ভারতীয় তারিখ গত ২২ জুন ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর দাবি করে আমেরিকা। যদিও পাল্টা ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তেমন হয়নি। এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বিরাট বিস্ফোরণের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।
অনেকেই ভিডিওটি পোস্ট করে এই বিস্ফোরণের দৃশ্যকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় আমেরিকার হামলা চালানোর দৃশ্য বলে দাবি করছেন। ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “#টমাহক USA attack in Iran, ,,ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় আজ আমেরিকার বো'মা হামলার ভিডিও ফুটেজ। অবশেষে আ'মেরিকা ইরান ও ই'জরাইল যুদ্ধে পুরাপুরি অংশে নিলো, পৃথিবী আরেকটি র'ক্তক্ষয়ী যুদ্ধ দেখতে যাচ্ছে।হয়তো এটি ৩য় বিশ্বযু'দ্ধ বা বড় মালহামার আলামত, এর মাধ্যমেই শুরু হতে পারে মালহামা যা আমরা হাদিসে পড়েছি।"
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে ইরানে আমেরিকার হামলা বা ইরান-ইজরায়েল সংঘর্ষের কোনও সম্পর্ক নেই। ভিডিওটি আমেরিকার এবং একটি পৃথক ঘটনার।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে তা খোঁজা হলে ওই একই ছবি দেখতে পাওয়া যায় গত ২০ জুন প্রকাশিত একটি নিউজ রিপোর্টে। এর থেকে বোঝা যায় দৃশ্যটি কোনও ভাবেই ইরানে হওয়া আমেরিকার হামলার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
রিপোর্টে লেখা হয়, এই দৃশ্যটি ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্সের স্টারশিপ অর্থাৎ একটি মহাকাশযান বিস্ফোণের। এই বিস্ফোরণটি গত ১৮ জুন আমেরিকার টেক্সাসে স্টারবেস নামক উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে। স্টারশিপ যখন মহাকাশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখনই এই অঘটন ঘটে।
এই বিষয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করা হলে ভিডিওটির বর্ধিত অংশ নাসা স্পেস ফ্লাইট ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ভ্যারিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলে দেখতে পাওয়া যায় যা ভারতীয় তারিখ ১৯ জুন প্রকাশ করা হয়েছিল। এখানে রাতের অন্ধকারেও পরিষ্কারভাবে লঞ্চপ্যাডে থাকা রকেট ও মহাকাশযানটিকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। সেই সঙ্গে লঞ্চপ্যাডের আশেপাশে থাকা যন্ত্রও ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।
কেন ও কীভাবে বিস্ফোরণ?
ফক্স নিউজ-সহ একাধিক স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে বলা হয়, আমেরিকার স্থানীয় সময় রাত ১১টা নাগাদ টেক্সাসের স্টারবেসে স্পেসএক্সের স্টারশিপের প্রস্তুতি সংক্রান্ত একটি স্ট্যাটিক ফায়ার টেস্ট চলাকালীন এই বিস্ফোরণটি ঘটে। সেই সময় স্টারশিপটি উৎক্ষেপণ স্ট্যান্ডেই লাগানো ছিল এবং এই বিস্ফোরণের জেরে স্টারশিপ ও স্ট্যান্ড ধ্বংস হয়ে যায়।
প্রাথমিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, স্টারশিপের নোজ কন অংশে থাকা একটি COPV (Composite Overwrapped Pressure Vessel) — একটি নাইট্রোজেন গ্যাস ধারণকারী ট্যাঙ্ক — তার “proof pressure” (নিরাপদ চাপ) ছাড়িয়ে যেতে ব্যর্থ হয়। তবে এপি নিউজের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। এই বিষয়ে স্পেসএক্সের এক্স হ্যান্ডেল থেকেও একটি পোস্ট করে জানানো হয় যে সকলে সুরক্ষিত আছেন।
রয়টার্সের রিপোর্ট অনুযায়ী, স্টারশিপে হওয়া এই বিস্ফোরণ ইলন মাস্কের মঙ্গল-মিশনে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা যেতে পারে।
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে অসম্পর্কিত একটি বিস্ফোরণের ভিডিওকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় আমেরিকার হামলার দৃশ্য দাবিতে শেয়ার করা হচ্ছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে আমেরিকা কীভাবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছিল তার দৃশ্য।
ভিডিওটি আমেরিকার টেক্সাসের। স্থানীয় সময় ১৮ জুন রাতে স্পেসএক্সের স্টারশিপের উড়ানের প্রস্তুতি চলাকালীন এই দুর্ঘটনা ঘটে।