অসুস্থ শিশুদের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়ে সাহায্য চাওয়ার বিষয়টি নতুন নয়। অনেক সময়েই বিভিন্ন ঘটনার সাপেক্ষে ফেসবুকে নানা ভাবে সাহায্য চাওয়া হয়ে থাকে। এ বার এক অসুস্থ শিশুর সঙ্গে তার পরিবারের অসহায়তার কথা ভাইরাল হল ফেসবুকে।
AZNewsbd24.com নামের একটি পেজ থেকে একটি শিশুর দুটি ছবি ও একটি কাঁদতে থাকা মহিলার ছবি পোস্ট করে দাবি করা হয়েছে, শিশুটির শরীর ৬০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে এবং সে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ হাসপাতালে ভর্তি।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া সেই পোস্টে লেখা হয়েছে, "বাচ্চাটির শরীরের প্রায় ৬০% পুড়ে গেছে, সার্জারি করতে দুই লক্ষ্য বিশ হাজার টাকার মতো লাগতে পারে বলে ডাক্তার জানিয়েছে। এই বাচ্চাটির পরিবার সবার কাছে দোয়া প্রাথী সবাই দোয়া করবেন আর সবাই ১০, ২০, ৫০, ১০০, ৫০০ যাই পারি না কেনো দান করার চেষ্টা করবেন। দরিদ্র বাবার পক্ষে বাচ্চাটিকে চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সবাই একটু সাহায্য সহযোগিতা করি। হতে পারে আপনার একটু সাহায্য বাচ্চাটিকে সুস্থ করতে পারে।"
ইন্ডিয়া-টুডের অ্যান্টি-ফেক নিউজ ওয়ার রুম (আফয়া) তদন্ত করে দেখেছে, এই দাবিটি বিভ্রান্তিকর। প্রথমত, অসুস্থ ওই শিশুটির ছবি ২০২০ সালের প্রথম থেকেই ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে রয়েছে। দ্বিতীয়ত, যে কাঁদতে থাকা যে মহিলাকে এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, তার সঙ্গে এই ঘটনার কোনও যোগাযোগ নেই।
আফয়া তদন্ত
ভাইরাল ছবিগুলির অনুসন্ধানে নেমে প্রথমেই আমরা ব্যান্ডেজে মুড়ে থাকা শিশুটির ছবি রিভার্স সার্চ করি। তখন আমাদের সামনে উঠে আসে যে এই একই ছবি আগেও অন্যান্য দাবি-সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয়েছিল।
২০২১ সালের মার্চে এক ব্যক্তি এই একই ছবি টুইট করে দাবি করেন যে কোনও এক বিমান হানায় এই শিশুটির মায়ের মৃত্যু হয়েছে।
রিভার্স সার্চের মাধ্যমে একই ছবি আমরা আফগানিস্তানের একটি উর্দু ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইটে দেখতে পাই। সেখানেই লেখা, ছবিটি আসলে ২০২১ সালের মার্চ মাসেরও নয়। বরং আরও আগের।
ওই ওয়েবসাইটেই প্রকাশ করা হয়, ছবিটি ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি এক নেপালি ফেসবুক ব্যবহারকারী পোস্ট করেছিলেন। সুতরাং ছবিটি যে সাম্প্রতিক সময়েরই নয়, এ কথা কার্যত পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে।
ভাইরাল দাবিতে কাঁদতে থাকা মহিলা কে?
শিশুটির পাশাপাশি আরও এক মহিলার ছবি ওই ফেসবুক পোস্টে ছিল। কার্যত বোঝাতে চাওয়া হয়েছিল ওই মহিলাটিই শিশুটির মা। যদিও শিশুটির পরিবার সম্পর্কে কোনও বিশদ তথ্য লেখা হয়নি। তাই আমাদের সন্দেহ কিছুটা গভীর হয়।
ছবিটি রিভার্স সার্চ করে আমরা দেখি, এই ছবিটি আসলে এক রোহিঙ্গা মহিলার। ২০১৬ সালে আউটলুকের একটি প্রতিবেদনে এই মহিলার ছবিটি প্রকাশ করা হয়েছিল। এপি সংস্থার হয়ে বাংলাদেশে এই ছবিটি তুলেছিলেন সৌরভ দাস নামের এক চিত্র গ্রাহক। তাঁর স্বামীকে মিয়ানমারে খুন করা হয় বলে অভিযোগ।
সুতরাং, ভাইরাল শিশুটির ছবি যে পুরনো, এবং ছবিতে কাঁদতে থাকা মহিলাটি যে আদতে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা, তা কার্যত পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে ময়মনসিং মেডিক্যাল কলেজের বক্তব্য জানতে চেয়ে আমরা ই-মেলও করেছি। সেই উত্তর এলে প্রতিবেদনটি আপডেট করে দেওয়া হবে।
শিশুটির শরীর ৬০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে, সে ময়মনসিংহ হাসপাতালে ভর্তি। দরিদ্র পরিবারের শিশুটিকে বাঁচাতে অর্থ সাহায্য করুন।
অসুস্থ শিশুটির ছবি ২০২০ সাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। এর আগেও অন্য দাবি-সহ এই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যদিকে, কাঁদতে থাকা মহিলাটি ২০১৬ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। তাঁর স্বামীকে মিয়ানমানে খুন করা হয় বলে অভিযোগ।