ইদানীং বেশ কিছু সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী ফেসবুকে দাবি করছেন যে, ভারতীয় রেলে বা স্টেশনে নাকি এখন প্রস্রাব করতে হলেও ১২ শতাংশ জিএসটি দিতে হবে। তাঁদের দাবি, প্রস্রাবখানা ব্যবহার করার জন্য লাগবে ১০০ টাকা, সেই সঙ্গে ১২ শতাংশ জিএসটি মিলিয়ে মোট ১১২ টাকা দিতে হবে রেলওয়েকে।
উদাহরণস্বরূপ, এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "ভারতীয় রেলে হিসু করতে ১০০ টাকা সঙ্গে ১২% GST ১১২ টাকা। এবার মোল্লারা জব্দ হল! পাকিস্তান তো শেষ!"
একই ধরনের পোস্ট অসমীয়া ভাষাতেও বেশ ভাইরাল হয়েছে। এই পোস্টের অনুবাদ বাংলায় করলে দাঁড়ায়, ভারতীয় রেলের নতুন নিয়ম অনুযায়ী প্রস্রাব ঘর ব্যবহার বাবদ ১০০ টাকা ও তার সঙ্গে ১২ টাকা জিএসটি দিতে হবে।
ইন্ডিয়া টুডে অ্যান্টি ফেক নিউজ ওয়ার রুম (আফয়া) অনুসন্ধান করে দেখেছে যে এই তথ্যটি বিভ্রান্তিকর ভঙ্গিতে প্রচার করা হচ্ছে। ভারতীয় রেলে প্রস্রাব করার জন্য যে পে অ্যান্ড ইউজ টয়লেট রয়েছে, তার পরিষেবা মূল্যে কোনও পরিবর্তন হয়নি। কয়েকদিন আগে আগ্রা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে ঘটা একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে এই ভুয়ো দাবিটি ছড়িয়ে পড়েছে।
আফয়া তদন্ত
আমরা সবার প্রথম এই বিষয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করে খোঁজার চেষ্টা করি যে রেলের পক্ষ থেকে এমন কোনও নিয়ম করা হয়েছে কিনা। তখন আজতক-র একটি প্রতিবেদন আমাদের নজরে পড়ে। প্রতিবেদনের শিরোনামে লেখা ছিল যে, রেল স্টেশনে বাথরুম করতে যাওয়ার জন্য আইআরসিটিসি ১১২ টাকা নিয়েছে।
এরপর প্রতিবেদনের বিশদ বিবরণ থেকে আমরা জানতে পারি যে, দিনকয়েক আগে আগরা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে এক্সিকিউটিভ লাউঞ্জের বাথরুম ব্যবহার করায় দুই বিদেশি পর্যটকের কাছে থেকে ১১২ টাকা করে মোট ১২৪ টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু ভাইরাল পোস্টগুলিতে এই বিষয়টি ইচ্ছাকৃত চেপে যাওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বেশ কিছু বড় রেলওয়ে স্টেশনে বিগত কয়েক বছর ধরে এই লাউঞ্জের সুবিধা চালু হয়েছে যেখানে যাত্রীরা কিছু টাকার বিনিময়ে বিলাসবহুল ও আরামদায়কভাবে সময় কাটাতে পারেন। মূলত আইআরসিটিসি এই লাউঞ্জগুলির দায়িত্বে রয়েছে।
সাধারণত রেল স্টেশনের প্রস্রাব করতে "পে অ্যান্ড ইউজ টয়লেটে" ১ বা ২ থেকে ৫ টাকার মধ্যে ধার্য করা হয়। কিছু স্টেশনে আবার তা বিনামূল্যেও পাওয়া যায়। যেহেতু প্রস্রাব করার উপর জিএসটি লাগানো সংক্রান্ত কোনও খবর আমরা খুঁজে পাইনি, তাই আমরা রেলের সাম্প্রতিক কোনও বিজ্ঞপ্তি খুঁজে দেখার চেষ্টা করি। কিন্তু সেরকম কোনও বিজ্ঞপ্তি আমরা খুঁজে পাইনি।
এই বিষয়ে আরও সার্চ করে আমরা টাইমস নাও -এর একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই যেখানে এক আইআরসিটিসি কর্তাকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়, লাউঞ্জের পরিষেবা ব্যবহার করার জন্য ন্যূনতম একটি মূল্য দিতেই হয়। এই মূল্যের সঙ্গে যোগ করেই ওই জিএসটি নেওয়া হয়েছে। ওই ব্রিটিশ নাগরিকদের থেকে প্রস্রাব করার জন্য নয়, বরং লাউঞ্জের সুবিধা ব্যবহার করার জন্য কিছু ডিসকাউন্ট প্রদান করে এই টাকা নেওয়া হয়েছিল।
আইআরসিটিসি-র ওয়েবসাইট থেকে আমরা জানতে পারি, আগ্রা ক্যান্টনমেন্ট রেল স্টেশনে লাউঞ্জে প্রবেশের ন্যূনতম মূল্য মাথাপিছু ১৮০ টাকা। যা ২ ঘণ্টার জন্য বরাদ্দ। এই সময়ে কেউ বাথরুম ব্যবহার করলে কোনও অতিরিক্ত টাকা ধার্য করা হয় না। শুধু মাত্র কেউ যদি স্নান করে ফ্রেশ হতে চান, তবে ১৮০ টাকা নেওয়া হয় ও তার বদলে ডেন্টাল কিট এবং বাথ কিট সরবরাহ করা হয়।
এই প্রসঙ্গেই আরও জানিয়ে রাখা ভাল, গত জুন মাসেই জিএসটি কাউন্সিলের একটি বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে ১০০০ টাকা বা তার চেয়ে কম মূল্যের হোটেল, ক্লাব, গেস্ট হাউস, বা বাণিজ্যিক আশ্রয়স্থলে ১২ শতাংশ করে জিএসটি দিতে হবে। ফলত খুব স্বাভাবিকভাবেই, হসপিটালিটি ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় এই নতুন পরিকাঠামোর আওতায় রেলের নতুন লাউঞ্জ পরিষেবাও অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।
আরও বিশদে জানতে আমরা উত্তর-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে-পর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি বলেন, "স্টেশনে প্রস্রাবঘর কেউ ব্যবহার করলে ২ বা টাকার উপর কি জিএসটি নেওয়া আদৌ সম্ভব! সেই কাঠামোয় তো কোনও পরিবর্তন আসেনি। কেউ চাইলে সুলভ ব্যবহার করুক। তার খরচ হবে নামমাত্র। কিন্তু একজন যখন লাউঞ্জের বিলাসবহুল পরিষেবা চাইবেন। তখন তার ন্যূনতম মূল্য তো তাঁকে দিতেই হবে। এটাই স্বাভাবিক।"
সুতরাং, বোঝাই যাচ্ছে যে রেল স্টেশনে প্রস্রাব করার ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ জিএসটি লাগার বিষয়টি যে বিভ্রান্তিকর দাবির সঙ্গে প্রচার করা হচ্ছে।
..................................................................................................
claim made by-
claim date: 03.09.2022
claim link:
rating: mostly false
claim:
conclusion:
ভারতীয় রেল স্টেশনে এখন থেকে প্রস্রাব করার জন্য ১০০ টাকা-সহ ১২ শতাংশ জিএসটি মিলিয়ে ১১২ টাকা দিতে হবে।
রেলের শৌচালয় ব্যবহারের পরিষেবা মূল্য জায়গা ফেরে কোথাও বিনামূল্য, কোথাও ১ টাকা থেকে ৫ টাকা অবধিই আছে। দিনকয়েক আগে আগ্রা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে বিলাসবহুল লাউঞ্জের বাথরুম ব্যবহার করার জন্য ন্যূনতম পরিষেবা মূল্যের সঙ্গে ১২ শতাংশ জিএসটি ধার্য করা হয়েছিল।