বর্ধমান দুর্গাপুরে হারার পর দলের নেতৃত্বের দিকেই উষ্মাপ্রকাশ করেছিলেন পরাজিত বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। তাঁর দাবি, মেদিনীপুর থেকে ষড়যন্ত্র করেই তাঁকে পাঠানো হয়েছিল বর্ধমান দুর্গাপুরে। রাজনৈতিক কারবারিদের মনে হয়েছিল, দিলীপের তোপের নিশানায় আসলে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুক্রবার রাজ্য বিধানসভার বাইরে দিলীপকে পাল্টা দিলেন ময়নার বিজেপি বিধায়ক অশোক দিন্দা। প্রাক্তন এই ভারতীয় ক্রিকেটার, শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ বলেই খ্যাত। তাঁর সাফ কথা, হেরে যাওয়ার পর অনেকে অনেক কিছু বলেন। জিতলে এত প্রশ্ন করতেন না! জো জিতা ওহি সিকান্দার। কীভাবে জিতলাম তার কোনও দাম নেই। মানুষ আপনাকে ভোট দেয়নি এটা মেনে নিন'।
দিলীপ ঘোষের কাঠিবাজির অভিযোগে প্রেক্ষিতে এ দিন অশোক দিন্দা বলেন,'কেউ হারানোর জন্য কাঠিবাজি করেছে কিনা, তার প্রমাণ দিন। আমি খেলোয়াড়। আমি যদি বলি ইডেন ছাড়া খেলব না, আমি ইডেনেই পারফরম্যান্স করব, যাদবপুরে পারফরম্যান্স করতে পারব না, আমি কীসের খেলোয়াড় হলাম! আমি খেলোয়াড় সব জায়গায় পারফর্ম করব'। দিন্দা মনে করিয়ে দেন, পারফরম্যান্সই শেষ কথা। তাঁর মন্তব্য,'ক্রিকেটীয় ভাষায় বলতে পারি, যে পারফরম্যান্স করবে সে আগে যাবে। বিরাট কোহলি পরপর পাঁচটা শূন্য করলে কেউ তারিফ করবে না। রোহিত শর্মা ৩টে শতরান করলে সকলে তাঁকে নিয়ে কথা বলবে'।
বর্ধমান দুর্গাপুরে সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন দিলীপ। এনিয়েও প্রাক্তন সভাপতিকে খোঁচা দিয়েছেন দিন্দা। তিনি জানান,'কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঠিক করে কাকে কোন জায়গায় প্রার্থী করবে। আমি ময়না থেকে জিতেছি। কোনও কঠিন আসনে দিয়ে আমাকে জিতে আসতে বললে, সেটা মানব। আমি হেরে যাওয়ার পর বলব না, আমি হেরে গেলাম। আমি আসন নেওয়ার সময় বলব, দাঁড়াব না। আপনি রাজ্যসভাপতি ছিলেন। রাজ্যের সংগঠন হাতের তালুর মতো চেনা। বর্ধমানে কী সংগঠন আছে আপনি ভালোমতো জানতেন। হেরে গিয়ে কথা বলে লাভ নেই। আগেই বলে দিতে পারতেন। ২০২১ সালে খড়্গপুর বিধানসভার টিকিট দেওয়া হয়েছিল। উনি না করে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, সাংসদ আছি সংগঠন দেখব। সবাই মেনে নিয়েছিল। এবারও বলতে পারতেন'।
শুভেন্দু অধিকারীর প্রশংসাও শোনা গিয়েছে দিন্দার গলায়। তাঁর কথায়,'যে ১৬ ঘণ্টা গাড়িতে থেকে সংগঠন তৈরি করবে,আজ মালদা, কাল হুগলি-শিলিগুড়ি যে করবে সে-ই তো হিরো হবে, তাই না। শুভেন্দু অধিকারী সভাপতি হবেন? আমি এনিয়ে মন্তব্য করব না। শুভেন্দু অধিকারী বিরোধী দলনেতা। একুশের পর থেকে যে সন্ত্রাস হয়েছিল, তারপরও বাংলায় বিজেপির যে সংগঠন আছে, সেটা শুভেন্দু অধিকারীর জন্যই আছে। যেটুকু বিজেপির সংগঠন চাঙ্গা হয়েছে, তার জন্য কৃতিত্ব শুভেন্দু অধিকারীর। আমরা পশ্চিমবঙ্গে একটা বুথ জিততেও মরিয়া। আমাদের কর্মীরা মারা যাচ্ছে, জেল খাটছে, মিথ্যা মামলায় জর্জরিত। আমরা কে কাঠি করছে তা নিয়ে ভাবিত নই। মিডিয়ায় উল্টোপাল্টা কথা বলে কিছু হয় না'।
রাজ্য সভাপতি হিসেবে বিজেপি নেতা-কর্মীদের অনেকে আবার দিলীপ ঘোষকে দেখতে চাইছেন। দিন্দার যে সে চাওয়া নিয়ে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন ঠারেঠোরে। অশোক দিন্দা বলেন,'রাজ্য সভাপতি কাকে করা হবে, সেটা সংগঠন বুঝবে। সংগঠন যে চালায় তাঁকে সব কিছু ভেবেচিন্তে কথা বলা উচিত। সংগঠন এমন লোককে দিতে হবে যে লোকটার হাত ধরে রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারে। আমাদের হয়তো সাংসদের সংখ্যা কমেছে। ৭৭টা বেশি বিধানসভা জিতেছিলাম। এবার ৯২ জিতেছি। ১৪৭ ম্যাজিক ফিগার। ৯২ জেতা। কংগ্রেস ১১টা। সিপিএম ১টা আছে। ১২টা বাদ দিন। ৩৫ থেকে ৩৭ আসনে ১২০০ থেকে ১৫০০ কম। ২৫-৩০টা বের করতে পারলে কেল্লাফতে'।