Advertisement

ফ্যাক্ট চেক: হুগলিতে লকেটকে মহিলাদের ‘বাধা’! ভাইরাল ভিডিয়োটি প্রায় ৭ বছরের পুরনো

সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, নিজের অঞ্চল থেকেই লকেট চট্টোপাধ্যায়কে তাড়িয়ে দিচ্ছেন গ্রামবাসীরা। ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, কোথাও যাওয়ার উদ্দেশ্যে নৌকা থেকে নামার চেষ্টা করছেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে আছেন আরও অনেক বিজেপি কর্মী। কিন্তু তাঁদের নৌকা থেকে নামতে বাধা দিচ্ছেন স্থানীয় কিছু মহিলা।

ঋদ্ধীশ দত্ত
  • কলকাতা,
  • 02 Apr 2024,
  • अपडेटेड 6:34 PM IST

সুরাজউদ্দিন মণ্ডল: এবারের নির্বাচনে হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে একে অপরের মুখোমুখি বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এক সময়ের দুই সহকর্মী লকেট চট্টোপাধ্যায় ও রচনা ব্যানার্জি। নাম ঘোষণা হতেই তাঁদের দু-জনকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও ভাইরাল হয়েছে একাধিক পোস্ট। এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, নিজের অঞ্চল থেকেই লকেট চট্টোপাধ্যায়কে তাড়িয়ে দিচ্ছেন গ্রামবাসীরা। আর যে ভিডিয়োটি পোস্টে করা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, কোথাও যাওয়ার উদ্দেশ্যে নৌকা থেকে নামার চেষ্টা করছেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে আছেন আরও অনেক বিজেপি কর্মী। কিন্তু তাঁদের নৌকা থেকে নামতে বাধা দিচ্ছেন স্থানীয় কিছু মহিলা।

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিয়োটি পোস্ট করে ফ্রেমের মধ্যে লিখেছেন, “নিজের অঞ্চলেই দুর দুর করে লকেট চট্টোপাধ্যায়কে তারিয়ে দিলো গ্রামবাসীরা। জাগ্রতা জনতা।” ক্যাপশনের সব বানান অপরিবর্তিত। পাশাপাশি এমনই একটি পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে। তবে ভাইরাল পোস্টে সরাসরি উল্লেখ না করা হলেও এটা ইঙ্গিত করার চেষ্টা করা হয়েছে, লোকসভা ভোট প্রচারে গিয়ে নিজের এলাকা অর্থাৎ হুগলি লোকসভা কেন্দ্র এলাকা স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়েছেন লকেট।

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বিক্ষোভের মুখে পড়া ভাইরাল ভিডিয়োটি ২০১৭ সালের অগস্ট মাসের। এবং ভিডিয়োটি তার নিজের এলাকা হুগলির নয়, বরং সন্দেশখালির।

আরও পড়ুন

কীভাবে জানা গেল সত্য?

প্রথমত, লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মতো হেভিওয়েট তথা তারকা বিজেপি প্রার্থী সম্প্রতিক সময়ে লোকসভা ভোট প্রচারে গিয়ে কোনও বাধা বা বিক্ষোভের মুখে পড়লে সেই সংক্রান্ত খবর অবশ্যই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হত। কিন্তু আমরা আমাদের কিওয়ার্ড সার্চে এমন কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য বা প্রতিবেদন পাইনি যা থেকে প্রমাণ হয় যে, লকেট চট্টোপাধ্যায়কে তাঁর এলাকায় ভোট প্রচারে বাধা দেওয়া হয়েছে বা তাঁকে নৌকা থেকে নামতে দেওয়া হয়নি।

কিওয়ার্ড সার্চ করার সময় অবশ্য আমরা ২০১৯ সালের ১৪ এপ্রিল এই একই ভিডিয়ো ‘মমতা ব্যানার্জি সাপোর্টারস’ নামক একটি ফেসবুক পেজেও দেখতে পাই। সেই ভিডিয়োর ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “মার ঝাড়ু মার ঝাড়ু মেরে। ঝেটিয়ে বিজেপিকে বিদায় কর।” পাশাপাশি ভিডিয়োটির ফ্রেমে লেখা হয়েছে, “বিজেপির প্রচারে গেলে বিজেপির মহিলা মোর্চার সভাপতি লকেট চ্যাটার্জীকে গ্রামের মহিলারা দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল। বাংলার মানুষ আপনাদের চিনে গেছে বিজেপি; এই মাটিতে আপনাদের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চলবে না।” যা থেকে স্পষ্ট ভাইরাল ভিডিয়োটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। এবং এর সঙ্গে ২০২৪-এর লোকসভা ভোট প্রচারের কোনও সম্পর্ক নেই।

Advertisement

তবে ভাইরাল ভিডোয়োতে লকেট চট্টোপাধ্যায়কে বলতে শোনা যাচ্ছে, “আসব না, তোমরা শুধু দেখো বিচার যেন হয়।” এখানে লকেট কীসের বা কাদের বিচারের হওয়ার কথা বলছেন এবং তিনি কোথায় যাওয়ার জন্য নৌকায় চড়েছিলেন সেই সংক্রান্ত তথ্য জানতেও আমরা বিভিন্ন কিওয়ার্ড ও ভাইরাল ভিডিয়োর কী-ফ্রেম সার্চের আশ্রয় গ্রহণ করি। তখন আমরা ২০১৭ সালের ৩ অগস্ট এবিপি আনন্দ ডিজিটাল এবং এবিপি আনন্দের ইউটিউব চ্যানেলে এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদ ও একটি ভিডিয়ো খুঁজে পাই। 

সেই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ধর্ষণের মাসখানেক পর ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই কলকাতার হাসপাতালে মারা যান সন্দেশখালির বছর বাষট্টির এক বৃদ্ধা। মৃতার পরিবারের সঙ্গেই দেখা করতে ৩ অগস্ট দুপুরে ধামাখালি ঘাট থেকে নৌকায় করে সন্দেশখালি ঘাটে যান লকেট চট্টোপাধ্যায়। সেখানে নৌকা থেকে নামার পরই স্থানীয় মহিলারা তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। এর পরই কিছুক্ষণ বিক্ষোভকারীদের বোঝানের চেষ্টা করেন বিজেপি নেত্রী। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তাঁর কথা না শোনায় বাধ্য হয়ে ফিরে আসেন তিনি। 

২০১৭ সালের ৩ অগস্ট এই একই তথ্য প্রকাশিত হয় আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইনেও। সেখানে লেখা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্দেশখালির মৃতা বৃদ্ধার বাড়িতে যেতে চেয়েছিলেন লকেট। কিন্তু, নৌকা থেকে নামার আগেই ঘাটে প্রচুর মহিলা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তিনি নামতেই পারেননি। পরে নদীর উল্টো পাড়ে নামেন। সেখানেও তখন তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ। পাশাপাশি আনন্দবাজার পত্রিকার ইউটিউব পেজেও আমরা এই খবর সম্পর্কিত একাধিক ভিডিয়ো দেখতে পাই।

এর পরেই আমরা এবিপি আনন্দ এবং আনন্দবাজার পত্রিকায় ব্যবহৃত ছবি ও  ভিডিয়োর সঙ্গে ভাইরাল ভিডিয়োকে পাশাপাশি রেখে তুলনা করি। তখন আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় ভাইরাল ভিডিয়োটি ২০১৭ সালের ৩ অগস্ট সন্দেশখালিতে রেকর্ড করা হয়েছিল। কারণ এবিপি আনন্দ  ও আনন্দবাজার পত্রিকায় ব্যবহৃত ভিডিয়ো বা ছবিতে লকেট চট্টোপাধ্যায় যে শাড়ি পরে আছেন ভাইরাল ভিডিয়োতেও তাকে সেই একই শাড়ি পরে থাকতে দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, ভাইরাল ভিডিয়োতে লকেটের পাশে যারা ছিলেন এবং লকেটকে দেখে যারা বিক্ষোভ করছেন তাদের অনেকেই একই পোশাকে এবিপি আনন্দ  ও আনন্দবাজার পত্রিকায় ব্যবহৃত ভিডিয়ো বা ছবিতেও দেখা গেছে। একই সঙ্গে উভয় ভিডিয়োর ব্যাকগ্রাউন্ডেও হুবাহু মিল লক্ষ্য করা গেছে।

এর থেকেই প্রমাণ হয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ভিডিয়োটি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, নিজের অঞ্চল থেকেই লকেট চট্টোপাধ্যায়কে তাড়িয়ে দিচ্ছেন গ্রামবাসীরা। সেটি ২০১৭ সালের ৩ অগস্ট সন্দেশখালিতে তোলা হয়েছিল। এই ভিডিয়োর সঙ্গে লকেটের নিজের এলাকা হুগলির ও লোকসভা ভোট প্রচারের কোনও সম্পর্ক নেই।

Fact Check

Claim

নিজের অঞ্চল থেকেই লকেট চট্টোপাধ্যায়কে তাড়িয়ে দিচ্ছেন গ্রামবাসীরা।

Conclusion

সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ভিডিয়োটি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, নিজের অঞ্চল থেকেই লকেট চট্টোপাধ্যায়কে তাড়িয়ে দিচ্ছেন গ্রামবাসীরা। সেটি ২০১৭ সালের ৩ অগস্ট সন্দেশখালিতে তোলা হয়েছিল। এই ভিডিয়োর সঙ্গে লকেটের নিজের এলাকা হুগলির ও লোকসভা ভোট প্রচারের কোনও সম্পর্ক নেই।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  1. কাক: অর্ধসত্য
  2. একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  3. অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Do you think a messenge is a fake ?
To know the truth, send that to our Number73 7000 7000 you can email on factcheck@intoday.com
Read more!
Advertisement
Advertisement