Advertisement

ফ্যাক্ট চেক: 139-এ এই SMS পাঠালে 'বিপদ' থেকে উদ্ধার করবে রেল! ভুল তথ্য জানছেন না তো?

এই পোস্টে লেখা হয়েছে যে, একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাট অনুসরণ করে রেলওয়ে হেল্পলাইন নম্বর ১৩৯-এ এসএমএস পাঠালেই টিকিট পরীক্ষক এসে ওই সিট খালি করে করে দিয়ে চলে যাবে।  

ঋদ্ধীশ দত্ত
  • কলকাতা,
  • 10 Jul 2024,
  • अपडेटेड 5:02 PM IST

ট্রেনের রিজার্ভেশন কামরায় যাত্রা করতে গিয়ে দেখলেন আপনার নির্ধারিত বার্থে আগে এক অন্য যাত্রী বসে, বা শুয়ে। এ সময়ে আপনি কী করবেন? নিশ্চই ওই যাত্রীকে অনুরোধ করবেন সরে যেতে। কিন্তু তিনি যদি না শোনেন তখন? সম্প্রতি এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে কী করতে হবে সেই সংক্রান্ত একটি পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে।

এই পোস্টে লেখা হয়েছে যে, একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাট অনুসরণ করে রেলওয়ে হেল্পলাইন নম্বর ১৩৯-এ এসএমএস পাঠালেই টিকিট পরীক্ষক এসে ওই সিট খালি করে করে দিয়ে চলে যাবে।  

এই পোস্টে রিজার্ভেশন কামরার ভিতরের একটি ছবি দিয়ে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "নিজের রিজার্ভ করা সিট (Rail Reservation Seat) খালি করার জন্য আর কোন ঝামেলায় জড়াতে হবে না যাত্রীকে। শুধুমাত্র ১ টি মেসেজ করলেই যথেষ্ট। স্বয়ং টিটিই এসে খালি করে দিয়ে যাবে সেই সিট। মেসেজ করতে হবে ১৩৯ নম্বরে। মেসেজে ক্যাপিটাল অক্ষরে লিখতে হবে সিট, তারপর স্পেস দিয়ে দিয়ে লিখতে হবে পিএনআর নম্বর, সিট নম্বর ও কোচ নম্বর। আবারো ক্যাপিটাল অক্ষরে লিখতে হবে অকুপাইড বাই আননোন পেসেঞ্জার আর নির্দিষ্ট নম্বরে পাঠিয়ে দিতে হবে এসএমএস। ব্যাস এটুকুই যথেষ্ট মুহূর্তের মধ্যে খালি করে দেওয়া হবে আপনার সিট।"

আরও পড়ুন

অর্থাৎ এই পোস্ট অনুযায়ী, কেউ যদি SEATPNRSeat NumberCoach Number-এর পর OCCUPIED BY UNKNOWN PASSENGER লিখে ১৩৯ নম্বরে এসএমএস পাঠায়, তবে টিকিট পরীক্ষক দ্রুত পদক্ষেপ করবেন।

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে এই পোস্টের বক্তব্য অর্ধসত্য এবং বিভ্রান্তিকর। এই ফরম্যাটে এসএমএস-এ এমন কোনও সুবিধা ১৩৯ হেল্পলাইনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় না।

কীভাবে জানা গেল সত্যি

যদি রেলের পক্ষ থেকে সত্যিই এই ধরনের কোনও সুবিধা চালু করা হয়ে থাকত, তবে নিশ্চিতভাবে এই সম্পর্কে কোনও না কোনও তথ্য সংবাদ মাধ্যমেও প্রকাশ পেত। কিন্তু এমন কোনও তথ্য আমরা কোনও সংবাদ মাধ্যমে খুঁজে পাইনি। এরপর কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আমরা খোঁজা শুরু করি যে ১৩৯-এ কী কী পরিষেবা পাওয়া যায়।

Advertisement

এই বিষয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করে ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল দ্য কুইন্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আমরা খুঁজে পাই। সেখানে লেখা হয় যে ১৩৯ নম্বরে টিকিটের বর্তমান স্টেটাস, কোনও ট্রেন যাওয়া-আসার তথ্য়, সিট আছে কিনা সেই তথ্য, ভাড়া কত, টাইম টেবল, ট্রেনের অবস্থান, ট্রেনের নাম/নম্বর ইত্যাদি জানা যায়।

এই বিষয়ে পরিপক্ক তথ্য পেতে এরপর আমরা সরকারি ওয়েবসাইট খতিয়ে দেখা শুরু করি। সবার প্রথম IRCTC, এরপর ইন্ডিয়ান রেল ও শেষে পিআইবি-র ওয়েবসাইটে ১৩৯-এর পরিষেবা সম্পর্কে বিশদ তথ্য রয়েছে। নীচে IRCTC-র ওয়েবসাইটে থাকা ১৩৯-এর পরিষেবাগুলির স্ক্রিনশট তুলে দেওয়া হল। এখানে কোথাও অনধিকৃত যাত্রীকে সিট থেকে সরানোর কোনও নিয়ম, পদ্ধতি বা সুবিধার কথা লেখা নেই।

এরপর চলে আসা যাক রেল মন্ত্রকের সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্যে। এখানে ঠিক কী কী ফরম্যাটে কী মেসেজ পাঠালে কোন সুবিধা পাওয়া যাবে, তার একটি তালিকা দেওয়া রয়েছে। এই তালিকা অনুযায়ী, উপরিউক্ত নানা সুবিধা ছাড়াও এই নম্বরে এসএমএস করলে ট্রেনে খাবারের সুবিধা পাওয়া যাবে। এ ছাড়াও আরও বিভিন্ন নম্বরে যা যা পরিষেবা পাওয়া যায় তার তালিকা এখানে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এসএমএস-র মাধ্যমে যে সুবিধা পাওয়ার কথা ওই পোস্টে লেখা হয়েছে, তার উল্লেখ কোথাও পাওয়া যায়নি।

সব শেষে পিআইবি-র ওয়েবসাইটে গিয়েও আমরা খতিয়ে দেখি। সেখানেও ১৩৯ নম্বরে এমন কোনও পরিষেবার কথা কথা উল্লেখ করা হয়নি।

পোস্টে বলা ফরম্যাট অনুযায়ী এসএমএস পাঠালে আদৌ রেলের পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপ করা হয় কিনা সেই বিষয়টি পরীক্ষা করতে আমরা চলমান এক যাত্রীর তথ্য-সহ এমনই একই এসএমএস ১৩৯ নম্বরে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তখন পাল্টা আরেকটি এসএমএস পাঠিয়ে বলা হয় সেখানে যে ফরম্যাটগুলি দেওয়া রয়েছে, সেগুলো অনুসরণ করে এসএমএস পাঠাতে। অর্থাৎ, ফেসবুক পোস্টে যে ফরম্যাটে এসএমএস পাঠাতে বলা হচ্ছে, তা বৈধ নয়।

এমন সমস্যায় যাত্রীরা কী করবেন?

এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম দক্ষিণ পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক আদিত্য কুমার চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি আমাদের জানান, এমন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সবার প্রথম অপর যাত্রীকে অনুরোধ করা উচিত। তিনি না শুনতে আরপিএফ, বা টিটিই-র সঙ্গে যোগাযোগ করাই বাঞ্ছনীয়।

কিন্তু কোনও কারণে যদি টিটিই বা আরপিএফ উপস্থিত না থাকেন, তখন কোনও যাত্রী railmadad.indianrailways.gov.in-এই ওয়েবসাইটে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। এ বাদে ১৩৯-এ ফোন করে অভিযোগ জানানো যেতে পারে, বা MADAD-এর পর স্পেস দিয়ে নিজের অভিযোগ লিখে তা ১৩৯-এ মেসেজ আকারে পাঠাতে পারেন। এই বিষয়ে জ়ি নিউজে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পড়া যেতে পারে। 

ফলে বোঝাই যাচ্ছে, ১৩৯ হেল্পলাইন নম্বর নিয়ে তথ্যটি ছড়ানো হয়েছে তা সঠিক নয় এবং এর ফলে মানুষ বিভ্রান্ত হতে পারেন।

 

Fact Check

Claim

ট্রেনে নিজের রিজার্ভ করা সিটে কোনও যাত্রী থাকলে তাকে সরানোর জন্য মেসেজে ক্যাপিটাল অক্ষরে লিখতে হবে সিট, তারপর স্পেস দিয়ে দিয়ে লিখতে হবে পিএনআর নম্বর, সিট নম্বর ও কোচ নম্বর। আবারো ক্যাপিটাল অক্ষরে লিখতে হবে অকুপাইড বাই আননোন পেসেঞ্জার আর ১৩৯ নম্বরে পাঠিয়ে দিতে হবে। তাহলেই টিটিই এসে ওই যাত্রীকে তুলে দেবেন।

Conclusion

১৩৯ নম্বরে নানা ধরনের সুবিধা পাওয়া গেলেও এমন কোনও সুবিধা দেওয়া হয় না। এই ফরমাটটিও কার্যকর নয়।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  1. কাক: অর্ধসত্য
  2. একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  3. অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Do you think a messenge is a fake ?
To know the truth, send that to our Number73 7000 7000 you can email on factcheck@intoday.com
Read more!
Advertisement
Advertisement