
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে পতঞ্জলি এবং আমূল-সহ একাধিক কোম্পানির ভুয়ো ঘি তৈরির একটি কারখানায় পুলিশকে অভিযান চালাতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ভুয়ো কারখানা থেকে পতঞ্জলি কোম্পানির নামে নকল ঘি তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছে এক মুসলিম ব্যক্তি।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “এই আব্দুলরা "#পতঞ্জলি" কোম্পানির নকল ঘি তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছে... এভাবে তারা শুধু টাকাই কামাচ্ছে না, বরং স্বনামধন্য ব্র্যান্ড ও বাবা রামদেবকেও বদনাম করছে।” (সব বানান অপরিবর্তিত) এখানে আব্দুল নামটি মুসলিমদের বোঝাতে ব্যবহার করা হয়।
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওতে ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি আগ্রার তাজগঞ্জে পতঞ্জলি-সহ বিভিন্ন সংস্থার ভুয়ো সামগ্রী তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। তবে এই কারখানার মালিক এবং কর্মচারী কেউই মুসলিম ছিলেন না, বরং সকলেই ছিলেন হিন্দু।
সত্য উন্মোচন
ভাইরাল ভিডিও এবং দাবি সম্পর্কে জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম সংগ্রহ করে সেগুলি গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে দৈনিক ভাস্কর-সহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে এই একই ভিডিও-সহ বেশকিছু প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আগ্রায় নকল দেশি ঘি তৈরির একটি কারখানায় অভিযান চালায় পুলিশ। দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত এই কারখানায় পতঞ্জলি এবং আমূল-সহ মোট ১৮টি নামী সংস্থার স্টিকার লাগানো ঘি প্যাকেজ করা হতো। এরপর এই ঘি উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, হরিয়ানা, জম্মু ও কাশ্মীর এবং উত্তরাখণ্ডে সরবরাহ করা হতো।
এরপর এ বিষয়ে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে ভাইরাল ভিডিও-র স্ক্রিনশট-সহ ইটিভি ভারত, জাগরণ এবং অমর উজালা-সহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই সব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি উত্তর প্রদেশের আগ্রার তাজগঞ্জের মারুতি সিটি রোডে নকল ঘি-সহ বিভিন্ন ভেজাল সামগ্রী তৈরির একটি কারখানায় অভিযান চালায় পুলিশ। আগ্রা সিটি পুলিশের ডিসিপি সুরজ কুমার রাইয়ের নেতৃত্বে চালানো হয় এই অভিযান। এই কারখানয় পতঞ্জলি ও আমূল-সহ মোট ১৮ নামী ব্রান্ডের স্টিকার ব্যবহার করে ইউরিয়া এবং রাসায়নিক ব্যবহার করে ঘি-সহ বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করা হতো বলে অভিযোগ।
আভিযানে পুলিশ করখানায় কর্মরত মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করে এবং সব মাল বাজেয়াপ্ত করে। ধৃতরা হলেন কারখানর ম্যানেজার রাজেশ ভরদ্বাজ, টেকনিশিয়ান শিব চরণ, ভাস্কর গৌতম, রবি মাঞ্জি এবং ধর্মেন্দ্র সিং। ম্যানেজার রাজেশ ভরদ্বাজ-সহ বাকি ধৃতরা পুলিশের জেরাই স্বীকার করেন যে কারখানাটির মালিক তিনজন এবং তারা হলেন পঙ্কজ আগরওয়াল, নীরজ আগরওয়াল এবং ব্রিজেশ আগরওয়াল। তারা সকলেই মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রের পুরাতন হাইকোর্টের ময়না ওয়ালি গলির বাসিন্দা। তাদের মধ্যপ্রদেশেও একটি ঘি তৈরির কারখানা রয়েছে।
পাশাপাশি, এরপর ভাইরাল ভিডিও এবং নকল ঘি তৈরির কারখানায় পুলিশি অভিযান সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে আমাদের তরফে আজতকের আগ্রার সাংবাদিক অরবিন্দ শর্মার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি আমাদের বিষয়টি সম্পর্কে একই তথ্য নিশ্চিত করে জানান যে, “ভাইরাল ভিডিও-র ভুয়ো কারখানার মালিক এবং কর্মচারী কেউই মুসলিম ছিলেন না, বরং সকলেই ছিলেন হিন্দু।”
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, পতঞ্জলির নামে নকল ঘি তৈরির কারখানাটি কোনও মুসলিম ব্যক্তির নয়, বরং এর তিনজন মালিকই হিন্দু।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ভুয়ো কারখানা থেকে পতঞ্জলি কোম্পানির নামে নকল ঘি তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছে এক মুসলিম ব্যক্তি।
ভাইরাল ভিডিওতে ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি আগ্রার তাজগঞ্জে পতঞ্জলি-সহ বিভিন্ন সংস্থার ভুয়ো সামগ্রী তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। তবে এই কারখানার মালিক এবং কর্মচারী কেউই মুসলিম ছিলেন না, বরং সকলেই ছিলেন হিন্দু।