সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে যেখানে একটি মাঠে এক মহিলাকে কিছু পুলিশ কর্মীদের দ্বারা নির্যাতন করতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে যে এই ঘটনাটি উত্তর প্রদেশের। ভিডিওটির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী এবং যোগী আদিত্যনাথের একটি ছবিও জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “অন্ধভক্তগণেরা দেখুন উত্তর প্রদেশ, মোদীজির বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও চলছে চলবে!”
খানিকটা অস্পষ্ট ও ঝাপসা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি মাঠের ধারে কয়েকজন পুলিশকর্মী এক মহিলার সঙ্গে শারীরিক ধ্বস্তাধ্বস্তিতে জড়িয়ে পড়েছেন। লোকজন ভিডিও করার উদ্দেশ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছলেই পুলিশ পাশে থাকা গাড়িতে উঠে পড়ে।
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল ভিডিওটি উত্তর প্রদেশে ঘটা কোনও ঘটনা নয়। এটি গত সেপ্টেম্বর মাসে রাজস্থানে ঘটেছিল।
সত্য উন্মোচন
ভাইরাল ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে তা রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খোঁজা হলে ওই একই ভিডিও-র ফ্রেম-সহ প্রতিবেদন পাওয়া যায় দৈনিক ভাস্কর ইংরেজির একটি প্রতিবেদনে। চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত এই খবরে লেখা হয়, ঘটনাটি রাজস্থানের দিদওয়ানা জেলায় ঘটেছিল।
খবর অনুযায়ী, এই ঘটনায় এক পুলিশের অ্যাসিন্টেন্ট সাব ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়েছিল। কারণ ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল যে তিনি এক মহিলার সঙ্গে মারধর করেছেন, গলা টিপেছেন এবং গালিগালাজ করেছেন। অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর পুলিশ সুপার অভিযুক্ত পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেন।
এই বিষয়ে আরও সার্চ করা হলে NDTV রাজস্থানের ইউটিউব চ্যানেলে ওই একই ঘটনার ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিও প্রতিবেদনে বলা হয়, আক্রান্ত পরিবার দলিত ছিল। ৭ সেপ্টেম্বর গোটা ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন এএসআই বিনোদ কুমার-সহ চার পুলিশকর্মী চম্পালাল মেঘওয়াল নামে এক ব্যক্তির বাড়ি পৌঁছন। চম্পালালের অভিযোগ ছিল, একটি জমি সংক্রান্ত মামলায় পুলিশ তার পরিবারকে নিশানায় নিয়েছিল। এই বিষয় নিয়ে ১৭ অগস্ট তিনি মারকানা থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করেছিলেন।
সেই সূত্রে ৭ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টা নাগাদ পুলিশ চম্পালাল মেঘওয়ালের বাড়িতে আসে। চম্পালালের দাবি অনুযায়ী, এরপর তাঁকে, তাঁর ভাই গোপাল ও হনুমান, স্ত্রী কিরণ এবং আত্মীয় মুকেশকে জোর করে পুলিশের গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে। সেই সময় চম্পালালের স্ত্রী বাধা দিতে এলে এএসআই তাকে ঘুষি মারেন, লাঠি দিয়ে মারেন, গলা টিপে ধরেন এবং গালিগালাজ করেন। হামলার পর মহিলার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়।
এই ঘটনার ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর চম্পালাল দাবি করেন যে পুলিশ ভিডিওটি ডিলিট করার জন্য চাপ দিচ্ছে এবং অস্বীকার তাদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া-সহ বেশ কয়েকটি মামলা দায়েরের হুমকি দিয়েছে।
অর্থাৎ বুঝতে বাকি থাকছে না যে এক রাজস্থানের একটি ঘটনার ভিডিওকে বর্তমানে উত্তর প্রদেশের ঘটনা বলে শেয়ার করা হচ্ছে। যা অর্ধসত্য।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে উত্তর প্রদেশে কীভাবে বেটি পড়াও বেটি বাঁচাও চলছে।
এই ঘটনাটি উত্তর প্রদেশের নয় বরং রাজস্থানের দিদওয়ানা জেলার। গত ৭ সেপ্টেম্বর পুলিশের এক এএসআই এক দলিত পরিবারের স্ত্রীকে এভাবে মারধর করেন।