(প্রতিবেদনের কিছু দৃশ্য মানসিকভাবে বিচলিত করতে পারে)
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে প্রকাশ্য রাস্তার উপরে একজন পুলিশ কর্মীকে এক ব্যক্তির মাথায় গুলি করে হত্যা করতে এবং পরবর্তীতে দেহ ক্রেন থেকে ঝুলিয়ে রাখতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, দুবাইয়ে ৫ বছরের নাবালিকাকে ধর্ষণ করার ১৫ মিনিটের মধ্যে আদালত পুলিশকে এই ঘটনার প্রধান আসামীকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ প্রদান করেছে।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “দুবাইয়ে ৫-বছরের এক নাবালিকা ধর্ষনের শিকার হয়,15-মিনিটের মধ্যেই বিচার বিভাগ পুলিশকে ধর্ষণকারী'কে জনসমক্ষে গুলি করার নির্দেশ দেয়... এটাই ধর্ষিতার প্রতি ন্যায্য বিচার এবং ধর্ষকের উপযুক্ত শাস্তি বলে মনে করি।”
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি দুবাইয়ে নয় বরং ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ইয়েমেনের রাজধানী সানাতে তোলা হয়েছিল। পাশাপাশি, মাত্র ১৫ মিনেটের মধ্যে নয় বরং ৪ বছরের নাবালিকাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রায় ১ বছর ৮ মাস পর আসামীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেয় দেশটির শরিয়া আদালত। অন্যদিকে এক মাসের কম সময়েই এই বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
ভাইরাল ভিডিওর সত্যতা জানতে আমরা সেটি থেকে একাধিক স্ক্রিনশট নিয়ে সেগুলিকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তখন আমরা ২০১৭ সালের ১৪ আগস্ট স্টক ফটো ওয়েবসাইট gettyimages-এ ভাইরাল ভিডিও-র ১ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের ফ্রেমের সঙ্গে সাদৃশ্যযুক্ত একটি ছবি খুঁজে পাই। ছবিটি শেয়ার করে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই একই দিনে ইয়েমেনের রাজধানী সানার তাহরির স্কয়ারে চার বছর বয়সী এক নাবালিকাকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ২২ বছর বয়সী আসামী ইয়েমেনী হুসেইন আল-সাকেতের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর তার দেহ ঝুলিয়ে রাখে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
এরপর উক্ত সূত্র ধরে পরবর্তী সার্চ করলে ২০১৭ সালের ১৪ আগস্ট ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টে এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে সাদৃশ্যযুক্ত একটি ছবি-সহ উল্লেখ করা হয়েছে, ইয়েমেনের শরিয়া আদালতের বিচারক রাজেহ এজ্জেদিন এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছেন। পাশাপাশি তিনি নিশ্চিত করেছেন যে আল-সাকেতকে অপহরণ, ধর্ষণ এবং হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে সাকেতের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে পুলিশের তরফে তার মাথায় পাঁচ বার গুলি করা হয়। এই একই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে নিউ ইয়র্ক শহর পোস্টের একটি প্রতিবেদনেও।
এই সংক্রান্ত পরবর্তী অনুসন্ধানে ২০১৭ সালের ১৭ আগস্ট অপর এক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি মেলে ভাইরাল ভিডিওটি-সহ এই সংক্রান্ত একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে ইয়েমেনে চার বছর বয়সী সাফা আল-মাতারিকে অপহরণের পর প্রথমে তাকে ধর্ষণ ও পরে খুন করে আসামী ইয়েমেনী হুসেইন আল-সাকেত। যে মুহূর্তে সাফাকে অপহরণ করা হয় তখন তার মা আমাল আল-মাতারি তার ছোট ছেলেকে জন্ম দিচ্ছিলেন। ডেইলি মেলকে নির্যাতিতা নাবালিকা সাফার মা আমাল আল-মাতারি জানান, তার মেয়েকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রায় ১ বছর ৮ মাস পর অর্থাৎ ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে আসামী হুসেইন আল-সাকেতকে প্রকাশ্যে গুলি করে মৃত্যদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তবে আদালত এই বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এক মাসেরও কম সময় নিয়েছে।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, ইয়েমেনের পুরনো ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে দুবাইয়ে ধর্ষণের ১৫ মিনিটের মধ্যে অপরাধীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, দুবাইয়ে ৫ বছরের নাবালিকাকে ধর্ষণ করার ১৫ মিনিটের মধ্যে আদালত পুলিশকে এই ঘটনার প্রধান আসামীকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ প্রদান করেছে।
ভাইরাল ভিডিওটি দুবাইয়ে নয় বরং ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ইয়েমেনের রাজধানী সানার। পাশাপাশি মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে নয় বরং ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রায় ১ বছর ৮ মাস পর আসামীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়।