সন্ধ্যায় আপনি বেশিরভাগ বাঙালি বাড়িতে ভাজা বেসনের সুগন্ধ পাবেন। তেলেভাজা একটি সবচেয়ে বিখ্যাত বাঙালি খাবার। বৃষ্টির দিনে চা-মুড়ি সহযোগে তেলেভাজা (Telebhaja) এক কথায় লা জবাব। সাধারণ তেলেভাজার মধ্যে রয়েছে আলুর চপ (Chop), বেগুনি (Beguni), পেঁয়াজি, বোমা, ফুলুরি। আলুর পুর ছাড়াও আরও বিভিন্ন রকমের চপ পাওয়া যায়। আজ আমরা এই প্রতিবেদনে কলকাতার কয়েকটি বিখ্যাত তেলেভাজার দোকানের (Best Telebhaja Shop In Kolkata) হদিশ দেব। যাদের তেলেভাজা খেতে লাইন পড়ে যায়।
কলকাতার সেরা ৭ তেলেভাজার দোকান:
মুখোরুচি (Mukhoruchi): এই দোকানটি জিএলটি রোডে অবস্থিত। শোনা যায় যে স্বয়ং শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণ এই দোকানের তেলভাজা খেতে ভালবাসতেন। দোকানের আসল মালিক ফাগুলাল শ। উদ্যান বাটিতে ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পথে গিরিশ ঘোষও একবার তেলেভাজার স্বাদ নিতে এই দোকানে গিয়েছিলেন। দোকানটি এখন ফাগুলালের পঞ্চম প্রজন্ম দুলাল চন্দ্র শ চালান। মুখোরুচি সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
আরও পড়ুন:Blood Sugar Level Chart: শরীরে কোন বয়সে কত সুগার লেভেল থাকা উচিত? রইল
জিহ্বার জল (Jihobar Jol): আর এন দাস রোডে অবস্থিত এই ৪০ বছরের পুরনো দোকানটি। অমল দাস সবজি বিক্রেতা হিসাবে কাজ করতেন। পরে তিনি তেলভাজার দোকান দেন। দুপুর ৩টে থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে দোকান। এখানে পাওয়া যায় এঁচোড়ের চপ (৬ টাকা), ডাল বরা (১ টাকা), আলুর বোমা (৩ টাকা), টমেটো চপ (৬ টাকা), ফুলুরি (২ টাকা), পটলের চপ (৬ টাকা), বেগুনি (৪ টাকা) ), পেঁয়াজি (৪ টাকা)-সহ আরও অনেক আইটেম।
নরেণদার দোকান (Narendrar dokan): হরিশ চ্যাটার্জী স্ট্রিটের এই দোকানটি ৬০ বছর পেরিয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছর এই দোকানের খ্যাতি ছড়িয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার লাগাম নিজের হাতে নেওয়ার পর নরেন্দ্র বেহরার ব্যবসা দ্রুত বাড়তে শুরু করে। তেলেভাজার প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়র ভালবাসা সুপরিচিত। একই পাড়ায় বসবাস করলেও বেহরা পরিবার মুখ্যমন্ত্রীকে টিভিতে বেশি দেখতে অভ্যস্ত। যদিও মুখ্যমন্ত্রী একবার গাড়ি থামিয়ে এই দোকানের তেলেভাজা খেয়েছিলেন। সেই থেকেই এই দোকানের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে, রবিবার বন্ধ থাকে।
পটলার দোকান (Potlar Dokan): উত্তর কলকাতার বাগবাজার স্ট্রিটের এই দোকানটির নাম রোকার আড্ডার সারমর্মকে ধরে রাখে, মালিক বাঙালি ভদ্রলোক দিব্যেন্দু সেন। পটলার দোকা সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে শালপাতার প্লেটে তেলভাজা পরিবেশন করা হয়। পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী প্রায়ই সকালে আসেন এই দোকানের তেলেভাজা নিতে। এছাড়াও লেখক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়েরও পছন্দ এই দোকানের চপ।
লক্ষ্মী নারায়ণ শ অ্যান্ড সন্স (Lakshmi Narayan Shaw & Son): বিধান সরণির গল্পে বলা হয়েছে যে খেদু শ ১৯১৮ সালে দোকানটি খোলেন। এই খেদুকে আবার চিনতেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু। অধ্যাপক ওটেনকে আক্রমণ করার জন্য নেতাজিকে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। আশ্চর্যের বিষয় যে দোকানটিকে নেতাজির চপ-এর দোকানও বলা হয়। এখন ভাই মোহন এবং কেষ্ট কুমার গুপ্ত দোকানটি চালান। দোকানটি এখনও নেতাজির জন্মদিন পালন করে। ওইদিন বিনামূল্যে তেলেভাজা বিলি করা হয়। এই দোকানের তেলেভাজার স্বাদ নিয়েছেন উত্তম কুমার থেকে শুরু করে অঞ্জন দত্ত-সহ কলকাতার অন্য সেলিব্রিটিরাও।
কালিকা (Kalika): এই দোকানটি কলেজ স্ট্রিট এবং সূর্য সেন স্ট্রিটের ক্রসিংয়ে অবস্থিত। এই দোকানটি প্রায় ৬০ বছর আগে যাত্রা শুরু করেছিল এবং কালী পুজো উপলক্ষে এটি খোলা হয়েছিল বলে এটির নাম হয়ে যায় 'কালিকা'। এই দোকানের তেলেভাজার স্বাদ কলকাতার খাদ্য রসিকদের জিভে লেগে আছে।