গত সোমবার নবান্নের সভাঘরে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেখানেই বিশেষ ভাবে সল্টলেক ও বিধাননগর এলাকায় পুরসভার কাজের মান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। ফুটপাথ দখল করা, পানীয় জলের অপচয়, রাস্তার আর্বজনা সাফ না-হওয়া ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন মুখ্য়মন্ত্রী। এই সব কাজ যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় তার জন্য কড়া নির্দেশও দেন তিনি। আর তাঁর সেই নির্দেশ পেয়েই মঙ্গলবার থেকে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে পড়ে বিধাননগর পুরসভা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই সল্টলেক-সহ বিধাননগরের বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাথ খালি করা শুরু হয় ৷ বিধাননগর দক্ষিণ থানার ১৬ নম্বর ট্যাঙ্ক লাগোয়া কেবি ব্লকে ফুটপাথের উপর বেআইনি দোকানগুলিকে ভেঙে ফেলা হয় ৷ বিধাননগর পুর নিগম এবং দক্ষিণ থানার পুলিশের পক্ষ থেকে পুরো বিষয়টির তদারকি করা হয় ৷ আর এই নিয়েই এবার নিজের বক্তব্য জানালেন বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, ‘আমি ভারতের তথা পৃথিবীতে কোথাও দেখিনি একজন মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত পুরসভার কাউন্সিলরদের ধরে ধরে মানুষের জন্য কাজ করার বার্তা দিচ্ছেন।’ দলনেত্রীর অসন্তোষ নিয়ে কৃষ্ণা চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘দিদি যদি বকেনও, সেটা আমার কাছে আশীর্বাদ। সেটা আমার কাছে শিক্ষা। সেটাকে আমি সংশোধন করব।’ কোথায় কি পরিষেবায় খামতি রয়েছে কি না, সে নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মেয়র বলেন, ‘যা বলেছেন সেটা আমাদের বলেছেন। আমরা সেটা বুঝে নেব।’ তিনি আরও জানান, ‘দিদি যা যা বলেছেন, যেখানে অন্যায় হয়েছে, সেটা দেখা হবে। এটুকু বলতে পারি।’
কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, 'ভুল হয়েছে, খামতি রয়েছে, মাথা পেতে নিচ্ছি। মুখ্যমন্ত্রী বকলে, ধমক দিলে, সেটা আমাদের কাছে আশীর্বাদ। জবরদখলমুক্ত করার কাজ শুরু হয়ে গেছে। আবর্জনা পড়েছিল, এটা আমার লজ্জা। ভুল থেকেই মানুষ শিক্ষা নেয়, আমিও নেব।' বিধাননগরের মেয়র আরও বলেছেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে আমরা কাজ শিখেছি। উনি আমার দলনেত্রী। এবং সারা পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। আমাদের যদি উনি ধমকান, আমাদের যদি বকেন, ওটা আমাদের কাছে আশীর্বাদ। সারা ভারতবর্ষে কোথাও দেখাতে পারবেন না, একজন মুখ্যমন্ত্রী তার দলের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে বসে, আমাদের ভুলগুলি দেখাচ্ছেন। এবং আমাদের কোথাও বলবার জায়গা নেই, যে উনি ভুল বলছেন। একজন মুখ্যমন্ত্রী এতটা খোঁজ রাখেন। আমি বলব হ্যাটস অফ, আমি জীবনে কখনও এমন মুখ্যমন্ত্রী দেখিনি।' সাংবাদিক বৈঠকে বিধাননগরের মেয়র বলেন, ‘উনি যেটা বলেছেন, ১০০ শতাংশ ঠিক বলেছেন। তাঁর নির্দেশ মাথায় নিয়ে চলব আমি। তিনি যদি বকেনও, সেটা আমার কাছে আশীর্বাদ।’
লোকসভা ভোটে কলকাতা-সহ বিভিন্নি পুর এলাকায় ধাক্কা খেয়েছে ঘাসফুল শিবির, এর পরেই পরিষেবা নিয়ে সোমবার বৈঠক ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী । নবান্নের বৈঠকে বিভিন্ন পুরসভার কাজ নিয়ে তীব্র ভর্ৎসনা করেন তিনি। পুর-পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম থেকে দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু সকলকেই ভর্ৎসনা করেন তিনি । পুলিশের ভূমিকা নিয়েও চরম বিরক্তি প্রকাশ করেন । এর পরেই বিধাননগর ও কলকাতাজুড়ে উচ্ছেদ অভিযানে নামে পুলিশ।