বাণিজ্যিক যানবাহনের ফিটনেস সার্টিফিকেট জালিয়াতি রুখতে কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে রাজ্য সরকার। পরিবহন দফতরের সাম্প্রতিক তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। কলকাতা ও সংলগ্ন জেলার ৬ হাজারেরও বেশি বাণিজ্যিক যানবাহন জাল ফিটনেস সার্টিফিকেটেই চলছে বলে অভিযোগ।
এই যানবাহনগুলোর মালিকরা বাংলার বাইরে, বিশেষ করে বিহার, রাজস্থান, গুজরাত ও মধ্যপ্রদেশের বেসরকারি পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে ফিটনেস সার্টিফিকেট পেয়েছেন। অথচ তাদের গাড়িগুলি সেসব রাজ্যে আদৌ গিয়েছে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
তদন্তের সূত্রপাত একটি অটোরিকশা থেকে
হাওড়ায় এক ট্রাফিক পুলিশ কর্মীর তৎপরতায় পুরো বিষয়টি প্রথম সামনে আসে। তিনি রাস্তায় একটি অচল অটোরিকশা দেখতে পান। এবং কাগজপত্র পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখতে পান, গাড়িটির কাছে অন্য রাজ্যের বৈধ ফিটনেস সার্টিফিকেট রয়েছে। যদিও গাড়িটির মালিকের কাছে জাতীয় পারমিট নেই।
এরপর আঞ্চলিক পরিবহন দফতরের নজরে আসে আরও হাজার হাজার বাণিজ্যিক যানবাহন। যারা বাংলার বাইরে না গিয়েই ভিনরাজ্যের ফিটনেস সার্টিফিকেট জোগাড় করেছে।
রাজস্ব ক্ষতি ৯ কোটি টাকার বেশি
পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী জানিয়েছেন, এবছরের জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে প্রায় ৬,০০০ যানবাহন এই পদ্ধতিতে ফিটনেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এর ফলে রাজ্যের কোষাগার ক্ষতির মুখে পড়েছে ৯ কোটি টাকারও বেশি। ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়া যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য সমস্ত আঞ্চলিক পরিবহন অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কীভাবে ঘটেছে এই জালিয়াতি?
ফিটনেস পরীক্ষার নির্ধারিত তারিখ মিস করলেই প্রতিদিন ৫০ টাকা হারে জরিমানা দিতে হয়। এক বছরে এই জরিমানা দাঁড়াতে পারে ১৮,০০০ টাকা পর্যন্ত। অনেক গাড়ির মালিক এই জরিমানা এড়াতে জাল সার্টিফিকেট জোগাড় করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সরকারী পদক্ষেপ ও নির্দেশনা
পরিবহন সচিব সৌমিত্র মোহন কর্তৃক জারি করা এক নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ট্যাক্স বকেয়া এবং পারমিট রিনিউ না করেই ফিটনেস সার্টিফিকেট নেওয়া যানবাহন শনাক্ত করা হবে। ওইসব গাড়ির মালিকদের নোটিশ পাঠিয়ে ফের ফিটনেস পরীক্ষার জন্য হাজির হতে বলা হয়েছে।
কেন্দ্রকে চিঠি দেবে রাজ্য সরকার
রাজ্য সরকার সড়ক পরিবহন মন্ত্রককে (MoRTH) একটি চিঠি দিতে চলেছে। তাতে অনুরোধ জানানো হবে, প্রত্যেকটি ফিটনেস পরীক্ষা কেন্দ্রকে ‘বাহন’ জাতীয় ডাটাবেসে পরীক্ষা সংক্রান্ত ভিডিও আপলোড বাধ্যতামূলক করতে।