সামনেই বিহারের বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে প্রচার শুরু করে দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও। যেখানে প্রকাশ্য রাজপথে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ভোটমুখী বিহারে বিজেপির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষরা। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “বিহারে আদিবাসী ভাইবোনেরা রাস্তায় নেমে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল।” (সব বানান অপরিবর্তিত)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি বিহারের নয় এবং এর সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই। বরং এটি চলতি বছরের ৩১ মার্চ ঝাড়খন্ডের রাঁচিতে জেএমএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ঝাড়খণ্ড সরকার ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের বিরুদ্ধে আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিক্ষোভের দৃশ্য।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
প্রথমত, ভাইরাল দাবিটি বিভ্রান্তিকর। কারণ ভিডিও-র ক্যাপশনে এই ঘটনাকে বিহারের বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু একই ভিডিওর ফ্রেমের উপর এটিকে ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচির বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ভিডিও-র এক পর্যায়ে আমরা লক্ষ্য করি এক মহিলা বলছেন, “হেমন্ত সরকার ঘুমিয়ে আছেন।” যা থেকে সন্দেহ তৈরি হয় যে ভিডিওটি বিহারের না হয়ে ঝাড়খণ্ডের হতে পারে।
পাশাপাশি ভাইরাল ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করার সময় আমরা ‘Smp News Jharkhand’ নামক একটি সংবাদমাধ্যমের লোগো ও মাইক্রোফেন দেখতে পাই। সেই সূত্র ধরে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ ‘Smp News Jharkhand’এর অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক পেজে ভাইরাল ভিডিওর মূল এবং বর্ধিত সংস্করণ-সহ একটি গ্রাউন্ড রিপোর্ট পাওয়া যায়। সেই ভিডিও প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করলে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে ভাইরাল ক্লিপটি এর প্রথম ৫৫ সেকেন্ড থেকে নেওয়া।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভিডিওটি ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ ঝাড়খণ্ডের রাজাধানী রাঁচির সিরোমতলি চকে জেএমএম (ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা) এবং কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ঝাড়খণ্ড সরকার এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরা। রাঁচির নবনির্মিত সিরোমতলি ফ্লাইওভারের একটি র্যাম্প ভেঙে ফেলার দাবিতে এই বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের অভিযোগ, তাদের পবিত্র ধর্মস্থান সারনা স্থলের প্রবেশের পথ আটকে তার সামনে এই সিরোমতলি ফ্লাইওভারটি তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন তাদের ধর্মস্থনের মর্যাদা নষ্ট হয়েছে অন্যদিকে তেমন পূণ্যার্থীদের ভিড় হলে সারনা স্থলে ঢুকতেও অসুবিধা হবে। ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ টাইমস অফ ইন্ডিয়াতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও এই একই তথ্য পাওয়া যায়।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, বিহারে বিজেপির বিরুদ্ধে আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ দাবিতে শেয়ার করা হচ্ছে রাঁচিতে জেএমএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ঝাড়খণ্ড সরকার ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ভিডিও।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ভোটমুখী বিহারে বিজেপির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষরা।
ভিডিওটি বিহারের নয় এবং এর সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই। বরং এটি রাঁচিতে জেএমএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ঝাড়খণ্ড সরকার ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের বিরুদ্ধে আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিক্ষোভের দৃশ্য।