মুহুর্মুহু ইজরায়লি হামলায় পৃথিবীর মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে গাজা স্ট্রিপ, যা একসময় ছিল প্যালেস্তাইনের অংশ। আর এই প্যালেস্তাইনেই অবস্থিত মুসলিম ধর্মাবলম্বিদের আধ্যাত্মিকতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ আল-আকসা মসজিদ। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভগ্নপ্রায় মসজিদের ভেতরের দৃশ্য প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে এটি প্যালেস্তাইনের সেই আল-আকসা মসজিদ।
প্রায় আড়াই মিনিট দীর্ঘ এই ভিডিওতে একটি ভগ্নপ্রায় মসজিদের ভিতরে জনাকয়েক ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে এবং আজানের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। ভিডিওটি পোস্ট করে তা আল-আকসা মসজিদের বর্তমান অবস্থা দাবি করে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
ভিডিওটি পোস্ট করে অনেকেই ক্যাপশনে লিখেছেন, "মসজিদে আল-আকসার বর্তমান অবস্থা হে আল্লাহ তুমি মুসলমানদের বিজয় দান করো।"
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে আলোচ্য ভিডিওটি প্যালেস্তাইনের আল-আকসা মসজিদের নয়। বরং এই ভিডিওটি গত নভেম্বর মাসের এবং সিরিয়ার সারাকিব নামক একটি শহরের গ্র্যান্ড মসজিদের।
যেভাবে জানা গেল সত্যি
ভাইরাল ভিডিওটি থেকে কিফ্রেম সংগ্রহ করে তার রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে ওই একই ভিডিও দেখা যায় হালাব টিভি নামে একটি সিরিয়ান সংবাদ মাধ্যমের ফেসবুক পেজে। ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছিল ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর। যা থেকে প্রমাণ হয় যে ভিডিওটি অন্তত চার মাস পুরনো।
ভিডিওতে থাকা আরবিক ক্যাপশন অনুবাদ করে দাঁড়ায়, "মিলিটারি অপারেশন ম্যানেজমেন্ট ফোর্স নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সারাকাব শহরের গ্র্যান্ড মসজিদে কয়েক বছর পর প্রথমবার প্রার্থনার ধ্বনি শোনা গেল।" যা থেকে অনুমান করা যায় যে ভিডিওটি সিরিয়ার সারাকাব শহরের হতে পারে।
এই বিষয়ে সার্চ করে দ্য ডে আফটার হেরিটেজ প্রোটেকশন ইনিশিয়েটিভ নামের একটি ওয়েবসাইটের পাওয়া যায় সিরিয়ার সাংস্কৃতিক হেরিটেজ স্থাপনাগুলিকে রক্ষা করার জন্য কাজ করছে। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে এই ওয়েবসাইটে সারাকাব বা সারাকিব শহরের গ্র্যান্ড মসজিদের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। সেখান থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালে একটি রাশিয়ান এয়ারস্ট্রাইকে এই মসজিদের একটি বড় অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এখানে থাকা মসজিদের ভেতরকার ছবি ভাইরাল ভিডিও-র মসজিদের ছবির সঙ্গে মিলে যায়।
২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রকাশিত আল জাজিরার রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী ইদলিবের সারাকিব শহরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলেছে। এবং সারাকিবের গ্র্যান্ড মসজিদ যে এটিই, সেই নিয়ে আর সংশয় থাকে না। এর পাশাপাশি গাজার সাংবাদিক আনাস আহমেদ আমাদের নিশ্চিত করেন যে আল-আকসা মসজিদ সুরক্ষিত রয়েছে।
ফলে সব মিলিয়ে পরিষ্কার হয়ে যায় যে সিরিয়ার সারাবিক শহরের গ্র্যান্ড মসজিদের ভিডিওকে প্যালেস্তাইনের আল-আকসা মসজিদের দৃশ্য বলে বিভ্রান্তিকর দাবিতে শেয়ার করা হচ্ছে।
ভিডিওটিতে প্যালেস্তাইনের আল-আকসা মসজিদের বর্তমান অবস্থা দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটি সিরিয়ার সারাকিব শহরের গ্র্যান্ড মসজিদের এবং এটি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ধারণ করা হয়েছিল।