চলতি বছর জানুয়ারি মাসেই কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ ও বিজিবি-র মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে দুই তরফের বাসিন্দারা মুখোমুখিও চলে আসে। এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে যে ভারত ও বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে দুই দেশের বাসিন্দারা নিজেদের মধ্যে 'গান ফাইট'-এর আয়োজন করেছেন।
তবে এ গান বন্দুকের গান নয়। এ গান অর্থাৎ সঙ্গীত। এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি সবুজ বিস্তৃত চাষের জমির দু'পাশে সারিবদ্ধভাবে রয়েছে অগণিত সাউন্ড বক্স এবং মাইক। এবং উভয় পাশ থেকেই মাত্রাতিরিক্ত আওয়াজে সেই বক্সে গান বাজানো হচ্ছে।
ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে চলছে গান ফাইট বাংলাদেশ সীমান্তে মাইকের পরিমাণ আরো বাড়ানো হোক, টাকা আমি হালের গরু বেইচ্চা দিমু।"
একই ধরনের ক্যাপশনের সঙ্গে অনেকেই এই ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করে একই দাবি করেছেন।
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল ভিডিওটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের নয়। বরং মুর্শিদাবাদের ডোমকল থানার অন্তর্গত গোবিন্দপুর এলাকার।
কীভাবে জানা গেল সত্যি
ভাইরাল ভিডিওটির স্ক্রিনশট রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খোঁজা হলে ওই একই ভিডিও রবিউল ফানি নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে দেখা যায়। গত ১৭ জানুয়ারি আপলোড হওয়া এই ভিডিও-র ক্যাপশনে লেখা হয়, "মুর্শিদাবাদ VS নদিয়া open a competition." এখানে এমন কথা কোথাও লেখা হয়নি এই ঘটনা বাংলাদেশ সীমান্তের।
এরপর ওই চ্যানেলেই আপলোড হওয়া অন্য কয়েকটি ইউটিউবে শর্ট আমাদের নজরে আসে যেখানে একই ধরনের সাউন্ড বক্স ব্যবহার করে অন্য বেশ কয়েকটি ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। তেমনই একটি ভিডিওতে একটি সাউন্ড বক্সের গায়ে 'সুপার সাউন্ড' কথাটি লেখা রয়েছে। সেই সঙ্গে উক্ত সাউন্ড সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর এবং ঠিকানা নাটনা, পূর্বপাড়া, নদীয়া হিসেবে সেখানে উল্লেখ করা ছিল। এই পোস্টের ক্যাপশনে লেখা ছিল- 'পিকনিক 2025 সাল।'
সুপার সাউন্ডের বিষয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করে আমরা দেখতে পাই যে গুগল ম্যাপে নদীয়ার করিমপুরে নাটনার অন্তর্গত পূর্বপাড়া এলাকায় এই সংস্থাটির অবস্থান। সেই সঙ্গে ফেসবুকে আরেকটি পোস্ট মেলে যা শাহিন শেখ নামের এক যুবক ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর করেছিলেন। সেই পোস্টে সুপার সাউন্ডের স্পিকারের একাধিক ছবিতে ওই একই ফোন নম্বর দেখা যাচ্ছিল, পাশাপাশি পোস্টের ক্যাপশনেও ওই একই নম্বর দেওয়া ছিল যোগাযোগের জন্য।
এরপর ওই নম্বরে যোগাযোগ করা হলে ফোনের ওপারে থাকা ব্যক্তি জানান, তাঁর নামই শাহিন শেখ। তিনি নদীয়া জেলার বাসিন্দা এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই ধরনের সাউন্ড সিস্টেম সাপ্লাই করেন ও সাউন্ডের কাজ করেন। পাশাপাশি তিনি বলেন যে ভাইরাল ভিডিওটি আসলে মুর্শিদাবাদের ডোমকল থানার অন্তর্গত গোবিন্দপুর এলাকার। যেখানে দুটি পৃথক ইটভাটা কর্তৃপক্ষ পিকনিকের আয়োজন করেছিল এবং নিজেদের মধ্যে আনন্দ করার জন্য একপ্রকার সাউন্ড প্রতিযোগিতা করা হয়।
এর থেকেই কার্যত পরিষ্কার হয় যে মুর্শিদাবাদের গোবিন্দপুরে আয়োজিত একটি পিকনিকের দৃশ্যকে বিভ্রান্তিকর দাবিতে সীমান্তের বলে ছড়ানো হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে দুই দেশের মধ্যে চলছে গানের যুদ্ধ।
ভাইরাল ভিডিওটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের নয়, বরং মুর্শিদাবাদের ডোমকল থানার অন্তর্গত গোবিন্দপুর এলাকার যেখানে দুটি ইটভাটার পক্ষ থেকে পিকনিকের আয়োজনের সময় এই দৃশ্য দেখা যায়।