পশ্চিমবঙ্গের রাজভবন কি ওয়াকফ বোর্ডের সম্পত্তিতে তৈরি? এমন প্রশ্ন মাঝে মাঝেই ঘুরপাক খায়। এনিয়ে নানা দাবিও করা হয় অনেকের তরফে। এবার সত্যিটা সামনে আসল। বেঙ্গল ওয়াকফ বোর্ড এই দাবির সমালোচনা করেছে যে রাজভবন ওয়াকফ সম্পত্তির উপর নির্মিত হয়েছে। বেঙ্গল ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান সহিদুল মুন্সি বলেছেন, বোর্ডের কাছে কোনও বাস্তব তথ্য নেই যে রাজভবন একটি ওয়াকফ সম্পত্তি। তিনি বলেছেন, 'আমরা যতদূর জানি, রাজভবন ওয়াকফ সম্পত্তির অধীনে রেজিস্টার নয়, জনগণের উচিত সত্যতা জানা। আমাদের জেলাভিত্তিক তালিকা রয়েছে, ৮ হাজার সম্পত্তি ওয়াকফের অধীনে রয়েছে। বাংলায় প্রায় ৮০ হাজার ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। কোন সম্পত্তি ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে না থাকলে আমরা তা আমাদের বলতে পারি না। ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে রেজিস্টেশন না হলে আমরা তাকে ওয়াকফ সম্পত্তি বলতে পারি না।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা ওয়াকফ রেজিস্টার রাখি, তা থেকেই জানা যাবে। এখন যদি কেউ জানতে চান কোন সম্পত্তি ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে আছে বা নেই, তারা আইটিআর ফাইল করতে পারেন, আমরা তথ্য শেয়ার করতে পারি।'
ওয়াকফ বোর্ড শিরোনামে
ওয়াকফ সংশোধনী বিলের পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়টি খবরের শিরোনামে রয়েছে। এ বিষয়ে গঠিত যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি) শেষ বৈঠক বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির চেয়ারম্যান সকল সদস্যকে তাঁদের মতামত দিতে বলেন। তবে বৈঠকে বিরোধী দলের সাংসদরা জেপিসির সময় বাড়ানোর দাবি জানান। এখন এই দাবি নিয়ে সোমবার লোকসভা স্পিকারের সঙ্গে দেখা করবেন বিরোধী দলের সাংসদরা। জেপিসি চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পাল বলেন, 'চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করা যেতে পারে। আমাদের রিপোর্ট প্রস্তুত এবং আমরা ধারা-দফায় আলোচনা করব। বিরোধীরাও একই কথা বলছিল (জেপিসির মেয়াদ বাড়ানোর দাবি)। যে কোনও সদস্য বা বিরোধী দল স্পিকারের সঙ্গে দেখা করতে যেতেই পারেন। তারা (বিরোধীরা) জেপিসির মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করছে।'
অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা কমানো হবে
মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওয়াকফ আইনে ৪০টি সংশোধনীর প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। সংসদে সংশোধনী বিল পাস হলে ওয়াকফ বোর্ডের অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা কমে যাবে। আমরা আপনাকে বলি যে বোর্ড যাচাই ছাড়াই কোনও সম্পত্তির দখল ঘোষণা করতে পারবে না। মোদী সরকার সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন সহ ওয়াকফ বিল পেশ করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু মঙ্গলবার বলেছেন যে সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাস হবে। এই বিলটি কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির ওয়াকফ বোর্ড গঠন ও কার্যপ্রণালীতে ব্যাপক সংস্কারের প্রস্তাব করেছে।
২০১৩ সালে ইউপিএ সরকারের সময় ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছিল। সাধারণ মুসলমান, দরিদ্র মুসলিম নারী, তালাকপ্রাপ্ত মুসলিম নারীদের সন্তান, শিয়া ও বোহরার মতো সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে আইন পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছিল। তাদের যুক্তি, ওয়াকফে সাধারণ মুসলমানদের কোনও স্থান নেই। আছে শুধু ক্ষমতাবান মানুষ। রাজস্ব নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। কত রাজস্ব আদায় হয় তার কোনও হিসেব কেউ দেয় না।