পালা বদলের পর বাংলাদেশে ব্যপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে পেঁয়াজের দাম। মূলত বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের একটি বড় অংশ আসে ভারত, পাকিস্তান কিংবা তুরস্কের মত দেশ থেকে। কিন্তু সরকার পতনের পর সেই সব আমদানির অনেকটা বন্ধ হয়ে আছে। তাই কিছু মাস আগে পর্যন্ত বাংলাদেশে যে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৪০-৪৫ টাকা। সেই পেঁয়াজই এখন বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকা প্রতি কেজি।
আর এই সার্বিক পরিস্থিতর মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, বাংলাদেশে পেঁয়াজ আমদানি সংক্রান্ত একটি পোস্ট। যেখানে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম সময় টিভির একটি ভিডিও প্রতিবেদন শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, সম্প্রতি বাংলাদেশে সরকার পতনের পর পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আমদানিকৃত প্রতিটি পেঁয়াজের বস্তায় পাথর পাওয়া গেছে।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী সময় টিভির ওই ভিডিও প্রতিবেদনটি শেয়ার করে সেটির ফ্রেমের উপরে লিখেছেন, “পাকিস্তান থেকে কেনা পিঁয়াজের সাথে প্রতি এক বস্তায় তিন থেকে চার কেজি পাঁথর। পাকিস্তান আর আমরা ভাই ভাই তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নাই!!” ভিডিওটি শেয়ার করে তিনি ক্যাপশনে লিখেছেন, “এগুলো পাঁথর না এগুলো আমাদের জন্য পাঠানো শুভেচ্ছা বার্তা জানিয়েছে 😆পাকিস্তান আমাদের বন্ধু পেঁয়াজও খামু পাঁথরও খামু কোন কথা চলবে না!!” (ক্যাপশনের সব বানান অপরিবর্তিত।)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে, যে পেঁয়াজের বস্তাগুলিতে পাথর পাওয়া যায় সেগুলি পাকিস্তান থেকে নয় বরং ২০২১-এর নভেম্বর মাসে তুরস্ক থেকে আমদানি করা হয়েছিল।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
প্রথমত, ভাইরাল ভিডিও প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করার সময় আমরা সেখানে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম সময় টিভির লোগো দেখতে পাই। এরপর আমরা সেই সূত্র ধরে এই সংক্রান্ত একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করি। তখন আমরা ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর সময় টিভির অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে “ডলারে কেনা পেঁয়াজের বদলে আসছে পাথর” শিরোনামে এই একই প্রতিবেদনটি খুঁজে পাই। ভিডিওটি শেয়ার করে এর বিস্তারিত অংশ লেখা হয়েছে, “ডলারে কেনা পেঁয়াজের বদলে আসছে পাথর। মিশর ও তুরস্কসহ বিশ্বের নানা দেশ থেকে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকরা আনেন কোটি কোটি টাকার পেঁয়াজ। পরে পেঁয়াজের বস্তা খুলে মিলছে কিছু পাথরও। অপরদিকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে শতশত বস্তা পেঁয়াজ। এতে উভয় সংকটে পড়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। আশরাফুল আলম মামুনের ক্যামেরায় সফিকুল আলমের প্রতিবেদন।”
পাশাপাশি সময় টিভির ওই প্রতিবেদনের ৪২ সেকেণ্ডে প্রতিবেদক উল্লেখ করেছেন, ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন ১১টি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। তবে মূলত তুরস্ক থেকে আসা পেঁয়াজের বস্তাতেই এই পাথর পাওয়া যাচ্ছে। একই সঙ্গে ওই প্রতিবেদনের কোথাও পাকিস্তান থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজে পাথর পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়নি।
এই সংক্রান্ত পরবর্তী সার্চে অপর এক বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম নিউজ ২৪-এর অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে এই সংক্রান্ত অপর একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। “তুরস্ক থেকে আমদানি করা পেয়াঁজের বস্তায় মিলেছে বড় বড় পাথর” শীর্ষক সেই প্রতিবেদেনের বিস্তারিত অংশে উল্লেখ করা হয়েছে, “২৫ কেজির এক বস্তা পেয়াঁজে প্রায় অর্ধেকই মিলছে পাথর। আমদানী করা এমন পেয়াজের পরিমাণ প্রায় ৪০ টন। চট্টগ্রাম বন্দরে বড় বড় পাথরসহ বিপুল পরিমাণ এই পেয়াঁজ এসেছে তুরস্ক থেকে। ভোক্তা অধিকার সংগঠন-ক্যাব বলছে, আমদানির নামে মানি লন্ডারিং করতেই এমন কারসাজি কি না তা যথাযথভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষও বলছে, এই কারসাজি খতিয়ে দেখবেন তারা। আহাদুল ইসলাম বাবুর ক্যামেরায় নয়ন বড়ুয়া জয়কে সাথে নিয়ে আরো জানাচ্ছেন বাবু কামরুজ্জামান।”
এরপর আমরা পরবর্তী সার্চে সম্প্রতি পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আমদানিকৃত পেঁয়াজের বস্তায় পাথর পাওয়া গিয়েছে কিনা সেই সংক্রান্ত তথ্য খোঁজার চেষ্টা করি। কিন্তু আমাদের সার্চে এহেন কোনও তথ্য বা প্রমাণ পায়নি। পক্ষান্তরে আমরা গত ১ সেপ্টেম্বর অপর এক বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আমদানি সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “ভারতের পাশাপাশি পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে পাকিস্তানসহ আরও চারটি দেশ থেকে।” কিন্তু সেই পেঁয়াজে কোনও পাথর পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়নি।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, সম্প্রতি পাকিস্তান থেকে নয়, বরং ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে তুরস্ক থেকে থেকে বাংলাদেশে আমদানিকৃত পেঁয়াজের বস্তায় পাথর পাওয়া গিয়েছিল।
সম্প্রতি পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আমদানিকৃত পেঁয়াজের বস্তায় পাথর পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি পাকিস্তান থেকে নয়, বরং ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে তুরস্ক থেকে থেকে বাংলাদেশে আমদানিকৃত পেঁয়াজের বস্তায় পাথর পাওয়া গিয়েছিল।