Advertisement

ফ্যাক্ট চেক: ‘জয় ভীম’ স্লোগান দেওয়ায় উচ্চবর্ণের হিন্দুদের হাতে নিগৃহীত তিন দলিত যুবক? না, জানুন আসল ঘটনা

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে জাতিগত বৈষম্যের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং এতে চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল উত্তর প্রদেশের আলিগড় জেলার লোধা থানার চিকাবটী গ্রামে এক ছাত্রীকে লক্ষ্য করে অশ্লীল মন্তব্য করার অপরাধে তিন যুবককে বেধড়ক মারধর করে স্থানীয় পথচারীরা।

সুরাজউদ্দিন মণ্ডল
  • কলকাতা,
  • 28 Apr 2025,
  • अपडेटेड 3:10 PM IST

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে বেশকিছু মানুষকে  প্রকাশ্য রাস্তার উপর দুই যুবককে বেধড়ক মারধর করতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওর এক পর্যায়ে এক যুবকের শরীরের পোশাক খুলে তাকে উলঙ্গ করেও মারতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, কেবলমাত্র ‘জয় ভীম’ স্লোগান দেওয়ার জন্য উচ্চবর্ণের হিন্দুদের তরফে ওই দলিত যুবকদের নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “জয় ভীম বলার জন্য দলিতদের নির্মমভাবে মারছে কয়েকজন দেশদ্রোহী আতংকবাদী  'জয় ভীম' বলা কি অপরাধ?... আসলে, সত্য হল, বাবা সাহেব এবং সংবিধানের প্রতি বিরক্ত বিজেপি সরকার তার গুন্ডাদের মাধ্যমে তাঁর বংশধরদের উপর নির্যাতনের ষড়যন্ত্র করে এবং সংবিধানের ক্ষতি করার কোনও সুযোগই ছাড়ে না।” (বাানান অপরিবর্তিত)

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে জাতিগত বৈষম্যের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং এতে চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল উত্তর প্রদেশের আলিগড় জেলার লোধা থানার চিকাবটী গ্রামে এক ছাত্রীকে লক্ষ্য করে অশ্লীল মন্তব্য করার অপরাধে তিন যুবককে বেধড়ক মারধর করে স্থানীয় পথচারীরা।

আরও পড়ুন

সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে

ভাইরাল ভিডিও এবং দাবির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে সেগুলি গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৫ সালের ২৭ এপ্রিল একটি এক্স হ্যান্ডেলে এই একই ভিডিও-সহ একটি পোস্ট পাওয়া যায়। ভিডিওর ক্যাপশন অনুযায়ী, আলিগড়ে তিন যুবক এক নাবালিকা স্কুল ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের চেষ্টা করে। সেই সময় ওই ছাত্রী চিৎকার করলে কয়েক ডজন লোক এসে তাকে উদ্ধার করে এবং অভিযুক্তদের বেধড়ক মারধর করে। কিন্তু পরবর্তীতে মেয়েটির জন্য ন্যায়বিচার দাবি করার পরিবর্তে এই ঘটনাকে মিথ্যে জাতিগত বৈষম্যের রং লাগিয়ে শেয়ার করা হচ্ছে।

এরপর উক্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে কিওয়ার্ড সার্চ করলে ২০২৫ সালের ২৭ এপ্রিল ভাইরাল ভিডিওর স্ক্রিনশট-সহ ইন্ডিয়া টিভিতে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “উত্তর প্রদেশের আলিগড়ের লোধা থানার চিকাবটী গ্রামে তিন যুবক রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া এক ছাত্রীকে লক্ষ্য করে অশ্লীল মন্তব্যের পাশাপাশি তাকে উত্যক্ত করছিল। সেই সময় ছাত্রীটি চিৎকার করলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পথচারীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে ওই তিন অভিযুক্তকে আটক করে তাদের পোশাক খুলে মারধর করে। তবে অনেকেই এই ঘটনার একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করছে যে ‘জয় ভীম’ স্লোগান দেওয়ার জন্য ঠাকুর সম্প্রদায়ের লোকেরা দলিত যুবকদের মারধর করছে। তবে এই দাবিটি সঠিক নয়।” আরও একাধিক প্রতিবেদনেও এই একই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। 

Advertisement

অন্যদিকে গত ২৭ এপ্রিল দ্য ফ্রি প্রেস জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবদনে লেখা হয়েছে, “খবরে বলা হয়েছে যে ওই তিন যুবক দলিত ছিল এবং তারা ‘জয় ভীম’ স্লোগান দেওয়ার জন্য তাদের মারধর করা হয়েছিল। তবে ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করার পর জানায় যে, এই ঘটনার সঙ্গে কোনও জাতিগত বৈষম্যের সম্পর্ক নেই। বরং এক স্কুল ছাত্রীকে লক্ষ্য করে অশ্লীল মন্তব্য করার জন্য অভিযুক্ত যুবকদের নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছিল।”

পরবর্তী অনুসন্ধানে ২০২৫ সালের ২৭ এপ্রিল আলিগড় পুলিশের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে এই সংক্রান্ত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। সেখানে আলিগড় জেলা পুলিশের গাবনা সার্কেল অফিসার তথা ডিএসপি শ্রী সঞ্জীব কুমার তোমর এই একই তথ্য উল্লেখ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, “লোধা থানার চিকাবটী গ্রামে এক ছাত্রীকে লক্ষ্য করে অশ্লীল মন্তব্য করার অপরাধে ওই তিন যুবককে মারধর করে পথচারীরা। এই ঘটনার তদন্তে এখনও পর্যন্ত জাতপাত সম্পর্কিত কোনও বিষয় সামনে আসেনি।”   

এরপর বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে আমরা আলিগড় জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মৃগঙ্ক শেখর পাঠকের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, “ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে কোনও জাতিগত বৈষম্যের সম্পর্ক নেই। আসলে ওই তিন যুবককে ‘জয় ভীম’ স্লোগান দেওয়ার জন্য নয় বরং ইউটিউব শর্ট ভিডিও বানানোর জন্য তারা এক ছাত্রীকে লক্ষ্য করে অশ্লীল মন্তব্য করেছিল। মেয়েটি চিৎকার করলে সেই সময় সেখানে উপস্থিত পথচারীরা ওই তিন যুবককে বেধড়ক মারধর করে। আমরা ইতিমধ্যে এই ঘটনায় লোধা থানায় মোট দুটি অভিযোগ দায়ের করেছি। একটিতে ওই তিন যুবকের বিরুদ্ধে মহিলাদের শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যার এফআইআর নম্বর হল ১০৯/২০২৫। অন্যটিতে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৯৬/৩৫৩(২) ও ৩৫২ ধারা অনুযায়ী যারা ‘জয় ভীম’ স্লোগান দেওয়ার জন্য ওই তিন যুবককে মারধর করা হয়েছিল বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেক নিউজ ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এর এফআইআর নম্বর হল ১১০/২০২৫।” আজতকের আলিগড় জেলা সাংবাদিক মোঃ অকরম খানও আমাদের এই একই তথ্য জানিয়েছেন। অন্যদিকে আলিগড় জেলা পুলিশ এই সংক্রান্ত দুটি এফআইআর কপিই আমাদের পাঠিয়েছে।

এর থেকে প্রমাণ হয় যে, ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টায় অভিযুক্ত যুবকদেরকে মারধরের ভিডিও মিথ্যে জাতিগত বৈষম্যের রং লাগিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে।

Fact Check

Claim

ভিডিওতে কেবলমাত্র ‘জয় ভীম’ স্লোগান দেওয়ার জন্য উচ্চবর্ণের হিন্দুদের তরফে দলিত যুবকদের নির্মমভাবে মারধর করার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।

Conclusion

ভিডিওটির সঙ্গে জাতিগত বৈষম্যের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং ২০২৫ সালের ২৬ এপ্রিল উত্তর প্রদেশের আলিগড় জেলার লোধা থানার চিকাবটী গ্রামে এক ছাত্রীকে লক্ষ্য করে অশ্লীল মন্তব্য করার অভিযোগে তিন যুবককে বেধড়ক মারধর সেখানে উপস্থিত পথচারীরা।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  1. কাক: অর্ধসত্য
  2. একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  3. অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Do you think a messenge is a fake ?
To know the truth, send that to our Number73 7000 7000 you can email on factcheck@intoday.com
Read more!
Advertisement
Advertisement