খুন হয়েছেন এক দশকেরও বেশি সময় আগে। কিন্তু রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের (Jyotipriya Mallick) গ্রেফতারির প্রেক্ষিতে শুক্রবার থেকে আচমকাই প্রাসঙ্গিক হয়ে সুটিয়ার প্রতিবাদী তথা শিয়ালদার মিত্র ইন্সস্টিটিউশনের প্রাক্তন শিক্ষক বরুণ বিশ্বাস (Barun Biswas)। ২০১২ সালের জুলাই মাসের গোড়ায় বরুণকে খুন করা হয়েছিল। সেই ঘটনায় বরুণের বাবা, দিদি এবং দাদা অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন জ্যোতিপ্রিয়ের বিরুদ্ধে। অন্য মামলায় হলেও বৃহস্পতিবার জ্যোতিপ্রিয় গ্রেফতার হয়েছেন। এই আবহে আবারও অভিযোগের সেই আঙুল তুলছেন বরুণের পরিবার। সেইসঙ্গে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে বরুণ বিশ্বাসকে নিয়ে রাজ চক্রবর্তীর হিট সিনেমা 'প্রলয়।' কেন?
২০১৩ সালে মুক্তি 'প্রলয়' নিয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলিতে অনেকেই বলছেন ওই ছবিতে খুন হয়ে যাওয়া শিক্ষক বরুণ বিশ্বাসের চরিত্রায়ণ ঠিক হয়নি। এমনকি বরুণ বিশ্বাসের দিদি প্রমীলা রায় (Pramila Roy) 'বাংলা ডট আজতক ডট ইন' কে অভিযোগ করে বলেন, 'রাজ চক্রবর্তীর সিনেমায় একটুই সত্যি নেই। ভাইকে ভুলভাবে দেখানো হয়েছে। আমার ভাইয়ের কোনও প্রেমিকা ছিল না। অথচ সিনেমায় পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের নায়িকা ছিল। সবটাই ওঁর কল্পনা।'
সিনেমার মূল গল্পটা ছিল, দুখিয়া গ্রামে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও তার ভাই প্রসুনের দলবলে সন্ত্রাসের। গ্রামের সাহসী ছেলে বরুণ এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে। বরুণ কলকাতার একটি স্কুলে শিক্ষকতা করে। একদিন বাড়ি ফেরার পথে রেল স্টেশনে খুন হয়ে যায় বরুণ। এই ঘটনা জেনে বিনোদ বিহারী দত্ত বরুনের গ্রামে আসেন ও সেখানকার স্কুলে পড়ানোর কাজ নেন। তিনি দেখেন কয়েকজন বাদে সকলেই ভীরু, প্রতিবাদহীন। তিনি বরুণের মৃত্যুর কথা, তার প্রতিবাদের কথা কলকাতায় জনসাধারণের মধ্যে, সংবাদমাধ্যমে বলার চেষ্টা করেন, কিন্তু গুরুত্ব পাননা। এসময় স্পেশাল ব্রাঞ্চের অফিসার অনিমেষ দত্ত আসেন গ্রামে। তিনি সাহায্য করতে থাকেন বিনোদ বিহারীকে।
বিষয়টিতে পরিচালক এবং তৃণমূল বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী (Raj Chakraborty) বললেন,'কোথাও কোনও ভুল দেখান হয়নি। সবটাই ফ্যাক্ট। তবে যেহেতু বিষয়টা বিচারাধীন, তাই সিনেম্যাটিক দৃষ্টিকোণ থেকে চরিত্রায়ণ করতে হয়েছে। আমি তো আর বরুণ বিশ্বাসের বায়োপিক বানাইনি। তবে বরুণ বিশ্বাসের চরিত্রায়ণে কোনও ভুল ছিল না। চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছিল মূল ঘটনা নিয়েই।'
ছবিতে বরুণ নামের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় (Parambrata Chaterjee)। তাঁকে বিয়টিতে জানতে চাওয়ায় তিনি বললেন, 'চিত্রনাট্য লিখেছিল রাজ নিজেই। আমায় যেভাবে করতে বলেছিল, আমি সেভাবেই করেছি। একটা প্রতিবাদী, সৎ মানুষের চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে বলা হয়েছিল। তবে সিনেমা তৈরির ক্ষেত্রে কিছুটা বদল তো করতেই হয়। তবে কতটা কী হয়েছে, সেটা আমার জানা নেই, আমি শুধু চরিত্রটা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। কতটা পেরেছি, সেটা দর্শকই বলতে পারবেন। তবে আমি ওই এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। বরুণ বিশ্বাসের পরিবারের সঙ্গে কথা বলিনি।'