নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সোমবারের বৈঠকে চাকরিহারাদের অগাধ আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সকলকে আশ্বসবাণী দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, আমরা দু’মাসের মধ্যেই বিকল্প ব্যবস্থা করে দেব। যোগ্যদের কারও চাকরি বাতিল হবে না। সেইসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য এখনও কাউকে বরখাস্ত করা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার পরে চাকরিহারাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
চাকরিহারাদের উদ্দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “আপনাদের তো কেউ টারমিনেট করেছে? আপনি আপানাদের কাজ করুন না, কে বারণ করেছে? ভলেন্টিয়ারি সার্ভিস কিন্তু চলতেই পারে। কীভাবে আটকাবে?” সেইসঙ্গে তাঁর আশ্বাস, চাকরি যাতে ফিরে পান, গোটা প্রক্রিয়া ২মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ হবে। সার্ভিস ব্রেক হবে না। স্কুলে স্বেচ্ছায় পরিষেবা দেওয়ার বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন বাকিটা রাজ্য সরকার বুঝে নেবে। সোমবারের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ভলান্টিয়ারি সার্ভিস দিতে আবেদন জানিয়েছেন। তবে চাকরিহারাদের একাংশ কোনোরকম ভলান্টিয়ারি সার্ভিস নিতে রাজি নন।
নেতাজি ইন্ডোর থেকে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার পর শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। চাকরীহারাদের একাংশের বক্তব্য, “ উনি ভলেন্টিয়ার সার্ভিস কথাটা প্রশ্নবোধকে রেখে গিয়েছেন। যেহেতু এই কেস সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন সেই কারণে এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। কোনো শিক্ষক মহল ভলেন্টিয়ার শিক্ষক হতে রাজি নন। তবে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি যে, কোনো যোগ্য শিক্ষকের চাকরী যাবে না।” যারা ভলান্টিয়ার সার্ভিস নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত তাদের আরও বক্তব্য, “এটা তো শুধু টাকার বিষয় নয়। আমাদের সম্মানের বিষয় জড়িয়ে আছে। আমরা চোর অপবাদ নিয়ে রাস্তায় বের হতে পারব না।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা শুনে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে একাধিক প্রশ্ন এবং ভিন্ন মত রয়েছে। তবে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এবং বেশ কিছু ধোঁয়াশা থাকলেও সিংহভাগই স্কুলে যেতে ইচ্ছুক। যদিও চাকরিহারাদের প্রশ্ন, স্কুলে গেলে বেতনের বেতনের কী হবে? বেতন কি আগের মতোই পাবেন? তা ছাড়া, এই ব্যবস্থা কত দিনের জন্য চলবে, স্থায়ী সমাধান কী রয়েছে, তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে চাকরিহারাদের একাংশের মনে। যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা সুপ্রিম কোর্ট দেবে, না স্কুল সার্ভিস কমিশনের দেওয়া উচিত, তা নিয়েও ধন্দ তৈরি হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীদের একাংশের মনে।
এদিকে সোমূাপ চাকরিহারাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আর এবার স্কুল সার্ভিস কমিশন বৈঠকে বসতে চলেছে তাঁদের সঙ্গে। আগামী শুক্রবার কমিশনের মুখোমুখি হবেন চাকরিহারারা। উপস্থিত থাকবেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রতিনিধিরাও। সূত্রের খবর, আগামী শুক্রবার চাকরিহারাদের সঙ্গে বৈঠকে থাকবে রাজ্যের ল সেলও। সেখানে চাকরিহারাদের পরামর্শ নেবে রাজ্য সরকার। কোন পথে আইনিভাবে চাকরি ফেরানো যায়, কী কী বিষয় আদালতে সওয়াল করার সময় উল্লেখ করা যায়, এই সব বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া হবে বলে সূত্রের খবর। চাকরিহারাদের কোনও প্ররোচনায় পা দিতে নিষেধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর যাতে সব তথ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকেন তাই চাকরিহারাদের নিয়ে একটি প্রতিনিধিদল গড়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।