Advertisement

ফ্যাক্ট চেক: দীপু দাসের শেষ ভিডিও দাবি করে ছড়াচ্ছে পুরনো এবং অসম্পর্কিত ঘটনার দৃশ্য

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে দীপু দাসের কোনও সম্পর্ক নেই। এই ভিডিওটি গত নভেম্বর মাস থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় রয়েছে এবং এই ভিডিওতে ঢাকা কলেজের এক ছাত্রকে দেখা যাচ্ছে।

ঋদ্ধীশ দত্ত
  • কলকাতা,
  • 23 Dec 2025,
  • अपडेटेड 4:45 PM IST

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে বাংলাদেশের ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় সম্প্রতি গণপিটুনি দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় দীপু চন্দ্র দাস নামের এক ব্যক্তিকে। এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হচ্ছে যেখানে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যদের কোনও এক যুবকের কলার ধরে টেনে নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে।

এই ভিডিওটি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে যে, এখানে ভালুকায় মৃত দীপু চন্দ্র দাসের শেষ অবস্থার ভিডিও দেখা যাচ্ছে যেখানে তিনি বারংবার পুলিশের কাছে আর্তি করে বলছিলেন যে তিনি নির্দোষ।

ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “দীপু চন্দ্র দাসের শেষ ভিডিও। তিনি জীবন ভিক্ষা চাইছেন। পুলিশের মুখের দিকে তাকান। সহানুভূতি বা করুণা কিছুই নেই। একজন নোবেল শান্তি পুরষ্কার বিজয়ী, যিনি ইসলামী রাষ্ট্র বাংলাদেশকে শাসন করেন, তিনি কেবল তার প্রকাশ্য গণপিটুনি এবং পুড়িয়ে মারার বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন।”

আরও পড়ুন

টাইমস অব ইন্ডিয়া, জি নিউজ ও রিপাবলিক ভারতের মতো বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যমেও এই ভিডিওটি দীপু দাসের অন্তিম মুহূর্তের দৃশ্য বলে পোস্ট করা হয়েছে।

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে দীপু দাসের কোনও সম্পর্ক নেই। এই ভিডিওটি গত নভেম্বর মাস থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় রয়েছে এবং এই ভিডিওতে ঢাকা কলেজের এক ছাত্রকে দেখা যাচ্ছে।

সত্য উদঘাটন

ভাইরাল ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে তার রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে ওই একই ভিডিও ভোরের কাগজ নামের একটি বাংলাদেশি ফেসবুক পেজে পাওয়া যায়। গত ১৮ নভেম্বর ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছিল, “কি হয়েছিলো ঢাকা কলেজের এই শিক্ষার্থীর সাথে?”

এর থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে ভিডিওটি দিপু দাসের মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়া সম্ভব নয়। কারণ একাধিক সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে, গত ১৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় দীপু দাসকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল এবং তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

৪৭ সেকেন্ডের আসল ভিডিওটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করলে আরও বেশ কিছু বিষয় উঠে আসে। ভিডিওটির ৯ সেকেন্ডের মাথায় পুলিশ হেফাজতে থাকা ব্যক্তিকে বাংলায় বলতে শোনা যায়, "ভাই, আমি ঢাকা কলেজের ভাই।"

প্রসঙ্গত, দীপু দাস ময়মনসিংহ শহরের স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকার পাইওনিয়ার নিট কম্পোজিট কারখানায় কর্মরত ছিলেন। বাংলাদেশ র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (RAB ) জানিয়েছে, দীপুর বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কারখানার ফ্লোর ম্যানেজার আলমগীর হোসেন দীপু দাসকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন এবং তারপর তাঁকে জনতার হাতে তুলে দেন।

আসল ভিডিও-র প্রায় ২৯ সেকেন্ড নাগাদ ওই যুবককে ফোনে কথা বলতে শোনা যায়। তিনি বলেন, "ভাই আমাকে মারছে ভাই। ডিসি মাঝে না আসলে আমাকে মেরে ফেলতো, উনি এসে আমাকে বাঁচিয়েছেন।"

ভোরের কাগজে প্রকাশিত আসল ভিডিওটি দেখলে পরিষ্কার হয় যে ভাইরাল ভিডিওটি বেশ কিছু অংশ কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে। যেমন, ৩২ সেকেন্ডের মাথায় এক পুলিশ আধিকারিক ওই যুবককে বলছেন, “তুমি আগে যাও, আগে যাও।” ঠিক তখনই অন্য একটি কণ্ঠস্বর ওই যুবকের কাছে জানতে চাইছে, “এই তুমি হলে যাবে না হাসপাতালে যাবে?” জবাবে সে বলছে, “হলে।” বাংলাদেশে সাধারণত ‘হল’ বলতে আবাসিক ছাত্রাবাস বা হস্টেল বোঝানো হয় যেখানে শিক্ষার্থীরা থাকে।

ভিডিওতে ওই যুবককে যে টিশার্ট পরে থাকতে দেখা যাচ্ছে তার বাঁ-দিকে ঢাকা কলেজের একটি লোগো, এবং ডানদিকে সেশন ২০২২-২৩ লেখাও দেখা যায়। সেই সঙ্গে টিশার্টে পিছনে মোমিন নামটিও লেখা রয়েছে।

এই বিষয়ে বিশদে জানার জন্য বাংলাদেশি ফ্যাক্ট চেকারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা জানান, ভিডিওতে যে পুলিশ আধিকারিককে দেখা যাচ্ছে তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (রমনা বিভাগ) ডেপুটি কমিশনার মাসুদ আলম। এখানেই উল্লেখ্য, দীপু চন্দ্র দাসকে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলায় গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল, যা ঢাকা শহর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

তাছাড়া, আসল ভিডিও-র শেষ অংশে আরেক যুবককে বাংলায় বলতে শোনা যায়, "আপনাদেরকে তো একটু দেখতে হবে ভাই, ক্যাম্পাস থেকে আমরা এখন এখানে এলাম।"

দৈনিক সকাল নামের আরেকটি বাংলাদেশি ফেসবুক পেজে ১৮ নভেম্বরের একই ঘটনার একটি পৃথক ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি মাসুদ আলমকে দেখা যায় ওই যুবকে একটি রিকশায় তুলে দিয়ে হস্টেলের উদ্দেশ্যে রওনা করিয়ে দিতে।

ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা ছিল, “ধানমন্ডি ৩২-এ রিকশা ভাড়া দিয়ে আহত শিক্ষার্থীকে হলে পাঠালেন ডিসি মাসুদ।” ধানমন্ডি ৩২ শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত বাসভবনের ঠিকানা যা ঢাকা শহরে অবস্থিত।

ফলে সব মিলিয়ে এটা বুঝতে বাকি থাকে না যে ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে দীপুু চন্দ্র দাসের হত্যার কোনও সম্পর্ক নেই এবং মিথ্যে দাবিতে এটি শেয়ার করা হচ্ছে।

 

Fact Check

Claim

এই ভিডিওটি বাংলাদেশের দীপু দাসের অন্তিম মুহূর্তের যখন সে পুলিশের কাছে নিজের প্রাণের জন্য আর্তি জানাচ্ছে।

Conclusion

এই ভিডিওটি দীপু দাসের গণপিটুনির মাসখানেক আগেকার। এটি প্রথম ১৮ নভেম্বর শেয়ার করা হয়েছিল এবং এতে ঢাকা কলেজের একজন ছাত্রকে দেখা যাচ্ছে।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  1. কাক: অর্ধসত্য
  2. একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  3. অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Do you think a messenge is a fake ?
To know the truth, send that to our Number73 7000 7000 you can email on factcheck@intoday.com
Read more!
Advertisement
Advertisement