সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষক সম্মেলন নিয়ে কম আলোচনা হয়নি সংবাদ মাধ্যমে। একদিকে যেমন বিশ্বব্যাপী দেশনেতাদের স্বাগত জানাতে নব কলেবরে সেজে উঠেছিল রাজধানী নয়াদিল্লী। অন্যদিকে, রঙিন কাপড়ে মুড়ে রাজধানীর দারিদ্রতার দৃশ্য ঢাকার চেষ্টাও সমালোচিত হয়েছে।
এরই মধ্যে নানা ভিডিয়ো ও ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হচ্ছে। এমনই একটি ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, কিছু মহিলা পুলিশকর্মীকে দুই মহিলাকে নির্মমভাবে মারধর করতে।
ভিডিয়োটিতে দেখা যাচ্ছে, দুই মহিলার সঙ্গে রীতিমতো ধ্বস্তাধ্বস্তি করে তাঁদের মাটিতে ফেলে দিচ্ছেন, ও তারপর চুলের মুঠি ধরে মেরে চলেছেন। এই ভিডিয়োটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, এটি মধ্য প্রদেশের ঘটনা। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "ভারতে স্বাগতম #ModiPowersBharat এবং চান্দা মামার মধ্যাপ্রদেশ। ব্যাংকে ঋণ খেলাপির কারণে ধনীদের কোটি কোটি টাকা মওকুফ করা হলেও গরিবরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। #মধ্যপ্রদেশ নরেন্দ্র মোদী"
এখানে 'মামা' বলতে শিবরাজ সিং চৌহানকে বোঝাতে চাওয়া হয়েছে। কারণ তিনি-ই রাজ্যে 'মামা' হিসেবে পরিচিত।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে দাবিটি বিভ্রান্তিকর। কারণ, এই ঘটনাটি মধ্য প্রদেশের নয়, বরং উত্তর প্রদেশের।
কীভাবে জানা গেল সত্যি
সবার প্রথম ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োটি থেকে স্ক্রিনশট সংগ্রহ করে আমরা এর রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তখন ওই একই ভিডিয়ো আমরা উৎকর্ষ সিং নামের এক 'এক্স' (টুইটার) ব্যবহারকারীর হ্যান্ডেলে দেখতে পাই। তিনি ভিডিয়োটি পোস্ট করে গত ৮ সেপ্টেম্বর লিখেছিলেন, নীরব মোদী বা বিজয় মালিয়া নয়, এঁরা লখনউয়ের সীমা গুপ্তা ও তাঁর মেয়ে।
এর পরের একটি টুইটে তিনি লেখেন, রবীন্দ্র গুপ্ত নামের এক ব্যক্তি নিজের বন্ধু অরুণের জন্য একটি দোকানের জন্য ৩৫ লাখের লোন নিয়েছিলেন যার পরিবর্তে নিজের বাড়ি বন্ধক রাখেন। কিন্তু ২০১৫ সালে রবীন্দ্র গুপ্ত মারা যান। বন্ধু অরুণও দেউলিয়া হয়ে যান। এরপর সম্প্রতি রাজ্যের রাজস্ব বিভাগ ও পুলিশ বাড়ি দখল করতে যায়। এরপর রবীন্দ্রর স্ত্রী সীমা ও তাঁর মেয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়।
এই বিষয়গুলিকে সূত্র ধরে আমরা কিছু কিওয়ার্ড সার্চ করি, ও হিন্দুস্তান টাইমসের একটি খবর খুঁজে পাই যা ৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশ পেয়েছিল। সেই প্রতিবেদনেও মোটামুটি একই ঘটনার কথা উল্লেখ করে লেখা হয় যে ঘটনাটি উত্তর প্রদেশের রাজধানী লখনউতে ঘটেছিল। এখানে আরও লেখা হয় যে এই ঘটনাটি লখনউয়ের কাকোরি ক্রসিং এলাকায় ঘটে, এবং পারা পুলিশ স্টেশনের কর্মীরা এই আচরণ করেন।
এই নিয়ে হিন্দিতে কিছু কিওয়ার্ড সার্চ করে আমরা অমর উজালা, ও ইউপি তক-এর মতো সংবাদ মাধ্যমেও এই নিয়ে খবর দেখতে পাই। অমর উজালার খবরে লেখা হয়, আদালতের নির্দেশে ওই বাড়িতে কব্জা করতে গেলে সীমা ও তাঁর মেয়ে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের উপর হামলা চালান। যার দরুণ চারজন আহত হন।
অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে যে, উত্তর প্রদেশের লখনউয়ের একটি ঘটনা বিভ্রান্তিকরভাবে মধ্য প্রদেশের দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ভিডিয়োটি মধ্য প্রদেশের যেখানে পুলিশকর্মীরা দুই মহিলাকে মারধর করছেন।
এই ভিডিয়োটি মধ্য প্রদেশের নয়, বরং উত্তর প্রদেশের রাজধানী লখনউয়ের।