নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের রাজ্য সম্মেলন বৃহস্পতিবার প্রায় প্রায় একঘণ্টা বক্তব্য রাখেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্টেডিয়ামের ভিতরে তখন উপস্থিত ছিলেন প্রায় ১৯ হাজার নেতা-কর্মী। তাদের সামনেই ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনের লক্ষ্য স্থির করে দিলেন তৃণমূনেত্রী। দনীল নেতা-কর্মীদের সামনে মমতা বলেন,‘আগামী বিধানসভা ভোটে ২১৫টা আসন পেতেই হবে। অভিষেক ঠিকই বলেছে। আসন আরও বেশি পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। ২১৫টা আসনের কম কোনও মতেই নয়। এবার বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএমের জামানত জব্দ করার পালা।’’ এছাড়াও নিজের এক ঘণ্টার ভাষণে তৃণমূলনেত্রী আর কী কী বললেন চলুন দেখে নেওয়া যাক-
২০২৬ সালের টার্গেট বেঁধে দিলেন
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আগামী বিধানসভা ভোটে ২১৫টি আসন পেতেই হবে। অভিষেক ঠিক বলেছে। আরও বেশি আসন পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কম কোনও মতেই নয়। বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম-এর জামানত জব্দ হওয়ার পালা এ বার।’
ভোটার তালিকায় কারচুপির অভিযোগ
নেত্রী দাবি করেন, বাংলায় এজেন্সি পাঠিয়ে ভোটার তালিকায় কারচুপি করার চেষ্টা করছে বিজেপি। পঞ্জাব-হরিয়ানার বহু লোকের নাম বাংলার ভোটার তালিকায় ঢোকানো হয়েছে। দিল্লি থেকে এ সব করা হচ্ছে। নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বাংলার লোক যাতে ভোট দিতে না পারে সেজন্য একই এপিক কার্ডে বাইরের লোকের নাম তুলেছে। তার মানে বাংলার মানুষের ভোটটা বাইরের লোক এসে দিয়ে দেবে। আমি প্রমাণ দিচ্ছি। মুর্শিদাবাদের রানিনগরে বাড়ি মহম্মদ সাইদুল ইসলাম। তাঁর এপিক কার্ড নম্বরের সঙ্গে যোগ করেছে হরিয়ানার সোনিয়া দেবীর নাম। মহম্মদ আলি হোসেনের বাড়ি রানিনগর। তাঁর সঙ্গে হরিয়ানার একজনের নাম তুলেছে। বুঝতে পারছেন খেলাটা? আধার কার্ড কেলেঙ্কারি করেছে। আধার কার্ড ওদের হাতে। একই এপিক নম্বরে বাংলার ভোটারের জায়গায় হরিয়ানা, পাঞ্জাব, বিহারের নাম ঢুকিয়েছে। রেলে করে নিয়ে আসবে।’
রাজ্যস্তরে ভোটার লিস্ট সংক্রান্ত কমিটি গঠন
ভোটার তালিকায় কারচুপি ধরতে জেলায় জেলায় কোর কমিটি গড়ার কথা ঘোষণা করেন মমতা। বললেন, ‘‘ওই কমিটি ভোটার তালিকা নিয়ে কাজ করবে। তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে।’’ ভোটার লিস্ট সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানের জন্য কমিটি গঠন করে দেন তৃণমূল নেত্রী। সুব্রত বক্সি এই কমিটির মাথায় থাকবেন। এছাড়াও কমিটিতে রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুজিত বসু, মলয় ঘটক, পার্থ ভৌমিক, ডেরেক ও’ব্রায়েন, উদয়ন গুহ, বিপ্লব মিত্র, অর্পিতা ঘোষ, মমতাবালা ঠাকুর, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, দেবাংশু ভট্টাচার্য, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মালা রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, নির্মলচন্দ্র রায়., সুমন কাঞ্জিলাল, বাপি হালদার, পুলক রায়, জগদীশচন্দ্র বসুনিয়া, মোশারফ হোসেন, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, মানস ভুঁইয়া, বীরবাহা হাঁসদা, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্রাত্য বসু, প্রকাশ চিক বরাইক, স্নেহাশিস চক্রবর্তী, সায়নী ঘোষ, তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য, বেচারাম মান্না। প্রতিদিন এই কমিটির সদস্যদের ন্যূনতম ৪ জনকে পার্টি অফিসে বসে সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা শুনতে হবে এবং তা সমাধান করতে হবে বলে নির্দেশ দেন তিনি।
আধার কার্ড কেলেঙ্কারি করেছে
মমতা আরও বলেন, ‘‘আধার কার্ড কেলেঙ্কারি করেছে। বাংলা দখলের খেলা চলছে। ভূতুড়ে ভোটার দেখে নিন, নইলে যে কোনও দিন এনআরসি, সিএএ করে আপনাকে বাদ দিয়ে দেবে।নির্বাচন কমিশনের আশীর্বাদে কেলেঙ্কারি হচ্ছে।’’ মমতার হুঁশিয়ারি, “অনেক বিএলআরও ভালো করে কাজ করেননি। যারা এই কাজ করেছে, আমি তাদের হাতেনাতে ধরব।” এ দিন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ডেটা অপারেটরদের উপর লক্ষ্য রাখুন। অনেক জায়গায় কিছু মিষ্টির প্যাকেট গিয়েছে। সবাই খারাপ এ কথা বলব না। যাঁরা ভালো তাঁদের ভালোভাবে পদোন্নতি করব। আর যাঁরা এই কাজ করেছে (নিয়মবিরুদ্ধ কাজ ) তাঁদের হাতেনাতে ধরব। কিন্তু তার জন্য আমার নথি-প্রমাণ চাই।’ ‘ভূতুড়ে’ ভোটার ধরতে ১০ দিনের ডেডলাইন বেঁধে দেন মমতা। ‘ভূতুড়ে’ ভোটার চিহ্নিতকরণে সুব্রত বক্সির নেতৃত্বে কমিটিও গড়ে দিয়েছেন। ওই কমিটি কাজ না করলে প্রয়োজনে নিজে ‘ভূতুড়ে’ ভোটার বাছাইয়ের কাজ করবেন বলেও জানান মমতা।
যাঁরা ভালো কাজ করছেন, তাঁদের পদোন্নতি করব
এ দিনের সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘যাঁরা ভালো কাজ করছেন, তাঁদের পদোন্নতি করব। কিন্তু যাঁরা কাজ করেন না, শুধু ভাষণ দেন, বিজেপি-কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করেন না, সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেন না, তাঁদের জন্য আমার কোনও দয়ামায়া নেই। মাটির বাড়িতে থাকা সেই কর্মী যিনি বুক দিয়ে জোড়াফুলকে আঁকড়ে রাখেন আমার সমস্ত দয়ামায়া তাঁর জন্য।’
বিজেপির আয়ু ২-৩ বছর
এদিন সমাবেশ মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দেন যে, পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপির ভরাডুবি হবে। দেশের অন্যান্য রাজ্যের নির্বাচনের ফলাফলের প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, “মহারাষ্ট্র-দিল্লিতে ওরা বিজেপির খেলা ধরতে পারেনি। বাংলায় আমরা ধরব। যোগ্য জবাব দেব। ২০২৭ থেকে ২০২৯-এর মধ্যে বিজেপি শেষ হয়ে যাবে। বিজেপির আয়ু ২-৩ বছর।’’
দিল্লি বিধানসভা ভোটের ফল নিয়ে সন্দেহ
নির্বাচন কমিশনের সাহায্য নিয়ে ভোটে কারচুপি করে দিল্লি ও মহারাষ্ট্রে ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি ৷ ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এ রাজ্যেও সেই চেষ্টা চলছে ৷ বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলীয় কর্মী সম্মেলন থেকে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ আনলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁর অভিযোগ, হরিয়ানা ও গুজরাতের বহু লোকের নাম এনে ঢোকানো হচ্ছে বাংলার ভোটার তালিকায় ৷ এদিন একটি ভোটার তালিকা নিয়ে এসে দলীয় কর্মীদের সামনে তা তুলে ধরেন তৃণমূল নেত্রী ৷ তিনি দেখিয়ে দেন, বাংলার ভোটারদের তালিকায় এমন অনেক নাম রয়েছে, যাঁরা আদপে হরিয়ানা, গুজরাত বা অন্য কোনও রাজ্যের বাসিন্দা ৷
কেন্দ্র এবং কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে একইসঙ্গে কটাক্ষ
এছাড়াও এদিন কেন্দ্র এবং কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে একইসঙ্গে কটাক্ষ করেন মমতা। তাঁর দাবি, ভোটের আগে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে ব্যবহার করে বিজেপি। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ভোট এলেই ওরা ঠিক করে, কাকে জেলে ঢোকাতে হবে, কার নামে চার্জশিট দিতে হবে, কাকে চোর বলতে হবে! লজ্জা করে না! আরজি কর মামলার এখনও সমাধান করতে পারেননি।’’
নির্বাচন কমিশনে সব বিজেপির লোক
মমতা বলেন, বাংলাকে ওরা টার্গেট করেছে কারণ ওদের বিরুদ্ধে বাংলা লড়ে। অন্যরা লড়তে পারে না। বাংলা সর্ব ধর্মে বিশ্বাস করে। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে নির্বাচন কমিশনের মাথায় বসিয়েছে। সবটাই বিজেপির লোক বসিয়ে দিয়েছে। গণতন্ত্রের এমন দুরবস্থা আগে দেখিনি। মমতা বলেন, ‘ওদের টাকার জোর আছে। ওদের এজেন্সির জোর আছে। আমি নির্বাচন কমিশনকে খুব সম্মান করতাম। এখনও করি। যতদিন সম্মানের জায়গায় থাকবে করব। কিন্তু আপনারা কি জানেন সদ্য নির্বাচন কমিশনার হয়েছেন কে? আপনাদের জেনে রাখা উচিত। মাননীয়স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর দফতরের যিনি মাননীয় সচিব ছিলেন তাঁকে করে দিয়েছেন চিফ ইলেকশন কমিশনার। টোটালটাই বিজেপির লোক দিয়ে করা। নির্বাচন কমিশন যতদিন নিরপেক্ষ না হবে ততদিন বদনাম থেকে যাবে। আমরা বিদেশে গর্ব করি যে আমরা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। কিন্তু সত্যিই কি তাই?’
PK আইপ্যাকের কেউ নয়, স্পষ্ট করে দিলেন মমতা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে ফের প্রশান্ত কিশোর অর্থাৎ PK-র নাম! নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে তৃণমূল নেত্রী স্পষ্ট করে দিলেন, প্রশান্ত কিশোর আইপ্যাকের কেউ নয়। মমতা বলেন, ”PK আইপ্যাকের কেউ নয়। ও অন্য দল করে। এদের নামে উল্টোপাল্টা বলা বন্ধ করুন। এখন একটা নতুন টিম।” মমতা বলেন, “বিজেপির যদি পঞ্চাশটা এজেন্সি থাকে আমাদের তো একটা থাকবে। তারা ফিল্ড সার্ভে করবেন। তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে”। তাঁর কথায়, “পিকের আই-প্যাক এটা নয়। এটা একটা নতুন টিম। সবাই জানে এদের কোপারেশন কতটা। এদের নামে উল্টোপাল্টা কথা বন্ধ করুন”