সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে পাহাড়ের উপর থেকে কিছু মানুষকে একটি গাড়ির কনভয় লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে গুলি চালানোর আওয়াজও শোনা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্প্রতি যুদ্ধ বিরতির পর সিআরপিএফ এবং সিআইএসএফ জওয়ানরা জম্মু-কাশ্মীর থেকে ফেরার সময় তাদের কনভয় লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে স্থানীয়রা।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “ভিডিওটি জম্মু-কাশ্মীরের। পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বিরতির পর সি আর পি এফ, সি আই এস এফ কোম্পানি ফিরে আসছিল তখন কিছু জিহাদি পাহাড় থেকে তাদের উপর পাথর নিক্ষেপ করছিল। যার জবাবে নিরাপত্তা বাহিনী বাতাসে গুলি ছোঁড়ে। পালাতে গিয়ে ৯ জন জিহাদির পাহাড় থেকে পড়ে মৃত্যু হয়।” (সব বানান অপরিবর্তিত)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি জম্মু-কাশ্মীরের নয়। এমনকি এর সঙ্গে ভারতীয় জওয়ানদের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং এতে ২০২৪ সালের মে মাসে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজাফফারাবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সামলাতে আসা পাকিস্তান রেঞ্জার্সের কনভয় লক্ষ্য করে স্থানীয়দের পাথর ছোড়ার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল দাবি ও ভিডিওটির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৪ সালের ১৬ মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রেডিটে এই একই ভিডিওর একটি বর্ধিত সংস্করণ পাওয়া যায়। ‘r/pakistan’ নামক রেডিটের একটি ভেরিফায়েড কমিউনিটিতে ভিডিওটি শেয়ার করে লেখা হয়েছে, “কাশ্মীরিরা কেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গাড়িতে পাথর ছুঁড়ছে?” তবে কমেন্ট সেকশনে অনেকে কনভয়টিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নয় বরং পাকিস্তান রেঞ্জার্সের বলে উল্লেখ করেছেন। তবে রেডিটের এই পোস্ট থকে এটি নিশ্চিত হওয়া যায় যে ভিডিওটি সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ আবহে বা তার পরবর্তী সময়ের নয়।
এরপর এই সংক্রান্ত পরবর্তী ২০২৪ সালের ১৫ মে ‘Indian Military Updates-IMU’ নামক একটি ফেসবুক পেজেও এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটি শেয়ার করে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “পাক অধিকৃত কাশ্মীরে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর কনভয় লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়ে মারছে কাশ্মীরিরা।” আরও অনুসন্ধান চালালে ২০২৪ সালের ১৩ মে একটি ফেসবুক পেজে ভাইরাল ভিডিওটির সব থেকে পুরনো সংস্করণ পাওয়া যায়। ভিডিওটি শেয়ার করে সেখানে উর্দুতে লেখা হয়েছে, “কাশ্মীরে স্বাগতম। কাশ্মীরে রেঞ্জার্সকে স্বাগত জানালেন মুজাফফরাবাদের মানুষ। #মুজাফফারাবাদ_আজাদ_কাশ্মীর”
এরপর উক্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে ২০২৪ সালের মে মাসে একাধিক আন্তর্জাতিক তথা পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এইসব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিদ্যুৎ এবং আটার দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে জম্মু-কাশ্মীর জয়েন্ট আওয়ামী অ্যাকশন কমিটি নামক একটি সংগঠনের তরফে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজাফফারাবাদে একটি বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। এই বিক্ষোভ এক পর্যায়ে হিংসার রূপ নিলে এর ফলে ৪ জনের মৃত্যু হয় ও ১০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়।
বিক্ষোভ সামলাতে ১৩ মে পাকিস্তান রেঞ্জার্সের কনভয় মুজাফফরাবাদে প্রবেশের চেষ্টা করলে উত্তেজিত জনতা তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং কনভয় লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে। পরবর্তীতে আন্দোলনকারীদের দাবি পূরণের জন্য সরকার ২৩ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি অনুদানের ঘোষণা করলে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আসে। এখানে উল্লেখ্য, সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরে ভারতীয় জওয়ানদের কনভয় লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া সংক্রান্ত কোনও তথ্য বা প্রতিবেদন আমরা আমাদের অনুসন্ধানে খুঁজে পাইনি।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের পুরনো ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরে ভারতীয় জওয়ানদের কনভয় লক্ষ্য করে পাথর ছুড়েছে স্থানীয়রা।
ভিডিওটিতে সম্প্রতি পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বিরতি পরবর্তী সময়ে জম্মু-কাশ্মীরে ভারতীয় জওয়ানদের কনভয় লক্ষ্য করে স্থানীয়দের পাথর ছোড়ার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটি জম্মু-কাশ্মীরের নয় এবং এর সঙ্গে ভারতীয় জওয়ানদের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং এতে ২০২৪ সালের মে মাসে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজাফফারাবাদে পাকিস্তান রেঞ্জার্সের কনভয় লক্ষ্য করে স্থানীয়দের পাথর ছোড়ার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।