পর্ক আছে কিনা। সেই উদ্দেশ্যে আমরা মালাপ্পুরম জেলার তথ্য ও জনসংযোগ দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করি। দপ্তরের একজন কর্মী আমাদের জানান যে, "ভাইরাল পোস্টের দাবিটি সম্পূর্ণ ভুয়ো। রানী সোয়াময়ী নামের কেউ কখনও মালাপ্পুরম জেলার জেলাশাসক ছিলেন না।” 

Advertisement

পরবর্তিতে আমরা মালাপ্পুরম জেলার জেলাশাসকের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে জানতে পারি, ১৯৬৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত মোট ৬৭ জন মালাপ্পুরমের জেলাশাসকের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু সেই তালিকাতে রানী সোয়াময়ী নাম আমরা খুঁজে পাইনি। নীচে মালাপ্পুরম জেলার জেলাশাসকদের সম্পূর্ণ তালিকা দেওয়া হল। 

রানী সোয়াময়ী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমরা যখন একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করি তখন আমরা ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি ফেসবুকে মালায়ালাম লেখক হেকিম মোরায়ুরের একটি পোস্ট দেখতে পাই। মালায়ালাম ভাষায় তিনি সেখানে লিখেছেন, “রানী সোয়ামোই হল আমার লেখা “থ্রি গার্লস” গল্প সমগ্রের "শাইনিং ফেসেস" নামক গল্পের একটি কাল্পনিক চরিত্র মাত্র। যে চরিত্রকে অনেকই সত্যি ভেবে নিয়েছেন। আর এই গল্পটিকে নিয়ে মানুষ যেভাবে অপপ্রচার করছে তা সত্যিই দুঃখজনক।” 

এখানে উল্লেখ্য, হেকিম মোরায়ুর যে সময় ফেসবুকে এই পোস্ট করেন সেই সময় মালায়ালাম ভাষায় এই একই পোস্টের সঙ্গে লাপ্পুরম জেলার প্রাক্তন জেলাশাসক মিসেস এ. শাইনমলের ছবি যোগ করে ভাইরাল করা হয়েছিল। নীচে মালায়ালাম ভাষায় হেকিম মোরায়ুরের লেখা "শাইনিং ফেসেস" গল্পের একটি পৃষ্টার ছবি দেখা যাবে।

এর থেকে প্রমাণ হয়, মালায়ালাম লেখক হেকিম মোরায়ুরের লেখা "শাইনিং ফেসেস" গল্পের একটি কাল্পনিক চরিত্রের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর ভুয়ো সম্পর্ক তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা হচ্ছে।

Fact Check

Claim

অভ্র খনিতে কাজ করার সময় মৃত্যু হয় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর বাবা, মা, দুই ভাই ও বোনের। আর যেহেতু অভ্র দিয়ে মেকআপের সামগ্রী তৈরি হয়। তাই তিনি নিজের পরিবারের সদস্যদের পরিণতির কথা মনে করে মেকআপ করেন না।

Conclusion

ভাইরাল দাবিটির সঙ্গে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তথা বাস্তবের কোনও সম্পর্ক নেই। সেটি মালায়ালাম লেখক হেকিম মোরায়ুরের লেখা "শাইনিং ফেসেস" নামক কাল্পনিক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  1. কাক: অর্ধসত্য
  2. একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  3. অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Do you think a messenge is a fake ?
To know the truth, send that to our Number73 7000 7000 you can email on factcheck@intoday.com
Read more!
Advertisement
Advertisement