প্রত্যাশা মতোই শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুর-বস্তি সংগঠনের ডাকে ব্রিগেড সমাবেশের মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ঝড় তুললেন সিপিএমের খেতমজুর সংগঠনের নেত্রী বন্যা টুডু। একযোগে বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেন। তাঁর ভাষণে উঠে আসে ১০০ দিনের কাজের টাকার বকেয়া, পাট্টা-সহ নানা ইস্যু। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়েও তিনি রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করেন।
বক্তব্য রাখতে গিয়ে বন্য়া বলেন, 'আমরা ভাল থাকতে পারি না। দুটো সরকার চলছে। একটা চোরের সরকার, আর একটা ডাকাতের সরকার। তা আমরা ভাল নেই। বুনোহাতি তাড়ানোর মতো আমাদের এই মুখ্যমন্ত্রীকে তাড়াতে হবে। না হলে আমরা বাঁচতে পারব না। মেদিনীপুরে জমি কাড়া হয়েছে, আমাদের লডাই দিন আনা দিন খাওয়া, খেটে খাওয়া মানুষদের লড়াই। শহরের মানুষরা আমাদের কথা জানেন না। গ্রামের মানুষরাও জানেন না শহরের মানুষের কথা। গ্রামের যারা খেটে খায় তাঁদের রোজ হচ্ছে ১৫০ টাকা আর ২ কেজি চাল।'
২০১১ সালে দেওয়া পাট্টা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বন্যা। তিনি বলেন, 'ভূমিহীনদের জমি দেওয়া হয়েছে ২০১১ সালে। সেই জমি লুট করতে শুরু করেছে।'
সিপিএম-সহ বাম দলগুলির ব্রিগেডে সাধারণ কর্মী সমর্থদের ভিড় হলেও ভোটবাক্সে তা হয় না বলেই মনে করে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তৃণমূলের মুখ্যপাত্র কুণাল ঘোষ দাবি করেছেন, ব্রিগেডে আসা লোকজন বিজেপিকে ভোট দেয়। কারণ নাম করে এনিয়ে জবাব দিয়েছেন বন্যা। তিনি বলেন, 'সবাই বলছে ব্রিগেডে লোক জড়ো হয়, ভোট বাক্সে পড়ে না। আর নয়। এবার মানুষ কিন্তু বুঝিয়ে দেবে। আমরা কোনও অত্যাচার সহ্য করব না। ১০০ দিনের কাজকে ২০০ দিন করব। আমরা দিল্লিতে যাব নরেন্দ্র মোদীর কাছে। টাকা দাও না হলে কাজ দাও। কাজ নিয়ে লড়াই হবে। আমরা আর অত্যাচার সহ্য করব না।'
আরজি কর কাণ্ড ও লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে কটাক্ষ করে খেতমজুর সংগঠনের নেত্রী বলেন, 'আজকে ব্রিগেড ভরিয়ে দিয়েছেন মা বোনেরা, আমরা কাজ করতে চাই। যুব সমাজটার কী হয়েছে? এত চুরি করছে যে দিদিমণি কিছু বলতে পারছে না। চকারি চাওয়া লোককে বলছে মাকে বলো চপ করে দিতে। চপ বেচে কি দোতলা ও তিনতলা বাড়ি হবে? চপ বিক্রি করে নাকি ঘর হচ্ছে। আমরা দেখতে চাই। আমরা নিজেরা দেখব, তবেই করব। বুথে লড়াই করতে হবে। আমাদের ভয় খেলে হবে না। বুকের পাটা আর হাতের কব্জি শক্ত করতে হবে। আবাস যোজনা বন্ধ নিয়ে দিদি বলছে ডাবল উন্নয়ন করছে। লক্ষ্মীদের যেখানে সম্মান থাকে না। লক্ষ্মীরা ধর্ষিতা হচ্ছে। আরজি করে কী হয়েছে? লক্ষ্মীদের সম্মান চলে যাচ্ছে আর তিনি টাকা ধরিয়ে দিচ্ছেন। বলছেন, খেলা হবে। আমরাও বলছি খেলা আমরাও করব। ২৬ নির্বাচনে আমার উইকেট ফেলব। আমরা খেলা দেখিয়ে দিব। প্রতিটি বুথে আমরা বসব।'
কে এই বন্যা ঢুডু?
সিপিএমের খেতমজুর সংগঠনের নেত্রী বন্যা টুডু হুগলির গুড়াপ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান। গুড়াপের চেরাগ্রাম লহরপুরের প্রত্যন্ত এলাকার এই বাসিন্দার বাড়িতে রয়েছেন স্বামী, ছেলে ও বউমা। ২০০১ সালে বাম রাজনীতিতে পা দেন বন্যা টুডু। তার পর যুক্ত হন মহিলা সংগঠনের সঙ্গে। কৃষক সমিতিতেও কাজ করেছেন। ২০১৫ সালে খেতমজুর সংগঠনের নেত্রী হিসেবে পরিচিত হন। সম্প্রতি তিনি হুগলির দাদপুরে আদিবাসীদের জমি বেহাত হওয়া আটকেছেন। তাতেই বঙ্গ রাজনীতির কেন্দ্রে উঠে এসেছেন।