হিজবুল্লাহ বাহিনীর প্রধান নাসেরুল্লার মৃত্যুর 'বদলা' নিতে মঙ্গলবার ইজরায়েলে নাগাড়ে মিসাইল হানা চালিয়েছে ইরান। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ইজরায়েলের সব থেকে বড় শহর তেল আভিভের একাধিক এলাকা। এই আবহে একটি ভিডিও সোশ্যাল বেশ ভাইরাল হতে শুরু করেছে।
এই ভিডিওটি কোনও একটি বাস স্টেশনের। যেখানে সারি-সারি বাসকে আগুনে দাউদাউ করে জ্বলতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে একে তেল আভিভের ঘটনা বলে দাবি করা হয়েছে। যেখানে নাকি ইরানের মিসাইল হানায় এই ধ্বংস চলছে বলে জানানো হয়েছে।
ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "ব্রেকিং: ইসরাইলি বাহিনী (IOF) স্বীকার করেছে যে ইয়েমেন থেকে আসা একটি আত্মঘাতী ড্রোন "তেল আবিব" এর দক্ষিণে "বাত ইয়াম" এলাকায় আঘাত হেনেছে! দখলদার রাষ্ট্রটি এখন জ্বলছে।"
রিপাবলিক বাংলাও একই ভিডিও নিজেদের ফেসবুক পেজে শেয়ার করে লিখেছে, "ইজরায়েলের রাজধানীতে ড্রোন হামলা। তেল আভিভে জ্বলছে আগুন। কামিকাজে ড্রোন দিয়ে হামলা চালানো হয়।" (আর্কাইভ)
আজতক ফ্য়াক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল ভিডিওটি দু'বছরের বেশি আগেকার। এবং এর সঙ্গে ইরানের হামলার কোনও সম্পর্ক নেই।
কীভাবে জানা গেল সত্যি
ভাইরাল ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট সংগ্রহ করে তার রিভার্স ইমেজ সার্চ করতে আমরা ওই একই ভিডিও দেখতে পাই একটি সিএনএন তুরস্কের রিপোর্টে। রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়েছিল ২০২২ সালের ১১ জুন। সেখানেও এই একই ভিডিও দেখতে পাওয়া যাবে। এর থেকেই কার্যত পরিষ্কার হয়ে যায় যে এই ভিডিওটির সঙ্গে ইজরায়েলে হওয়ার ইরানের সাম্প্রতিক হামলার কোনও সম্পর্ক নেই।
সিএনএন তুরস্কের এই রিপোর্টে লেখা হয় যে ইজরায়েলের সাফেদ নামক বাস স্টেশনে মধ্যরাতে একসঙ্গে ১৮টি বাসে আগুন লেগে যায়। আগুন লাগার সময় ও পদ্ধতিও বেশ সন্দেহজনক বলে জানানো হয় সেই রিপোর্টে। রিপোর্টে আরও লেখা হয়, আগুনের পরিমাণ এত মারাত্মক ছিল যে বিস্ফোরণও ঘটে। এই ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও ঘটনার পিছনে নাশকতার গন্ধ পান তদন্তকারীরা।
লেবাননের আল মায়াদিন নামক সংবাদ মাধ্যমের ভ্যারিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলেও এই ভিডিও দেখা যাবে। ২০২২ সালের ১১ জুন আপলোড হওয়া ভিডিওতে লেখা হয় যে আগুন লাগার সঠিক কারণ প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি।
আলাহিদ নিউজ নামের আরেকটি লেবাননের সংবাদ মাধ্যমে এই নিয়ে একটি খবরও প্রকাশ পেয়েছিল। সেই খবর অনুয়ায়ী, যে বাসগুলিতে আগুন লেগেছিল সেগুলি 'নেতিভি এক্সপ্রেস' নামক একটি আরবি সংস্থার। স্থানীয় সাফেদ পুরসভা অবশ্য দাবি করেছিল যে নাশকতার উদ্দেশেই এই বাসগুলিতে আগুন লাগানো হয়েছে। পরে সেই সুরে সুর মেলায় পুলিশও। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই আগুনকে ইচ্ছাকৃত লাগানো বলেই জানানো হয়।
ফলে বুঝতে বাকি না, বাসে আগুন লাগার দু'বছরের বেশি পুরনো একটি ভিডিও শেয়ার করে তা বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইজরায়েলে ইরানের হামলার সঙ্গে যুক্ত করে বিভ্রান্তিকর দাবিতে শেয়ার করা হচ্ছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ইরানের মিসাইল হানায় তেল আভিভের বাস স্টেশনে বিধ্বংসী আগুন।
এই ভিডিওটি ২০২২ সালের জুন মাসের। ইজরায়েলের সাফেদ এলাকায় একটি বাস স্টেশনে এই আগুন লেগেছিল। নাশকতার উদ্দেশে এই আগুন লাগানো হতে পারে বলে জানিয়েছিল পুলিশ।