প্রথম দফার ভোটগ্রহণ শেষে কে এগিয়ে, কে পিছিয়ে এই নিয়ে রাজনৈতিক দড়ি টানাটানি শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজ্যস্তরে তৃণমূলের দাবি যে প্রথম তিন আসনেই বিজেপিকে সরিয়ে ঘাসফুল ফুটছে। অন্যদিকে, বিজেপির দাবি যে গতবারের ১৮ আসনের গন্ডি এবার তারা এই রাজ্যে পেরিয়ে যাবে।
এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় সংবাদ প্রতিদিন-এর তথাকথিক একটি প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে। যে প্রতিবেদনে মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, সম্প্রতি এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে রাজ্যে ৩৯টি আসন পেতে পারে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস।
স্ক্রিনশটে প্রতিদিনের এই খবরের শিরোনামে লেখা হয়েছে, "উন্নয়নকে সামনে রেখেই আসন্ন লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেস ৩৯ টি আসন পেতে পারে।" প্রতিবেদনের যেটুকু অংশ পড়া যাচ্ছে সেখানে লেখা রয়েছে, "স্টাফ রিপোর্টার: নারী শক্তির ওপর ভর করে তৃণমূল কংগ্রেস আসন্ন লোকসভায় ভালো ফলাফল করতে চলেছে। সমীক্ষায় উঠে এলো তৃণমূল কংগ্রেস ৩৯ টি আসন পেতে পারে। বাম কংগ্রেস জোট 'শূন্য'। এছাড়াও বিজেপি দুটি আসন পেতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেসকে মা বোনেদের 'লক্ষ্মী ভান্ডারে'র জন্য এগিয়ে রাখছে"
ছবিটি শেয়ার করে কেউ লিখেছেন, "সমীক্ষা বলছে", কেউ বা আবার বলছেন, "সমীক্ষা বলছে, তৃনমূল 39 পাচ্ছে।" এমনই একটি পোস্টের আর্কাইভ সংস্করণ এখানে দেখা যাবে।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল স্ক্রিনশটটি সত্যি নয়। এমন কোনও খবর সংবাদ প্রতিবেদনের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়নি।
কীভাবে জানা গেল সত্যি
সংবাদ প্রতিদিন আদৌ এই ধরনের কোনও খবর প্রকাশ করেছে কিনা সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে সবার প্রথম আমরা কিওয়ার্ড সার্চ করি। কিন্তু কোনও ভাষাতেই এই ধরনের কোনও খবর আমাদের নজরে আসে না। যা থেকে একটি বিষয়ে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া যায় যে খবরটি খুব সম্ভবত ভুয়ো।
এরপর আমাদের উক্ত স্ক্রিনশটে কয়েকটি অসামঞ্জস্য নজরে আসে। যেমন, খবরের স্ক্রিনশটে সংবাদ প্রতিদিনের লোগো থাকলেও খবরটি কবে বা কখন প্রকাশ পেয়েছে, সেই বিষয়টি উল্লেখ নেই। এ ছাড়া, বাংলা খবরের শিরোনামে সচরাচর দাড়ি (পূর্ণচ্ছেদ) ব্যবহার করা হয় না, যা এখানে করা হয়েছিল।
এরপর আমরা সংবাদ প্রতিদিনের এমন একটি খবর খুঁজে বের করি যেখানে এ বারের লোকসভা নির্বাচনের সমীক্ষা সংক্রান্ত খবর প্রকাশ পেয়েছে। ২০২৪ সালের ১৫ মার্চ এবিপি সি-ভোটারের একটি সমীক্ষা এখানে প্রকাশ করা হয়েছিল। দুটি প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট পাশাপাশি রেখে তুলনা করলে পরিষ্কার হয়ে যায় যে আসল প্রতিদিনের খবরের সঙ্গে ভাইরাল হওয়া স্ক্রিনশটের কোনও সাদৃশ্যই নেই বললে চলে।
সবার প্রথমেই দুটি প্রতিবেদনের ফন্ট যে আলাদা সেটা বোঝা যায়। এ ছাড়াও ভাইরাল স্ক্রিনশটে প্রতিবেদকের নাম ছিল না। সাধারণত, আসল প্রতিবেদনে শিরোনামের নীচে খবরের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণী ও তারপর ছবি, এরপর প্রতিবেদকের নাম এবং খবর প্রকাশের সময় উল্লেখ থাকে। কিন্তু, ভাইরাল স্ক্রিনশটে এগুলোর কোনওটি ছিল না।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের পক্ষ থেকেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাংবাদিক আমাদের নিশ্চিত করেছেন যে এই খবরের স্ক্রিনশটটি কোনও ভাবেই সেখানে প্রকাশিত নয়। তিনি জানান, তাদের কোনও প্রতিবেদন 'স্টাফ রিপোর্টার' লিখে শুরু হয় না।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে। একটি জাল স্ক্রিনশট ছড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এমন কোনও খবর সেই সংবাদ মাধ্যম প্রকাশই করেনি।
সংবাদ প্রতিদিনের এই খবরে লেখা হয়েছে যে সমীক্ষা অনুযায়ী আসন্ন লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেস ৩৯টি আসন পেতে পারে।
এই স্ক্রিনশটটি ভুয়ো। সংবাদ প্রতিদিনের পক্ষ থেকে এমন কোনও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।