Advertisement

ফ্যাক্ট চেক: ইন্দোনেশিয়ার বোরখা পরিহিত মহিলাদের ভিডিও ইংল্যান্ডের দৃশ্য দাবিতে ভাইরাল

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি যুক্তরাজ্য বা ইংল্যান্ডের নয়। বরং এটি ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব জাভা প্রদেশের ম্যাগেটান রিজেন্সির কারাস জেলার টেম্বোরো গ্রামে অবস্থিত আল-ফাতাহ নামাক মেয়েদের একটি ইসলামিক বোর্ডিং স্কুলের দৃশ্য।

সুরাজউদ্দিন মণ্ডল
  • কলকাতা,
  • 10 Sep 2025,
  • अपडेटेड 10:03 AM IST

সম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন সমীক্ষা অনুযায়ী লন্ডন তথা গোটা ইংল্যান্ডে বৃদ্ধি পয়েছে মুসলিম জনসংখ্যা হার। এমনকি এই বৃদ্ধির হার দেশটির সংখ্যাগুরু খ্রিস্টান জনসংখ্যার থেকেও বেশি। আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও। যেখানে কোনও একটি স্থানে রাস্তা দিয়ে বোরখা পরিহিত শতাধিক মহিলাকে হেঁটে যেতে দেখা যাচ্ছ। পাশাপাশি তাদের প্রত্যেকের হাতে রয়েছে নামাজ পড়ার গালিচা।

ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, সেটি ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনের দৃশ্য এবং সাম্প্রতি দেশটিতে মুসলিমদের জনসংখ্যা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে সেটি ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “এটা আফগানিস্তান, সিরিয়া, পাকিস্তান কিংবা সৌদি আরব নয়। আপনারা জেনে অবাক হবে এটা ইংল্যান্ডের লন্ডন। ইংল্যান্ডকে এরা মুসলিম দেশ বানিয়ে ফেলেছে। এখনই সবধান হলে সে দিন দুরে নেই যে দিন ভারতও মুসলিম রাষ্ট্র হয়ে যাবে। সাবধান।” (সব বানান অপরিবর্তিত)

 

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি যুক্তরাজ্য বা ইংল্যান্ডের নয়। বরং এটি ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব জাভা প্রদেশের ম্যাগেটান রিজেন্সির কারাস জেলার টেম্বোরো গ্রামে অবস্থিত আল-ফাতাহ নামাক মেয়েদের একটি ইসলামিক বোর্ডিং স্কুলের দৃশ্য।

সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে

আরও পড়ুন

ভাইরাল ভিডিও এবং দাবির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৪ সালের ১৩ আগস্ট একটি ফেসবুক প্রোফাইলে আমরা এই একই ভিডিও খুঁজে পাই। তবে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করার সময় আমরা লক্ষ্য করি সেটির শেষাংশে আরও একটি ক্লিপ রয়েছে। যেখানে একটি স্কুল জাতীয় একটি বিল্ডিংয়ের সামনের রাস্তা দিয়ে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেশকিছু বোরখা পরিহিতা মহিলাকে চলাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে।
 
উক্ত ফেসবুক প্রোফাইলে প্রাপ্ত ভিডিওর দ্বিতীয় ক্লিপটিতে থাকা বিল্ডিংয়ের সামনে একটি সবুজ রঙের ব্যানার দেখতা পাই। যাতে ‘PONDOK AL-FATAH PUTRI TAHFIOZ’ নামক কিছু একটা লেখা রয়েছে। এরপর লেখাটি গুগলে ট্রান্সলেট করলে জানা যায় সেটি ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় লেখা ‘আল-ফাতাহ প্রিন্সেস তাহফিয়োজ বোর্ডিং স্কুল’। অর্থাৎ এর থেকে অনুমান করা যায় যে বিল্ডিংটি ‘আল-ফাতাহ’ নামক কোনও মহিলা ইসলামিক বোর্ডিং স্কুলের হতে পারে। পাশাপাশি, যেহেতু ব্যানারটি ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় লেখা। তাই এর থেকে সন্দেহ তৈরি হয় যে ভিডিওর দ্বিতীয় ক্লিপটি ইন্দোনেশিয়ার হলেও হতে পারে।
 

Advertisement

এরপর ‘আল-ফাতাহ’ নামক ওই স্কুলটি সম্পর্কে জানতে এই সংক্রান্ত একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করলে ২০২০ সালের ২৮ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ান ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম IDN Times-এ স্কুলের সামনের গেটের ছবি-সহ একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। যে ছবির সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওর দ্বিতীয় ক্লিপে থাকা ‘আল-ফাতাহ প্রিন্সেস তাহফিয়োজ বোর্ডিং স্কুল’র গেটের হুবহু মিল পাওয়া যায়। পাশাপশি IDN Times-এর প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারি ‘আল-ফাতাহ’ নামক ওই স্কুলটি ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব জাভা প্রদেশের ম্যাগেটান রিজেন্সির কারাস জেলার টেম্বোরো গ্রামে অবস্থিত।

এরপর উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে আমরা গুগল ম্যাপে ইন্দোনেশিয়ার কারাস জেলার টেম্বোরো গ্রামে ‘PONDOK AL-FATAH PUTRI TAHFIOZ’ তথা ‘আল-ফাতাহ প্রিন্সেস তাহফিয়োজ বোর্ডিং স্কুল’ খুঁজে বের করি। এবং লক্ষ্য করি গুগল আর্থ ভিউয়ে প্রাপ্ত স্কুলের ছবির সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওর স্কুলের দৃশ্যেরও হুবহু মিল রয়েছে। নীচে গুগল ম্যাপে প্রাপ্ত স্কুলটির দৃশ্য দেখা যাবে। পাশাপশি, উপরে উক্ত ফেসবুক প্রোফাইলে প্রাপ্ত ভিডিওর প্রথম ক্লিপে যেহেতু ভাইরাল ভিডিওটিও পাওয়া যায়। এর থেকে আমাদের সন্দেহ তৈরি হয় যে ভাইরাল ভিডিওটিও এই ‘আল-ফাতাহ’ স্কুল সংলগ্ন স্থানের হলেও হতে পারে।

তাই এরপর ভাইরাল ভিডিও অর্থাৎ হাতে নামাজ পড়ার মাদুর নিয়ে রাস্তা দিয়ে শতাধিক বোরখা পরিহিত মহিলার হেঁটে যাওয়ার ক্লিপটি ঠিক কোথায় তোলা হয়েছিল সেই বিষয়ে জানতে আমরা গুগল ম্যাপে ‘আল-ফাতাহ’ স্কুল সংলগ্ন এলাকাটি ভালো করে অনুসন্ধান চালাই। তখন স্কুল থেকে ঠিক কয়েক-শো মিটার দূরে ভাইরাল ভিডিওতে যে স্থানে ওই বোরখা পরিহিত মহিলাদের হেঁটে যেতে দেখা যাচ্ছে সেই একই স্থানটি পাওয়া যায়। নীচে গুগল ম্যাপে প্রাপ্ত ভাইরাল ভিডিওর ধারণ করা স্থানটি দেখা যাবে। 

এর থেকে প্রমাণ হয় যে, ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে ইংল্যান্ড তথা লন্ডন দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার মেয়েদের একটি ইসলামিক বোর্ডিং স্কুলের ভিডিও।

Fact Check

Claim

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, লন্ডন তথা ইংল্যান্ডে সাম্প্রতি মুসলিমদের জনসংখ্যা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে দেশটি একটি ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।

Conclusion

ভিডিওটি লন্ডন বা ইংল্যান্ডের নয়। বরং এটি ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব জাভা প্রদেশের কারাস জেলার টেম্বোরো গ্রামে অবস্থিত আল-ফাতাহ নামাক মেয়েদের একটি ইসলামিক বোর্ডিং স্কুলের দৃশ্য।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  1. কাক: অর্ধসত্য
  2. একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  3. অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Do you think a messenge is a fake ?
To know the truth, send that to our Number73 7000 7000 you can email on factcheck@intoday.com
Read more!
Advertisement
Advertisement