
'দীপু চন্দ্র দাসের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করছে বিজেপি'। শনিবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে এমনটাই বললেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, মৃত্যুকে হাতিয়ার করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলাই এখন গেরুয়া শিবিরের মূল উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
এদিন অভিষেক বলেন, 'আমরা শকুন নই। মৃত্যু নিয়ে আমরা রাজনীতি করি না। বিজেপি পুলওয়ামা, ময়মনসিংহের মতো ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করে।' তাঁর অভিযোগ, প্রতিটি সংবেদনশীল ঘটনার ক্ষেত্রেই বিজেপি রাজনৈতিক রং লাগানোর চেষ্টা করে।
বাংলাদেশের ময়মনসিংহের ভালুকায় ২৫ বছরের যুবক দীপু চন্দ্র দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে অভিষেক বলেন, 'কে প্ররোচনা দিয়েছে দীপুর হত্যায়? সেটা বুঝতে হবে। এই হত্যাকে কেন্দ্র করে কারা রাজনীতি করছে সেটা বুঝতে হবে।' তাঁর দাবি, এই ঘটনার পিছনে উসকানিদাতাদের চিহ্নিত করা জরুরি। অভিষেকের অভিযোগ, 'প্ররোচনা দিচ্ছে জামাত, আর এখানে রাজনীতি করছে বিজেপি। আমরা তো বরাবরই সর্বধর্ম সমন্বয় ও শান্তির পক্ষে।'
এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তাঁর কথায়, 'দুঃখজনক যে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রী এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তাহলে যিনি নিজেকে হিন্দুত্বের রক্ষাকর্তা হিসাবে প্রচার করেন, তিনি এই পরিস্থিতিতে সরাসরি পদক্ষেপ করছেন না কেন?' অভিষেকের দাবি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো গুরুতর ঘটনায় নীরবতা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বাংলাদেশ ইস্যুতে কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা প্রয়োজন বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি। অভিষেক বলেন, 'বাংলাদেশের সঙ্গে কেন এই নিয়ে সরাসরি আলোচনা হবে না? কয়েকদিন আগেও তো বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেখা করলেন। তাহলে এখন সরাসরি কথা বলছেন না কেন?' তাঁর প্রশ্ন, আলোচনার পথ খোলা থাকা সত্ত্বেও এখন নীরবতা কেন?
বিজেপির 'হিন্দু-দরদী' ভাবমূর্তি নিয়েও কড়া আক্রমণ শানান অভিষেক। তিনি বলেন, 'যে হিন্দু হৃদয় সম্রাট হিসাবে আপনারা নিজেদের জাহির করেন, পাকিস্তান বা বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে আপনারা কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?' পাশাপাশি দেশের মধ্যেই ঘটে যাওয়া SIR সংক্রান্ত মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি বলেন, 'SIR এ যাঁরা প্রয়াত হয়েছেন, তাঁদেরও সিংহভাগ হিন্দু। কই, তখন তো আপনারা কোনও ব্যবস্থা নেননি।'
প্রসঙ্গত, গত ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার ভালুকায় একটি গার্মেন্টস কারখানার কর্মী দীপু চন্দ্র দাসকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মারধর করে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। অভিযোগ, একটি গাছে বেঁধে তাঁকে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই অন্তত ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।
এই ঘটনার তীব্র নিন্দায় সরব হয়েছে বিজেপি। তবে অভিষেকের বক্তব্য, এহেন ঘটনাকে হাতিয়ার করে বিভাজনের রাজনীতি নয়, বরং কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।