Advertisement

ফ্যাক্ট চেক: জাতীয় পতাকা নয়, পুরনো ‘সালাই টারেট’ পতাকা খুলেছিল মণিপুরে বিক্ষোভকারীরা

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, মণিপুরের একটি ভবন থেকে ভারতের জাতীয় পতাকা খুলে সেভেন-সিষ্টার্সের পতাকা লাগাচ্ছে বিক্ষোভকারী ছাত্ররা।

সুরাজউদ্দিন মণ্ডল
  • কলকাতা,
  • 10 Sep 2024,
  • अपडेटेड 3:21 PM IST

গত বছর থেকেই দুই জনগোষ্ঠীর বিবাদের জেরে অশান্ত উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য মণিপুর। তবে মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের পরিস্থিতিতে ফের একবার নতুন করে রাজ্যটি তপ্ত হয়ে উঠেছে সম্প্রতি কংপোকপি ও পশ্চিম ইম্ফলের দু’টি জায়গায় ড্রোন হামলাকে কেন্দ্র করে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর দু’টি হামলাই হয়েছিল মেইতেই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকায়। রাজ্য সরকার দাবি করেছে, কুকি জঙ্গিরাই ওই হামলা চালিয়েছে।

আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে মণিপুর সংক্রান্ত একটি ভিডিও। যেখানে দেখা যাচ্ছে কিছু পড়ুয়া একটি ভবনের উপরে লাগানো একটি পতাকা খুলে অন্য একটি পতাকা লাগাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, মণিপুরের ছাত্ররা ওই ভবন থেকে ভারতের জাতীয় পতাকা খুলে দিয়ে সেভেন সিষ্টার্স বা উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যের স্থানীয় পতাকা লাগিয়েছে।

আরও পড়ুন

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “ভারতের পতাকা নামিয়ে, সেভেন সিষ্টার্স এর পতাকা উত্তোলন করেছে স্বাধীনতাকামী মনিপুরের শিক্ষার্থীরা।” (ক্যাপশনের সব বানান অপরিবর্তিত।) একই দাবি-সহ আরও পোস্ট দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওতে ছাত্ররা ভারতের জাতীয় পতাকা নয়। বরং সাত রঙ বিশিষ্ট পুরনো একটি কাংলেইপাক বা সালাই টারেট পতাকা খুলে নতুন পতাকা লাগিয়েছে।

কীভাবে জানা গেল সত্য?

প্রথমত ভাইরাল দাবি ও ভিডিওর সত্যতা জানতে আমরা এই সংক্রান্ত একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করি। তখন আমরা গত ৯ সেপ্টেম্বর একটি ফেসবুক প্রোফাইলে এই একই ঘটনার অন্য একটি ভিডিও দেখতে পাই। ভিডিওটি শেয়ার করে তার ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “থৈবাল ডিস্ট্রিক্ট ডেপুটি কমিশনার অফিস।” এর থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় ভাইরাল ভিডিওটি মণিপুরের থৈবাল জেলার ডেপুটি কমিশনার অফিসের।

Advertisement

উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করার সময় আমরা দেখতে পাই, শুরুতেই একটি ছেলে কমিশনার অফিসে লাগানো ভাইরাল পতাকাটিকে নির্দেশ করে স্থানীয় ভাষায় কিছু একটা বলছে। এরপর ভিডিওর ৭ সেকেণ্ড থেকে আমরা পতাকাটিকে ভালোভাবে লক্ষ্য করতে পারি। তখন আমরা পতাকাটিতে স্পষ্টভাবে সবুজ, লাল ও হলুদ-সহ একাধিক রঙ দেখতে পাই। অন্যদিকে আমরা জানি, ভারতের জাতীয় পতকা নীল রঙের অশোকচক্র-সহ গেরুয়া, সাদা ও সবুজ এই মূলত চারটি রঙ দিয়ে তৈরি। সেখানে লাল বা হলুদ রঙ নেই। এর থেকে অনুমান করা যায় ভাইরাল ভাইরাল পতাকাটি ভারতের জাতীয় পতাকা নয়।

উক্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে পুনরায় কিওয়ার্ড সার্চ কারলে আমরা ইন্ডিয়া টুডে নর্থ ইস্টের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাই। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “বিক্ষোভকারী ছাত্ররা মণিপুরের থৈবাল জেলার ডেপুটি কমিশনার অফিস থেকে ভারতের জাতীয় পতাকা খুলে দিয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যে। বরং তারা সাত রঙ বিশিষ্ট পুরনো একটি সালাই টারেট পতাকা খুলে নতুন পতাকা লাগিয়েছে।”

ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে থৈবাল জেলার ডেপুটি কমিশনার অফিসের গেটে বেহাল অবস্থায় একটি সালাই টারেট পতাকা লাগানো ছিল। সেটি দেখার পর বিক্ষোভকারীদের মধ্যে এক ছাত্র অন্যদের উদ্দেশ্যে সেটি খুলে নতুন একটি পতাকা লাগানোর কথা বলে। তারপরেই দুজন পুরনো টারেট পতাকাটি খুলে সেখানে নতুন একটি পতাকা লাগিয়ে দেয়। এখানে উল্লেখ্য প্রতিবেদনটিতে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে যে ছাত্রকে পতাকা খোলার নির্দেশ প্রদান করতে দেখানো হয়েছে আমরা উপরে উল্লেখিত আগের ভিডিওতে তাকেই এই নির্দেশ প্রদান করতে দেখতে পেয়েছি।

এরপর আমরা গত ৯ সেপ্টেম্বর মণিপুর পুলিশের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডলে এই ভাইরাল ভিডিও সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেখতে পাই। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু মানুষ দাবি করছেন যে বিক্ষোভকারী ছাত্ররা থৈবাল জেলার ডেপুটি কমিশনার অফিস থেকে জাতীয় পতাকা খুলে দিয়েছে। এই দাবিটি সম্পূর্ণ ভুয়ো। আসলে ছাত্ররা থৈবাল ডিসি অফিস বাইরের গেটে একটি পুরানো ও জীর্ণ সালাই টারেট (৭ রঙের পতাকা) খুলে নতুন একটি পতাকা প্রতিস্থাপন করে। পরবর্তীতে পুলিশ উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দিলে গেট থেকে পতাকা দুটিকে সরিয়ে ফেলা হয়।”

এরপর আমরা এবিষয়ে EastMojo-র কটি প্রতিবেদন খুঁজে দেখতে পাই। সেখানে থৈবাল জেলার ডেপুটি কমিশনার এ সুভাষ সিং জানিয়েছেন, ভাইরাল ভিডিওতে ছাত্রদের যে পতাকাটি খুলতে দেখা যাচ্ছে সেটি ভারতের ভারতের জাতীয় নয়। বরং সেটি সাত রঙ বিশিষ্ট সালাই টারেট পতাকা। এখানে উল্লেখ্য, সালাই টারেট পতাকা, যা কাংলেইপাকের পতাকা নামেও পরিচিত। এটি সাত রঙের একটি আয়তাকার পতাকা যেটি মণিপুরের মেইতেই জনজাতির সাতটি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে। 

এর থেকে প্রমাণ হয় যে মণিপুরের বিক্ষোভকারী ছাত্ররা থৈবাল জেলার ডিসি অফিস থেকে  ভারতের জাতীয় পতাকা নয় বরং পুরনো সালাই টারেট পতাকা খুলে নতুন পতাকা একটি লাগিয়েছে।

Fact Check

Claim

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে মণিপুরের একটি ভবন থেকে ভারতের জাতীয় পতাকা খুলে সেভেন-সিষ্টার্সের পতাকা লাগাচ্ছে বিক্ষোভকারী ছাত্ররা।

Conclusion

ভারতের জাতীয় পতাকা নয়। বিক্ষোভকারী ছাত্ররা পুরনো সালাই টারেট পতাকা খুলে নতুন পতাকা লাগিয়েছে।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  1. কাক: অর্ধসত্য
  2. একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  3. অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Do you think a messenge is a fake ?
To know the truth, send that to our Number73 7000 7000 you can email on factcheck@intoday.com
Read more!
Advertisement
Advertisement