ভারতের প্রাচীন ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংগঠনের তরফে এই অভিযোগ তোলা হয়ে থাকে। তবে এইসব অভিযোগকে যেমন অনেকে সমর্থন করেন তেমনই আবার অনেকেই এর বিরোধীতাও করেন।
তবে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন করে ভাইরাল হয়েছে দেশের ইতিহাস বিকৃতি ও তাতে ভারত সরকারের শিক্ষামন্ত্রকের দায়িত্বে থাকা মুসলিম শিক্ষামন্ত্রীদের ভূমিকা নিয়ে একটি বিশেষ পোস্ট। যেখানে দাবি করা হচ্ছে যে, ভারত স্বাধীন হওয়ার পর অর্থাৎ ১৯৪৭ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দেশের সকল শিক্ষামন্ত্রীই ছিলেন মুসলিম ধর্মাবলম্বী। আর সেই কারণেই ভারতের ইতিহাস বিকৃত হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ছবিটি পোস্ট করে লিখেছেন, “কংগ্রেসের তুতিয়াগিরিতে রমেশ চন্দ্র মজুমদারের লেখা ইতিহাস ঠাঁই পায়নি, পেয়েছে ইরফান হাবিব, রোমিলা থাপাড় এর মত মানুষের বিকৃত তথ্য। আর জন্ম নিয়েছে কু**র সেকুলারদের দল।”
অপর এক ফেসবুক ব্যবহারকারী এই একই ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, “হিন্দু সমাজের মেরুদন্ড কংগ্রেস ভেঙেছে।” (সব ক্যাপশনের বানান অপরিবর্তিত।) এমনই একটি পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দেশে মোট ১০ জন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৫ জন ছিলেন মুসলিম ধর্মাবলম্বী। আর বাকি ৫ জন ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
ভাইরাল পোস্টের সত্যতা জানতে আমরা ভারত সরকারের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে এই সংক্রান্ত একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করি। এবং জানার চেষ্টা করি ১৯৪৭ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দেশের শিক্ষামন্ত্রীদের ধর্ম পরিচয় কী ছিল।
তখন আমরা আমাদের সার্চে শিক্ষা দপ্তরের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ১৯৪৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত দেশের শিক্ষামন্ত্রীদের একটি তালিকা খুঁজে পাই। সেই তালিকায় মন্ত্রীদের নামের পাশাপাশি তাদের সময়কালও উল্লেখ করা হয়েছে। সেখান থেকে আমরা জানতে পারি ১৯৪৭ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দেশের মোট ১০ জন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। আর এই ১০ জনের মধ্যে ৫ জন ছিলেন মুসলিম আর বাকি ৫ জন ছিলেন হিন্দু।
এই তালিকা অনুযায়ী ১৯৪৭ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দেশের মুসলিম ধর্মাবলম্বী শিক্ষামন্ত্রীদের নাম হল, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ (১৯৪৭-৫৮), হুমায়ুন কবীর (১৯৬৩ সালে মাত্র তিনমাসের জন্য শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তিনি), মহম্মদালি করিম চাগলা বা এম সি চাগলা (১৯৬৩-৬৬), ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ (১৯৬৬-১৯৬৭) ও প্রোফেসর এস নুরুল হাসান (১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ সাল)। নিচের ছবিতে মুসলিম ধর্মাবলম্বী শিক্ষামন্ত্রীদের নাম হাই-লাইট করা হল।
অন্যদিকে ওই তালিকা অনুযায়ী ১৯৪৭ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দেশের হিন্দু ধর্মের শিক্ষামন্ত্রীদের নাম হল, ডঃ কালু লাল শ্রীমালি বা ডঃ. কে এল শ্রীমালি (১৯৫৮-৬২ প্রতিমন্ত্রী এবং ১৯৬২-৬৩ পূর্ণমন্ত্রী), ডঃ ত্রিগুনা সেন (১৯৬৭-৬৯), ডঃ বিজয়েন্দ্র কস্তুরী রাঙ্গা ভারদারাজা রাও বা ডঃ ভি কে আর ভি রাও (১৯৬৯-৭১), সিদ্ধার্থ শংকর রায় (১৯৭১-৭২, বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী)। নিচের ছবিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষামন্ত্রীদের নাম হাই-লাইট করা হল।
শিক্ষামন্ত্রকের তালিকা অনুযায়ী ভারতের শেষ মুসলিম শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন প্রোফেসর এস নুরুল হাসান। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত মোট ২২ জন ভারতের শিক্ষাদপ্তরের মন্ত্রী হয়েছেন। তবে তাঁদের মধ্যে কেউ মুসলিম নন।
এর থেকেই প্রমাণ হয় যে, ‘১৯৪৭-১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দেশের সকল শিক্ষামন্ত্রীই মুসলিম ছিলেন’ দাবিটি মিথ্যে ও বিভ্রান্তিকর।
১৯৪৭-১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দেশের সকল শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন মুসলিম।
১৯৪৭-১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দেশে মোট ১০ জন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৫ জন ছিলেন মুসলিম আর বাকি ৫ জন ছিলেন হিন্দু।