গভীর নিম্নচাপ আর তার প্রভাবে সকাল থেকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি। ফলস্বরূপ জলমগ্ন কলকাতা। কসবা টু কাঁকুরগাড়ি, টালা টু টালিগঞ্জ, জল থইথই গোটা শহর। কোথাও হাঁটুজল তো কোথাও আবার গাড়ি-বাইক ডুবে যাচ্ছে জমা জলে। অফিসযাত্রীদের নাকাল অবস্থা। স্কুল-কলেজ পৌঁছতেও নাভিঃশ্বাস উঠছে পড়ুয়াদের।
মঙ্গলবার ভোর থেকে আকাশের মুখ ভার। কালো ঘন মেঘে ঢাকা আকাশ। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমেছে শহরে। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের গভীর নিম্নচাপ দুর্যোগ ডেকে এনেছে কলকাতায়। আপাতত দুর্যোগ কমার কোনও নামগন্ধ নেই। এখনও দিনভর চলবে বৃষ্টি। গত ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণবঙ্গে গড়ে ১৯.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা স্বাভাবিকের থেকে বেশি। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস, মঙ্গলবার বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাতেও ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস। সঙ্গে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে।
এখনও পর্যন্ত কলকাতার কোথায়-কত বৃষ্টি হয়েছে? কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, আলিপুরে ৪৫ মিলিমিটার, কাঁকুড়গাছিতে ৮০ মিলিমিটার, সল্টলেক/নিউ টাউনে ৮৮ মিলিমিটার, ব্যারাকপুরে ৯৩ মিলিমিটার, উত্তর কলকাতার শ্যামবাজারে ৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে সকাল ৮টা পর্যন্ত।
প্রবল বৃষ্টি হয়েছে মানিকতলায়। ভারী বর্ষণে ডুবেছে উল্টোডাঙ্গা ফ্লাইওভারের নীচের রাস্তা। হাঁটুজল আমহার্স্ট স্ট্রিটে। হাঁটু জল ঠনঠনিয়াতেও। মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটে ফুটপাথ জলের তলায় চলে গিয়েছে। জলে ডুবে গিয়েছে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ রামমন্দির এলাকাও।
প্রবল বৃষ্টিতে ট্রেন লাইনেও জল জমেছে। বেলঘরিয়া ডাউন ২ নম্বর লাইনে জল জমে রয়েছে। অন্য লাইনে ধীর গতিতে ট্রেন চলছে। টিটাগর ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম এলাকা জলমগ্ন। অন্য প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ধীর গতিতে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। বারাসতে ১ নম্বর লাইন জলমগ্ন। ওই শাখাতেও অত্যন্ত ধীর গতিতে ট্রেন চলছে।
ব্যারাকপুর স্টেশনে লাইনের উপর জমে রয়েছে জল। খুব ধীর গতিতে ট্রেন চলছে। হাবড়া শাখায় গুমা স্টেশনে দুটি লাইন জলমগ্ন। ট্রেন পরিষেবা আংশিক বিঘ্নিত হয়েছে। ব্যারাকপুর স্টেশনে পাম্প চালিয়ে জল বের করা হচ্ছে। জলে ডুবেছে যাদবপুরের বিস্তীর্ণ এলাকাও।
ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছিলেন, নাগাড়ে বৃষ্টি না হলে ৪ ঘণ্টার মধ্যেই জল নেমে যাবে শহরে। সেই মতো কলকাতা পুরসভার আধিকারিকরা সর্বক্ষণ নজরদারি চালাচ্ছেন শহরের জমা জল পরিস্থিতির। অতিরিক্ত জমা জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করছেন। কিন্তু একটানা বৃষ্টিতে সেই কাজ বারবার বাধার মুখে পড়ছে। দক্ষিণে রাসবিহারী, বেহালা, শিলপাড়া, সখেরবাজার, গল্ফগ্রিন, কসবা, বালিগঞ্জ থেকে উত্তরে ঠনঠনিয়া, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, উল্টোডাঙা সর্বত্রই জল থইথই। বাস, ট্রাম, ট্যাক্সি চলাচলে সমস্যা। ফলে কাজে বেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে অনেকটা দেরি হচ্ছে নিত্যযাত্রীদের। ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তারা।
শিয়ালদহ উত্তর ও দক্ষিণ শাখার রেললাইনের একটা বড় অংশ ডুবেছে জলে। যার জেরে ট্রেন চলাচল সকাল থেকেই ব্যাহত। একদিকে বারাকপুর, টিটাগড়, অন্যদিকে ডায়মন্ড হারবার, ক্যানিং লাইনে ট্রেন চলছে অতি ধীর গতিতে। রেলের তরফে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হয়েছে।
ফিয়ার্স লেন, বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, নর্থ পোর্ট থানা লাগোয়া এলাকা-সহ বেশ কিছু জায়গা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। কাঁকুড়গাছি, পাতিপুকুর এবং উল্টোডাঙা আন্ডারপাসেও জল জমেছে। কোথাও কোথাও গোড়ালি অবধি, তো কোথাও হাঁটুর কাছাকাছি পর্যন্ত জল জমতে শুরু করেছে বলে কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর। প্রবল বৃষ্টির ফলে ঠনঠনিয়া, কলেজ স্ট্রিট, বৌবাজারের একাংশ থেকে শুরু করে বেহালা, গার্ডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজ সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জল জমেছে। এই সব এলাকা থেকে জল বার করার চেষ্টাও শুরু হয়েছে। তবে যেহেতু অনেকক্ষণ ধরে বৃষ্টি হচ্ছে, তাই জল নামতে দেরি হচ্ছে।
শিয়ালদহ মেইন শাখাতেও কিছু জায়গায় লাইনে জল জমতে শুরু করেছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা যাচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে বেশ কিছু ট্রেন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কিছুটা দেরিতে চলাচল করছে বলে খবর। ফলে সকালের বৃষ্টির দুর্ভোগের মধ্যে সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে অফিসযাত্রীদের।