Advertisement

ফ্যাক্ট চেক: কোভিড-বিধি লঙ্ঘন করে পুজোয় পুলিশি বাধার পুরনো ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে বিভ্রান্তিকর দাবিতে

আজতক ফ্যাক্ট ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। বরং সেটি ২০২০ সালের ৫ আগস্ট খড়গপুরের তালবাগিচা এলাকার এবং তখন দেশে লকডাউন চলছিল। সেই সময়ের এবং পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট পরিষ্কার না করে এহেন ক্যাপশনের মাধ্যমে বিভ্রান্তি এবং সাম্প্রদায়িক উস্কানি ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। 

সুরাজউদ্দিন মণ্ডল
  • কলকাতা,
  • 18 Mar 2025,
  • अपडेटेड 4:06 PM IST

সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে হিন্দুদের পুজো করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ একাধিক বিজেপি নেতৃত্ব। আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও। যেখানে, কোনও একটি পুজোর বেদীতে আয়োজিত হনুমান পুজো বন্ধ করে বাড়িতে করার কথা বলতে শোনা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এক আধিকারিককে। পাশাপাশি ভিডিওর এক পর্যয়ে একটি যুবককে আটক করে গাড়িতে তুলতেও দেখা যাচ্ছে পুলিশকে।

ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ঘটনাটি সাম্প্রতিক, এমন ইঙ্গিত করে বলা হচ্ছে যে হিন্দুদের ভাবার সময় এসেছে এবং তারা ঘুমিয়ে রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “আমরা পশ্চিমবঙ্গে আছি না পশ্চিম বাংলাদেশে? সময় এসেছে ভাবুন! যে সমস্ত হিন্দুরা ঘুমিয়ে আছে, ভিডিওটা তাদের জন্য।”

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। বরং সেটি ২০২০ সালের ৫ আগস্ট খড়গপুরের তালবাগিচা এলাকার এবং তখন দেশে লকডাউন চলছিল। সেই সময়ের এবং পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট পরিষ্কার না করে এহেন ক্যাপশনের মাধ্যমে বিভ্রান্তি এবং সাম্প্রদায়িক উস্কানি ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। 

আরও পড়ুন

কীভাবে জানা গেল সত্য?

ভাইরাল ভিডিওটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করার সময় আমরা সেখানে উপস্থিত পুলিশ কর্মী-সহ সাধারণ মানুষদের অনেকেই মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরা অবস্থায় দেখতে পাই। যা থেকে সন্দেহ তৈরি হয় ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের না হয়ে করোনার সময়ের হতে পারে। এমনকি ভিডিও-র কমেন্ট সেকশনেও অনেকেই ভিডিওটিকে করোনার সময়ের বলে দাবি করেছেন। এমনই একজন লিখেছেন, “এটা বোঝাই যাচ্ছে করোনার সময়ের ভিডিও, তখন রেস্ট্রিকশন এরকমই ছিল। মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য এমন ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে।”

এরপর বিষয়টি নিশ্চিত হতে এবং ভিডিও-র ঘটনার প্রকৃত সময় ও স্থান জানতে আমরা সেখান থেকে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে সেগুলি গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তখন আমরা ২০২০ সালের ৫ আগস্ট একটি ফেসবুক প্রোফাইলে এই একই ভিডিও খুঁজে পাই। ভিডিও শেয়ার করে সেখানে একে খড়গপুর শহরের তালবাগিচা এলাকার ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

Advertisement

এরপর উক্ত সূত্র ধরে এই সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করলে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট ‘PRIME 18 বাংলা’ নামক একটি ফেসবুক পোর্টালে অন্য অ্যাঙ্গেল থেকে তোলা এই একই ভিডিও-সহ এই ঘটনা নিয়ে একটি পোস্ট পাওয়া যায়। সেই পোস্ট অনুযায়ী, অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ভূমি পুজো উপলক্ষে খড়গপুরের তালবাগিচা এলাকায় একটি বিশেষ পুজোর আয়োজন করেছিল স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। ঘটনার খবর পেয়ে খড়গপুরের এসডিপিও-র সুকমল দাসের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী পুজো বন্ধ করতে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। সেই সময় বিজেপির তরফ থেকে পুলিশকে বাধা দেওয়া হয় ও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এতে জখম হন সুকমল দাস। 

অন্যদিকে, বিজেপি কর্মীদের তরফে অভিযোগ করা হয় পুলিশ প্রথমে তাদের উপরে লাঠিচার্জ করেছিল। এরপর পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ এক বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করে। তবে কেন পুলিশ তালবাগিচায় বিজেপির আয়োজিত পুজো বন্ধ করতে গিয়েছিল এই পোস্টে সেই তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।

এই সংক্রান্ত তথ্য জানতে একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করলে ২০২০ সালের ৬ আগস্ট আনন্দবাজার ডট কমে এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন উপেক্ষা করে তালবাগিচার রথতলায় পুজোর আয়োজন করেছিলেন বিজেপি কর্মীরা। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে বিজেপি কর্মীদের সতর্ক করার পরেও পুজো বন্ধ না করায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের নিয়ে আসার সময় পুলিশের দু’টি গাড়ি ঘেরাও করে ইট ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। তাতে চোট পেয়েছিলেন এসডিপিও সুকমল দাস-সহ কয়েকজন পুলিশ কর্মী। বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, পুলিশ সেখানে প্রথমে লাঠিচার্জ করেছিল।  

এর থেকে প্রমাণ হয় যে, করোনার সময় লকডাউন উপেক্ষা করে বিজেপি কর্মীদের আয়োজিত পুজো পুলিশের তরফে বন্ধ করে দেওয়ার ভিডিও বর্তমানে আসল প্রেক্ষাপট ছাড়াই সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যে পোস্ট করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর। 

Fact Check

Claim

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ কীভাবে রাজ্যের সাধারণ হিন্দুদের পুজো বন্ধ করে দিচ্ছে।

Conclusion

ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। বরং ২০২০ সালের ৫ আগস্ট খড়গপুরের তালবাগিচা এলাকার। সেই সময় করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন উপেক্ষা করে বিজেপি কর্মীদের তরফে পুজোর আয়োজন করা হলে তা বন্ধ করতে গিয়েছিল পুলিশ।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  1. কাক: অর্ধসত্য
  2. একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  3. অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Do you think a messenge is a fake ?
To know the truth, send that to our Number73 7000 7000 you can email on factcheck@intoday.com
Read more!
Advertisement
Advertisement