ফের কলকাতার এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ। আরজি কর কাণ্ডের এখনও একবছর হয়নি। তারমধ্যেই সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজের ঘটনা সামনে এসেছিল। এবার IIM জোকার বয়েজ হস্টেলে ধর্ষণের ভয়ানক অভিযোগ উঠেছে।
কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট (আইআইএম) জোকা ক্যাম্পাসে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে। এই ম্যানেজমেন্ট শিক্ষাকেন্দ্রের হস্টেলে এক তরুণীকে ডেকে এনে যৌন নিগ্রহ তথা ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ । অভিযোগের তির আইআইএম জোকার এক ছাত্রের বিরুদ্ধে। এই প্রিমিয়াম ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়ার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ওই পড়ুয়াকে গ্রেফতার করেছে হরিদেবপুর থানার পুলিশ।
নির্যাতিতার অভিযোগ, কাউন্সেলিংয়ের নাম করে তাঁকে ডাকা হয়। অন্য কাজে দরকার আছে বলে তাঁকে বয়েজ হস্টেলে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁকে খাবার খেতে দেওয়া হয়। তখন তিনি আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। সেই অবস্থায় তাঁর উপর চলে শারীরিক নির্যাতন। অভিযোগ, ধর্ষণ করা হয় তাঁকে। নির্যাতিতার বয়ান অনুসারে, তিনি পুরো সময় আচ্ছন্ন পরিস্থিতিতে ছিলেন। যখন সম্বিৎ ফেরে , দেখেন বয়েজ হস্টেলে পড়ে রয়েছেন। তখন তিনি ঠাকুরপুকুর থানায় অভিযোগ করেন। কিন্তু আইআইএম হরিদেবপুর থানায় পরে। তাই নির্যাতিতাকে হরিদেবপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর পুলিশ ক্যাম্পাসে গিয়ে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে। তারপর গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তকে।
সূত্রের খবর, যে ছাত্রীর সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছে তিনি ওই কলেজর ছাত্রী নন। জানা গিয়েছে, ওই কলেজে গিয়েছিলেন তার এক বন্ধুর কাছে। অভিযোগ পেয়েই পুলিশ অধিকারীরা আসেন কলেজে। সেখানে বেশ কয়েজনকে জিজ্ঞেসাবাদ করা হয়। একজনকে আটক করে নিয়ে আসা হয় হরিদেবপুর থানায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আটককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃত ম্যানেজমেন্টের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া।
ঠান্ডা পানীয়ের সঙ্গে মাদক জাতীয় কিছু খাইয়ে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ছাত্রীর। সূত্রের খবর, তরুণীর ওই ছাত্রীর পরিচিত। কিছুদিন আগেই আলাপ হয়। অভিযোগ, কাউন্সেলিং সেশনের জন্য ওই ছাত্রীকে অভিযুক্ত আইআইএমে ডেকে পাঠায়। কিন্তু কাউন্সেলিংয়ের জায়গায় না গিয়ে বয়েজ হস্টেলে নিজের রুমে নিয়ে যায় জরুরি নথি নেওয়ার অজুহাতে। সেখানে পিৎজা ও কোল্ড ড্রিংক খাওয়ান। সেগুলি খাওয়ার পরই আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন তরুণী। এরপরই তাকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। ধর্ষণে বাধা দিলে মারধরও করা হয় ছাত্রীকে।
সম্প্রতি কসবার আইন কলেজে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় হয়েছে রাজ্যে। এর মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই আইআইএম ক্যাম্পাসে যৌন নিগ্রহর অভিযোগ ওঠার পর বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন লালবাজারের কর্তারা। পুলিশ জানিয়েছে, সোশাল মিডিয়ায় অভিযুক্ত ওই তরুণ ছাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তরুণীর। তদন্তে নেমে সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। ছাত্রছাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গেও কথা বলছেন তদন্তকারীরা। তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্ত ছাত্রের নাম অবশ্য গোপন রেখেছেন তদন্তকারীরা। পুলিশকে নির্যাতিতা ছাত্রী জানিয়েছেন, তাঁকে বয়েজ হস্টেলের রেজিস্টারে সই করতে দেওয়া হয়নি। গোটা ঘটনায় প্রশ্নের মুখে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা। দেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইআইএম কলকাতা, যা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে পরিচালিত হয়, সেই প্রতিষ্ঠানে এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।