দিনকয়েক আগেই বাংলাদেশের পদ্মাসেতু উদ্বোধন হয়েছে। আর তার কয়েকদিনের মাথায় মহারাষ্ট্রের নাগপুর শহরে উন্মোচিত হয়েছে দেশের একটি ডবল ডেকার সেতু। এর বিশেষত্ব হল, একই পিলারের উপর তৈরি হওয়া দোতলা সেতুর একটি দিয়ে যানবাহন, অপরটি দিয়ে মেট্রো চলাচল করতে পারবে।
এই নব নির্মিত সেতু নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় এবার একটি পোস্ট বেশ ভাইরাল হয়েছে। সেই পোস্টে দাবি করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশের পদ্মাসেতুর থেকেও দীর্ঘতম সেতু তৈরি করে ভারত এই রেকর্ড গড়েছে।
জনৈক ফেসবুক ব্যবহারকারী একটি পোস্টকার্ড শেয়ার করেছেন যাতে লেখা রয়েছে, বিশ্ব রেকর্ডে ভারত। "বাংলাদেশের পদ্মাসেতুর চেয়েও দীর্ঘতম সেতুর জন্য রেকর্ড গড়ল ভারত, নাগপুরের ডবল ডেকার সেতু, বিশ্ব রেকর্ডের তালিকায় ভারতের নাম নথিভুক্ত হল, প্রতিটি ভারতবাসীর জন্য গর্বের খবর।"
ইন্ডিয়া টুডে অ্যান্টি ফেক নিউজ ওয়ার রুম (আফয়া) অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল পোস্টের দাবিটি বিভ্রান্তিকর। নাগপুরের ডবল ডেকার ব্রিজ বিশ্বরেকর্ডে নথিভুক্ত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু দৈর্ঘ্যের নিরিখে পদ্মাসেতুকে ছাপিয়ে যাওয়ার জন্য নয়। বরং অন্য একটি কারণে।
আফয়া তদন্ত
সবার প্রথম আমরা কিছু কিওয়ার্ডের মাধ্যমে খোঁজার চেষ্টা ঠিক কী কারণে নাগপুরের ডবল ডেকার ব্রিজ রেকর্ডের পাতায় নাম লিখিয়েছে।
কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আমরা জি বিজনেসের একটি রিপোর্ট খুঁজে পাই। সেই রিপোর্টে লেখা হয় যে, একটি কলামের উপর দীর্ঘতম হাইওয়ে ফ্লাইওভার ও মেট্রো রেলের লাইন বানিয়ে বিশ্বরেকর্ড বানিয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ডবল ডেকার ব্রিজের দৈর্ঘ্য হল ৩.১৪ কিলোমিটার।
আমরা কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নীতিন গড়করির একটি টুইটও খুঁজে পাই। সেই টুইটে তিনি বিশ্বরেকর্ডের কথা উল্লেখ করে লেখেন, নাগপুরের এই সেতু একক পিলারের উপর ৩.১৪ কিলোমিটার বিস্তৃত ডবল ডেকার ব্রিজ যার উপর হাইওয়ে ও মেট্রো লাইন রয়েছে, এবং এহেন ব্রিজ হিসেবে এর দৈর্ঘ্য সবথেকে বেশি হওয়ায় তা বিশ্বরেকর্ডে জায়গা করে নিয়েছে।
সরকারি ওয়েবসাইট পিআইবি-র প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেও এই একই কথা উল্লেখ করা হয়। যদিও কোথাও-ই পদ্মা সেতু থেকে দীর্ঘতম হওয়ার জন্য ভারত রেকর্ড গড়েছে, এমন কোনও কথা লেখা ছিল না।
সত্যিই কি পদ্মার চেয়েও দীর্ঘ নাগপুরের ডবল ডেকার ব্রিজ?
সরকারি ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যে আমরা জানতে পারি যে নাগপুরের ডবল ডেকার ব্রিজের দৈর্ঘ্য ৩.১৪ কিলোমিটার। অন্যদিকে, একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা সেতুর জলের উপরে থাকা অংশটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার, যা নাগপুরের ডবল ডেকার ব্রিজের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
অর্থাৎ, একটা বিষয় এর থেকে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে নাগপুরের ডবল ডেকার সেতুর বিশ্বরেকর্ডের সঙ্গে পদ্মা সেতুর কোনও সংযোগ নেই। নাগপুরের ডবল ডেকার ব্রিজ হাইওয়ে ও মেট্রো লাইন একসঙ্গে হওয়ার কারণে রেকর্ড বইতে জায়গা করেছে। অন্যদিনে, পদ্মাসেতুর ক্ষেত্রে নীচে রেল লাইন ও উপরে রাস্তা রয়েছে। সুতরাং, এই দুই-য়ের তুলনাই চলে না।
পরিশেষে এ কথা বলাই যায় যে ভাইরাল পোস্টটি বিভ্রান্তিকর দাবির সঙ্গে শেয়ার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের পদ্মাসেতুর চেয়েও দীর্ঘতম, নাগপুরের ডবল ডেকার সেতুর জন্য বিশ্বরেকর্ড গড়ল ভারত।
নাগপুরের ডবল ডেকার সেতু বিশ্বরেকর্ড গড়েছে একই পিলারের উপর হাইওয়ে ও মেট্রো লাইনের দীর্ঘতম রাস্তা গড়ে। এর সঙ্গে পদ্মাসেতুর কোনও সম্পর্ক নেই।