সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও। যেখানে প্রকাশ্য রাস্তার উপরে বেশ কয়েকজনের উপস্থিতিতে এক ব্যক্তির গায়ে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, মুসলিম সম্প্রদায়ের অপরাধীরা একজন জ্যান্ত মানুষকে আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “এই জেহাদীরা কত জঘন্য একটা জলজ্যান্ত মানুষকে কিভাবে আগুনে জ্বালিয়ে দিল দেখুন।” (সব বানান অপরিবর্তিত)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওর যুবকের নাম ফায়াজ আনসারি। তার গায়ে কেউ আগুন লাগিয়ে দেয়নি। বরং বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় উত্তর প্রদেশের বালিয়া জেলায় ফায়াজ তার প্রেমিকার বাড়ির সামনে নিজেই নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল দাবি ও ভিডিওটির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ ভাইরাল ভিডিওর একটি স্ক্রিনশট-সহ দ্য ফ্রি প্রেস জার্নালে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় উত্তর প্রদেশের বালিয়া জেলার ফেফানা থানার আমদরিয়া গ্রামে এক যুবক প্রেমিকার বাড়ির সামনে নিজেই নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
এরপর উক্ত সূত্র ধরে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে এই সংক্রান্ত একাধিক প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই সব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আহত যুবকের নাম ফায়াজ আনসারি। গত ২৭ মে সকালে ফায়াজ তার প্রেমিকার বাড়ির সামনে উপস্থিত হয়ে তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু প্রেমিকা তার বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সে সেখানেই সকলের সামনে নিজের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। স্থানীয়রা আগুন নিভিয়ে ফায়াজকে চিকিৎসার জন্য জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে বারাণসীর বিএইচইউ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে।
তবে আমরা আমাদের অনুসন্ধানে ভাইরাল ভিডিওর যুবক ফায়াজ আনসারির গায়ে কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে সংক্রান্ত এমন কোনও তথ্য বা প্রতিবেদন খুঁজে পাইনি। এরপর বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমরা ফেফানা থানার এসএইচও অজয় কুমার ত্রিপাঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, “ভাইরাল ভিডিওতে যে যুবককে দেখা যাচ্ছে তার নাম ফায়াজ আনসারি। তার গায়ে কেউ আগুন লাগিয়ে দেয়নি। বরং বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গত ২৭ মে ফায়াজ ফেফানা থানার আমদরিয়া গ্রামে তার প্রেমিকার বাড়ির সামনে নিজেই নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। পরবর্তীতে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে সে বারাণসীর বিএইচইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে এবং তার অবস্থা স্থিতিশীল।” পাশাপাশি অজয় কুমার ত্রিপাঠী আরও জানান, “ফায়াজ এবং তার প্রেমিকা উভয়ই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। তাই জিহাদীদের তরফে তাকে জ্যান্ত আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যে।” আজতকের বালিয়া জেলা সাংবাদিক অনিল গুপ্তাও আমাদের এই একই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, উত্তর প্রদেশের বালিয়া জেলায় যুবকের নিজেই নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ভিডিও মিথ্যে সাম্প্রদায়িকতার রং লাগিয়ে প্রচার।
ভিডিওতে জিহাদীদের তরফে একজন জ্যান্ত মানুষকে আগুনে জ্বালিয়ে দিতে দেখা যাচ্ছে।
ভাইরাল ভিডিওর যুবকের নাম ফায়াজ আনসারি। তার গায়ে কেউ আগুন লাগিয়ে দেয়নি। বরং বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় উত্তর প্রদেশের বালিয়া জেলায় ফায়াজ তার প্রেমিকার বাড়ির সামনে নিজেই নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল।