গত শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে হেনস্থার শিকার হন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানোর সময় আহত হন মন্ত্রী। অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রীকে ঘিরে বিক্ষোভ প্রদর্শনের সময় এক ছাত্রের উপর দিয়ে গাড়ি চালানোর অভিযোগ উঠেছে ব্রাত্য বসুর বিরুদ্ধে ৷ আর এই ঘটনার প্রতিবাদে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর প্রথম দিন অর্থাৎ সোমবার রাজ্যের বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি।
আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও। যেখানে একটি বিক্ষোভ মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করছে পুলিশ। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের যাতে কোনও অসুবিধে না হয়, তার জন্য শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বিরুদ্ধে এসএফআইয়ের বিক্ষোভে লাঠিচার্জ করছে কলকাতা পুলিশ। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “টসে জিতে কলকাতা পুলিশ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় শান্তি বজায় রাখতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জয় বাংলা।” (সব বানান অপরিবর্তিত)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিও-র সঙ্গে সোমবার ব্রাত্য বসুর বিরুদ্ধে এসএফআইয়ের ডাকা ধর্মঘটের কোনও সম্পর্কনেই নেই। বরং সেটিতে ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট আরজি কর হাসপাতালে ট্রেনি চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজের ডাকা নবান্ন অভিযানের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
ভাইরাল ভিডিওটি ভালো করে লক্ষ্য করলে আমরা সেটিতে এবিপি আনন্দের একটি লোগে দেখতে পাই। সেই সূত্র ধরে এই সংক্রান্ত একাধিক কিওয়ার্ড ও ভিডিওটি থেকে একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে সেগুলির রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট এবিপি আনন্দের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে “Nabanna Abhijan : Nabanna Abhijan-এ খণ্ডযুদ্ধ। উড়ে এল ইট, পাল্টা জলকামান” শীর্ষক একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
৫:২৫:৪৪ ঘন্টার সেই প্রতিবেদনের ২:২৫:৩৫ ঘন্টা থেকে ২:২৫:৪৭ ঘন্টা পর্যন্ত ক্লিপের সঙ্গে আমরা ভাইরাল ভিডিও-র হুবহু মিল খুঁজে পাই। প্রতিবেদনের প্রদত্ত তথ্য থেকে জানা যায়, আরজি কর হাসপাতালে ট্রেনি চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজের তরফে নবান্ন অভিযান কর্মসূচির আয়োজন করা। কলকাতার সাঁতরাগাছিতে ব্যারিকেডের মাধ্যমে পুলিশ সেই মিছিল আটকানোর চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে। তখন বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
এরপর এই সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চে ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট আয়োজিত এই নবান্ন অভিযান সংক্রান্ত একাধিক প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই সব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজের ডাকে আয়োজিত এই নবান্ন অভিযানের মিছিলকে আটকাতে ২৫ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট পদমর্যাদার আধিকারিকের নেতৃত্বে হাওড়া ব্রিজে কলকাতার দিকের অংশ-সহ ৫ জায়গায় অ্যালুমিনিয়ামের গার্ডওয়াল তৈরি করে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের তরফে এই সব গার্ডওয়াল বা ব্যারিকেড ভেঙে ফেলার অভিযোগ সামনে এসেছিল। সেই সময় এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মোট ২২০ জনকে গ্রেফতার এবং বহু সংখ্যক বিক্ষোভকারীকে আটক করে পুলিশ।
এর থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে যাদবপুর কাণ্ডের প্রতিবাদে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলির তরফে ডাকা বিক্ষোভের জেরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনা সামনে এলেও তার সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওর কোনও রকম সম্পর্ক নেই।
ভিডিওটিতে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের যাতে কোনও অসুবিধে না হয়, তার জন্য শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বিরুদ্ধে SFI-র ডাকা বিক্ষোভে কলকাতা পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে দেখা যাচ্ছে।
ভাইরাল ভিডিও-র সঙ্গে ব্রাত্য বসুর বিরুদ্ধে SFI-র ডাকা বিক্ষোভের কোনও সম্পর্কনেই নেই। বরং সেটিতে ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট আরজি কর কান্ডের প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজের ডাকা নবান্ন অভিযানের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।