সম্প্রতি ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে কার্যকর হয়েছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি। আর এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও। যেখানে কোনও একটি স্থানে মাটি থেকে শূন্যে অনেকটা উঁচু পর্যন্ত বাদামি রংয়ের ধোঁয়ার জটলা দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে কিছু মানুষের চিৎকারের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে এবং ঘটনা স্থল থেকে দুই-এক জনকে পালিয়ে আসতেও দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, সেটি ইজরায়েলের মাটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দৃশ্য। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন,“ইরানের এই বোমা দিয়ে ইজরায়েলকে ধংশ।” পাশাপাশি ভিডিওর ফ্রেমের উপরে তিনি লিখেছেন, “ইরানের এই সেই বোমা যা দিয়ে ইজরায়েলকে ধংশ।” (সব বানান অপরিবর্তিত)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে সাম্প্রতিক ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং সেটি চলতি বছরের ১৭ জুন ইন্দোনেশিয়ার লিয়োটোবি পর্বতের ‘লাকি লাকি’ আগ্নেয়গিরি জেগে ওঠার দৃশ্য।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল দাবি ও ভিডিওটির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৫ সালের ১৭ জুন Weather Monitor নামক একটি এক্স হ্যান্ডেলে এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, সেটি চলতি বছরের ১৭ জুন ইন্দোনেশিয়ার লেসার সুন্দা দ্বীপপুঞ্জের ফ্লোরেস দ্বীপে অবস্থিত লিয়োটোবি পর্বতে জেগে ওঠা আগ্নেয়গিরির দৃশ্য। যার ফলে আকাশের ১০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত ধোঁয়া ও ছাইয়ের মেঘ তৈরি হয়। ইউক্রেন ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম The Daily Kyiv-এর ইনস্টাগ্রাম পেজে থেকে এই একই ভিডিও শেয়ার করে একই তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এরপর উক্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে একাধিক অন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত একাধিক প্রতিবেদন পাওয়া যায়। আগ্নেয়গিরির বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলের ভিডিও এবং একাধিক ছবি-সহ সেই সব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৫ সালের ১৭ জুন স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা ৩৫ মিনিট নাগাদ ইন্দোনেশিয়ার লিয়োটোবি পর্বতের ‘লাকি লাকি’ আগ্নেয়গিরিটি হঠাৎ করেই সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই অগ্ন্যুৎপাতের ফলে কমলা রংয়ের মাশরুম আকৃতির বিশাল একটি মেঘের সৃষ্টি হয়। যা আকাশে প্রায় ১১ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে এবং নিকটবর্তী তালিবুরা গ্রামকে গ্রাস করে ফেলে।
পাশাপাশি প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, আগ্নেয়গিরিটি তার উৎসস্থল থেকে প্রায় ১৫০ কিমি দূর থেকেও দেখা গেছে। অন্যদিকে এই অগ্ন্যুৎপাতের জেরে সেই সময় ভারত, অস্ট্রেলিয়া, চীন, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুর-সহ একাধিক দেশ থেকে বালিগামী বহু বিমান বাতিল করা হয়। প্রশাসনের তরফে নিরাপত্তার খাতিরে ওই পার্বত্য এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়। আগ্নেয়গিরির ৭ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে সাধারণ মানুষ থেকে পর্যাটকদের প্রবেশ সাময়ীকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, ইজরায়েলের মাটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দৃশ্য দাবি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার অগ্ন্যুৎপাতের দৃশ্য।
ভিডিওতে ইজরায়েলের মাটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটি চলতি বছরের ১৭ জুন ইন্দোনেশিয়ার লিয়োটোবি পর্বতের ‘লাকি লাকি’ আগ্নেয়গিরি জেগে ওঠার দৃশ্য। এর সঙ্গে সাম্প্রতিক ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধের কোনও সম্পর্ক নেই।