সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও। যেখানে এক যুবককে মাটিতে ফেলে বেল্ট দিয়ে একের পর এক আঘাত করছেন একজন পুলিশ আধিকারিক। অন্যদিকে তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন অপর এক পুলিশ কর্মী ও একজন সাদা পোশাকের ব্যক্তি।
ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ৪ জন মুসলিম যুবককে বেধড়ক মারধরের পর গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ-এর জওয়ানরা। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “আর কত অত্যাচার হবে মুসলমানদের উপর ধরিয়ানি মুসলমানদের উপর বিএসএফের অত্যাচার গুলি করে চারজনকে খুন।” (সব বানান অপরিবর্তিত)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওতে কোনও মুসলিম যুবককে নয়, বরং মদ্যপ অবস্থায় মা ও বোনকে মারার অভিযোগে পুলিশ মায়াঙ্ক কুমার মিশ্র নামক এক হিন্দু যুবককে মারধর করেছিল।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল দাবি ও ভিডিওটির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৪ সালের ৮ নভেম্বর একটি এক্স হ্যান্ডেলে এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। সেই ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ৬ সেকেন্ডের মধ্যে এক ব্যক্তিকে ১০ বার বেল্ট দিয়ে মারার অভিযোগে উত্তর প্রদেশের ইটাওয়া জেলার জগদীশ ভাটি নামক এক পুলিশ ইন্সপেক্টরকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন পুলিশ সুপার।
এরপর উক্ত সূত্র ধরে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে ভাইরাল ভিডিও এবং এটির স্ক্রিনশট-সহ এই ঘটনা সংক্রান্ত একাধিক প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই সব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভিডিওটি ২০২৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর উত্তর প্রদেশের ইটাওয়া জেলার বাকেওয়ার থানায় তোলা হয়েছিল। পাশাপাশি এতে নির্যাতিত যে যুবককে দেখা যাচ্ছে সে মুসলিম নয় বরং হিন্দু। তার নাম মায়াঙ্ক কুমার মিশ্র এবং তার বাবার নাম শৈলেন্দ্র কুমার মিশ্র। ৯ সেপ্টেম্বর মায়াঙ্ক মদ্যপ অবস্থায় তার মা ও বোনকে অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ এবং বেধড়ক মারধর করে।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, এই মারধরের ঘটনার পর মায়াঙ্কের বাবা শৈলেন্দ্র কুমার মিশ্র তার বিরুদ্ধে বাকেওয়ার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। তখন বাকেওয়ার থানার অন্তর্গত মাহেভা ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর জগদীশ ভাটি ঘটনার তদন্তে গিয়ে মায়াঙ্ককে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে এবং নিজের বেল্ট ও জুতো দিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করে। কেউ লুকিয়ে সেই মারধরের ভিডিও রেকর্ড করে এবং পরবর্তীতে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেয়। ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসতেই ইটাওয়া জেলার সিনিয়র পুলিশ সুপার সঞ্জয় কুমার ভার্মার তরফে অভিযুক্ত পুলিশ ইন্সপেক্টর জগদীশ ভাটিকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এখানে উল্লেখ্য, আমরা আমাদের অনুসন্ধানে সম্প্রতি বিএসএফের তরফে ৪ মুসলিম যুবককে গুলি করে হত্যা করা সংক্রান্ত কোনও তথ্য বা প্রতিবেদন খুঁজে পাইনি।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, মুসলিম যুবককে গুলি বেধড়ক মারধরের পর গুলি করে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় হিন্দু যুবকের ভিডিও শেয়ার করা হচ্ছে।
ভিডিওটিতে ৪ মুসলিম যুবককে বেধড়ক মারধরের পর গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ-এর জওয়ানরা।
ভিডিওতে কোনও মুসলিম যুবককে নয়। মদ্যপ অবস্থায় মা ও বোনকে মারার অভিযোগে ২০২৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর উত্তর প্রদেশের বাকেওয়ার থানার পুলিশ মায়াঙ্ক কুমার মিশ্র নামক এক হিন্দু যুবককে বেধড়ক মারধর করে।