সম্প্রতি একটি মসজিদের সামনে আতশবাজি পোড়ানোকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের জেরে উত্তপ্ত মালদার মোথাবাড়ি এলাকা। আর এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও। যেখানে প্রাকাশ্য রাস্তার উপরে বেশ কিছু মানুষকে একটি অ্যাম্বুলেন্স-সহ একাধিক যানবাহন ভাঙচুর করতে এবং তাতে আগুন লাগিয়ে দিতে দেখা যাচ্ছে।
এই একই ভিডিওটি শেয়ার করে দুটি ভিন্ন দাবি করা হচ্ছে। কেউ কেউ দাবি করছেন, ভিডিওটিতে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির তরফে মুসলিমদের বাড়ি-ঘর ও দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার কেউ দাবি করছেন, এটা বাংলাদেশের ভিডিও নয়, পশ্চিমবঙ্গের মালদার মোথাবাড়িতেই হিন্দুদের বাড়ি ও গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে মুসলিমরা।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “ভারতের জঙ্গি গোষ্ঠীর, মুসলমানদের উপর নির্যাতনের চিত্র বিশ্বের কাছে তুলে ধরার জন্য অনুরোধ রইলো। অবশেষে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী গুষ্ঠীগুলো মুসলিমদের লক্ষ করে তান্ডব শুরু করে দিয়েছে!” আবার একই ভিডিও শেয়ার করে অন্য একজন লিখেছেন, “এটা কোনো বাংলাদেশের ফুটেজ নয় এটা গতকাল রাতের পশ্চিমবঙ্গের মালদার মোথাবাড়ির ঘটনা... দেখুন কি ভাবে মুসলমান জেহাদি দুষ্কৃতী বাহিনী হিন্দুদের বাড়ী, গাড়ী, দোকান ভাঙচুর করছে...।”
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গ তো নয়ই এমনকি ভারতেরও নয়। বরং সেটিতে ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর বাংলাদেশের সিলেটে বিএনপি-র বিক্ষোভের সময় ভাঙচুরের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
ভাইরাল দাবি ও ভিডিও-র সত্যতা জানতে সেটির কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোর অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে এই একই ভিডিও-র একটি বর্ধিত সংস্করণ পাওয়া যায়। ভিডিওটি শেয়ার করে সেখানে লেখা হয়েছে, “সিলেটে অবরোধের সমর্থনে মশালমিছিল ও যানবাহন ভাঙচুর।”
এরপর উক্ত সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চ করলে এই একই ভাইরাল ভিডিওর একটি স্ক্রিনশট-সহ ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর সিলেট মিরর-সহ একাধিক বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই সব প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর বাংলাদেশের সিলেটে BNP ও তার সহযোগী দলগুলির তরফে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে একটি মশাল মিছিল করা। সেই বিক্ষোভ মিছিল থেকে দলের সমর্থকরা সিলেটের সুবিদ বাজার এলাকায় একাধিক গাড়ি ও দোকানে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। এইসব আগুন লাগানো গাড়িগুলির মধ্যে একটি সিএনজি চালিত অটো-রিকশা ও একটি অ্যাম্বুলেন্সও ছিল।
ভাইরাল ভিডিওটি নিয়ে ২০২৫ সালের ২৮ মার্চ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলেও একটি পোস্ট পাওয়া যায়া। সেখানে ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে মালদার ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে মালদার পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। একই সঙ্গে ভিডিওটি ২০২৩ সালে বাংলাদেশের সিলেটে তোলা হয়েছিল বলেও জানানো হয়েছে।
এর থেকে স্পষ্ট হয় যে, ২০২৩ সালের বাংলাদেশের একটি ভিডিওকে মালদার গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা দাবি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করা হচ্ছে।
ভিডিওতে মালদার মোথাবাড়িতে বাড়ি ও গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ভিডিওটিতে ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর বাংলাদেশের সিলেটে বিএনপি-র বিক্ষোভের সময় ভাঙচুরের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।