
SIR প্রক্রিয়া শুরু হতেই রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার তালিকায় নাম থাকার খবর সামনে এসেছে। এমনকি উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগর থানা-সহ সীমান্তবর্তী একাধিক এলাকা থেকে গ্রেফতার হয়েছে প্রায় শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিক। আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও। যেখানে বেশকিছু পুরুষ এবং হিজাব পরা মহিলাকে বিক্ষোভ করতে ও সংবাদমাধ্যমের সামনে কান্নাকাটি করতে দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটিতে অনেককেই বলতে শোনা যাচ্ছে, “আমরা রোহিঙ্গা নাকি? আমাদের কাগজ আছে।” ক্লিপটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, SIR প্রক্রিয়া অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের বকখালিতে শুরু হয়েছে বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গা মুসলিমদের দেশ থেকে বিতাড়িত করার কাজ। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “বকখালিতে রোহিঙ্গা তাড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে ।। #SIR এর গুরুত্ব কতোটা এই বার বোঝা যাচ্ছে - কেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এতোটা উদ্বিগ্ন!!!” (সব বানান অপরিবর্তিত)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে SIR-এর কোনও সম্পর্কই নেই, এমনকি ভিডিওটি ভারতেরও নয়। ভিডিওটি চলতি বছরের ৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর তীরে অবৈধভাবে গড়ে তোলা বসতি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভের দৃশ্য।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল ভিডিওটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে এর ৩৯ সেকেন্ডে একজন সংবাদ কর্মীর জ্যাকেটের পিছনে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘যমুনা টিভি’র নাম-সহ লোগো দেখতে পাওয়া যায়। যা থেকে সন্দেহ তৈরি হয় যে ভিডিওটি বাংলাদেশের হতে পারে। এরপর ভাইরাল ভিডিও এবং দাবির সত্যতা জানতে একাধিক কিফ্রেম সংগ্রহ করে সেগুলি গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে চলতি বছরের ৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম DBC News-এর অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদনে একাধিক ক্লিপের সঙ্গে ভাইরাল ভিডিও-র সাদৃশ্য পাওয়া যায়। অন্য দিক থেকে রেকর্ড করা সেই সব ক্লিপগুলিতে ওই একই স্থানে একই মহিলাদেরকে দেখতে পাওয়া যায়।
ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযান, কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন স্থানীয়রা।” সেই সঙ্গে এই ভিডিওতে একাধিক বাংলাদেশি পুলিশ কর্মীদের দেখা যায়, এবং ‘কক্সবাজার পৌরসভা’ লেখা একটি জেসিবি দেখতে পাওয়া যায়। ভিডিওটি দেখলে স্পষ্ট হয়ে যায়, এই ঘটনা বাংলাদেশের কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর তীরে অবৈধভাবে গড়ে তোলা বসতি উচ্ছেদের।
এরপর উক্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে চলতি বছরের ৩ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো-সহ একাধিক বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত রিপোর্ট পাওয়া যায়। সেই সব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি বছরের ২৪ অগস্ট বাংলাদেশের কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর তীরে অবৈধভাবে গড়ে তোলা বসতি ৪ মাসের মধ্যে উচ্ছেদের নির্দেশ দেয় দেশটির হাইকোর্ট। সেই নির্দেশ অনুযায়ী, ৩ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার পৌরসভা এবং প্রশাসনের তরফে উচ্ছেদ অভিযান চলানো হলে সেখানকার বাসিন্দারা তাতে বাধা দেন এবং প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান। তাদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের সর্বস্ব হারানোর ভয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, পশ্চিমবঙ্গের বকখালিতে বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গা মুসলিমদের তাড়ানোর দাবিতে ভাইরাল ভিডিওটি আসলে বাংলাদেশের।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, SIR প্রক্রিয়া অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের বকখালিতে শুরু হয়েছে বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গা মুসলিমদের দেশ থেকে বিতাড়িত করার কাজ।
ভাইরাল ভিডিও-র সঙ্গে SIR-এর কোনও সম্পর্কই নেই। বরং সেটি বাংলাদেশের কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর তীরে অবৈধভাবে গড়ে তোলা বসতি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভের দৃশ্য।