সোমবার ২১ জুলাই ধর্মতলায় তৃণমূলের শহিদ দিবসের সমাবেশ হবে। তার আগে রবিবার সমাবেশের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে আসেন তৃণমূল সুপ্রিমো ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে সভামঞ্চ ও অন্য জায়গায় পরিদর্শন করেন তিনি। কথা বলেন, দায়িত্বে থাকা নেতা ও মন্ত্রীদের সঙ্গে। পরে খানিকক্ষণ বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বক্তব্যে, একযোগে, বাম ও বিজেপিকে আক্রমণ শানান। সিপিএমের আমলে রাজ্যে গণতন্ত্র ছিল না বলেও দাবি করেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'লক্ষাধিক মানুষ এসেছেন। অতিবৃষ্টির কারণে অনেক অঞ্চল প্লাবিত। তবে, শেকড়ের টানে, শহিদদের টানে, শহিদ তর্পণে তাঁরা এসেছেন। আজকে যে গণতন্ত্র যে দেখতে পাচ্ছেন, সেটা সিপিএমের আমলে ছিল না। আগে মানুষ ভোট দিতে পারত না। সমস্ত বিল্ডিংয়ে তালা দিয়ে রাখা হত। গ্রামেও কাউকে ভোট দিতে দিত না। এই অবস্থায় আমাদের বিরাট আন্দোলন হয়েছিল। সেই আন্দোলনকে রুখতে গিয়ে পুলিশ গুলি চালিয়েছিল। ১৩ জন স্পটে মারা গিয়েছিলেন। ২০০ জনের মতো মানুষ আহত হয়েছিলেন। ১৫০ জন শুধু পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছিলেন।'
শহিদ দিবসের তাৎপর্য বোঝাতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'দাবি ছিল নৌ আইডি, নো ভোট। টিএন সেশন নির্বাচন কমিশনার হওয়ার পরে মানুষ ভোট দেওয়ার অধিকার ফিরে পায়। অনেক লড়াই, সংগ্রাম, জীবন যুদ্ধের কাহিনি আজও ছড়িয়ে আছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যে কাউকে ভোট দিতে দেয় না। সিপিএমের আমলে সবাই দেখেছেন। আর আজকে টিভি-তে বসে বড় ভাষণ দিচ্ছে। লড়াইটা লড়েছিল আমাদের সহকর্মীরা মাঠে ময়দানে। সমস্ত শহিদদের স্মরণে মা মাটি দিবস, গণতন্ত্র দিবস পালন করি আমরা।'
তৃণমূলের ২১ জুলাই সমাবেশের কারণে মধ্য কলকাতায় যানজট তৈরি বলে অভিযোগ ওঠে। এছাড়াও ধর্মতলায় কেন একটি দলকেই রাজনৈতিক কর্মসূচি করার অনুমতি দেওয়া হয়, এই প্রশ্ন তুলে আদালতে মামলা হয়েছিল। সেই মামলার শুনানি হয় বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে। কলকাতার রাস্তা বন্ধ করে, যানজট করে, বাস তুলে নিয়ে একুশে জুলাই করা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এমনকি ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনেও একুশে জুলাইয়ের সভা ভবিষ্যতে আর হবে কি না তা নিয়ে শুনানি হবে বলেও জানান বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। শাসকদল ও পুলিশকে ২১ জুলাই শহরে যানজট যাতে না হয় তার মুচলেকা দিতে হবে বলেও নির্দেশ দেন বিচারপতি। কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে মুচলেকা দেওয়ার নির্দেশ দেন। সওয়াল শেষ তৃণমূলের একুশে জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশ নিয়ে শর্ত চাপায় কলকাতা হাইকোর্ট। বেশ কয়েকটি নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে শহরে যাতে যানজট না হয় সেই বিষয়েই নির্দেশগুলি দেওয়া হয়েছে। ৮টা থেকে হেঁটে মিছিল করে আসা যাবে ধর্মতলায় সমাবেশ স্থলে। অর্থাৎ অফিস টাইমের আগেই যাতে তৃণমূলের মিছিলগুলি যাতে সমাবেশ স্থলে চলে আসে তারই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি কোনও মিছিল ৯টার আগে সমাবেশস্থলে পৌঁছতে না পারে, তাহলে যে জায়গায় মিছিল থাকবে সেখানেই মিছিল দাঁড় করিয়ে দিতে হবে।
এনিয়ে রবিবার জবাব দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, '৩৩ বছর ধরে এই জায়গায় প্রেগ্রাম হয়। এখানেই অনেকে লুটিয়ে পড়েছিলেন। প্রাণ চলে গিয়েছিল অনেকের। রক্তের বন্যা বয়ে গিয়েছিল। অনেকের এটাও নিয়েও আপত্তি আছে। নবান্ন অভিযান করলে আমাদের তো আপত্তি থাকে না। আমরা তো পাল্টা প্রোগ্রাম করি না। কথায় কথায় চোর ডাকাত বলা, মুখের কোনও ভাষা নেই। বাংলা ভাষীদের ওপরে অত্যাচার চালাচ্ছে। বাংলা ভাষায় কথা বললেই জেলে পুরে দিতে হবে নাকি। ২১ জুলাই চিরকাল চলবে, কোনওদিন বন্ধ হবে না।'