সেনা নিয়ে রাজনীতি করতে চান না, গতকালই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল, মুখে বললেও রাজ্যের শাসকদল সেনা জওয়ানদের নিয়ে রাজনীতিই করছেন। এবার সেই আঁচ পৌঁছে গেল বিধানসভার অন্দরে। সেই সেনা নিয়েই তুমুল বাকবিতণ্ডায় জড়ালেন তৃণমূল ও বিজেপির নেতারা। হল হইহট্টোগোল। সাসপেন্ডও করা হলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
সোমবার মেয়োরোডে তাঁদের জায়গায় থাকা তৃণমূলে ধর্নামঞ্চ খুলে দেয় ভারতীয় সেনাবাহিনী। সেই খবর চাউর হতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করেন, সেনাবাহিনীকে সামনে রেখে রাজনীতি করছেন মোদী-অমিত শাহরা। তবে সেনাকে তিনি দোষারোপ করতে রাজি নন। তারপর থেকেই সেনাকে সামনে রেখে ঠান্ডা লড়াই চলতে থাকে শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে। বিজেপির তরফে অভিযোগ করা হয়, সেনাকে অপমান করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যুক্তি দেওয়া হয়, সেনার তরফে সেই মঞ্চ খোলার জন্য একাধিকবার আবেদন করা হয়েছিল। অথচ তাতে কর্ণপাত করেনি তৃণমূল। সেজন্যই মঞ্চ খোলার কাজে নামতে হয় খোদ জওয়ানদের। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে অশান্তি তৈরির জন্যই মঞ্চে এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মুখে সেনাবাহিনীকে সম্মানের কথা বললেও আসলে চাইছেন বিদ্বেষ তৈরি করতে।
এদিকে আজ ফের সেই সেনা ইস্যুতেই বিধানসভা উত্তাল হয়ে ওঠে। ভারতীয় সেনাবাহিনীকে বিধানসভার অন্দরে অপমান করেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য় বসু। তার প্রতিবাদ করার জন্য তাঁকে বিধানসভা অধিবেশন থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। অভিযোগ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিধানসভার বাইরে এসে বিক্ষোভ দেখান তিনি। ভারতীয় সেনার নামে জয়ধ্বনিও দেন।
তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিযোগ করেন, 'অধিবেশন চলাকালীন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু দেশের সেনাবাহিনীকে অপমান করেন। বাংলাদেশের সামরিক অভ্যুত্থানের সঙ্গে ভারতীয় সেনার তুলনা টানেন। তারই প্রতিবাদে বিধানসভার ভিতরে ইন্ডিয়ান আর্মি জিন্দাবাদ স্লোগান তুলি। স্পিকারের কাছে অনুরোধ করি, যাতে ভারতীয় সেনাকে নিয়ে যা শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন তা যেন বক্তব্যের অংশ থেকে বাদ দেওয়া হয়।'
শুভেন্দুর দাবি, তাঁদের তরফে বিধানসভায় এই দাবি করা হলেও তাতে মান্যতা দেননি স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের কথা মোতাবেক নির্দেশ দেন তিনি। শুভেন্দুর কথায়, 'তারপরই আমাকে সাসপেন্ড করা হয়। তবে এটা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। আমাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আমি গর্বিত। সেনাবাহিনীর অপমান আমি সহ্য করব না। তারা আমাদের দেশের গর্ব। সীমান্ত রক্ষা করে। তাদের অপমান করেছেন অরূপ বিশ্বাস। ব্রাত্য বসু বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভয়ে জওয়ানরা কাল পালিয়েছিলেন। এটা অপমান। দেশের অপমান। এটা বরদাস্ত করব না।'
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সেনাকে সামনে রেখে 'রাজনীতি' করতে চাইছে দুই পক্ষই। সোমবার তাঁদের মঞ্চ খোলার ঘটনার প্রতিবাদে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হতে পারতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তিনি তা না করে ঘটনাস্থলে বলে বসেন, 'আমাকে দেখে প্রায় ২০০ সেনা পালাল।' আবার এদিন শুভেন্দু অধিকারীও সেনা ইস্যুকে সামনে রেখেই ওয়াক আউট করলেন। সুতরাং, দুই পক্ষই সেনা নিয়ে 'রাজনীতি' করছে না, দাবি করলেও ভারতীয় সেনাকে বারবার যেন 'রাজনীতির ঘোলাজলে নামানো হচ্ছে।'