‘ভুল করে’ সীমান্ত পার করে ফেলেছিলেন বাংলার BSF জওয়ান পূর্ণম সাউ। ভারত-পাক অশান্তির আবহে তাঁকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানি রেঞ্জার্স। তারপর থেকে পাক সেনার হাতেই বন্দি ছিলেন পূর্ণম। উদ্বেগে ছিল গোটা দেশ। দু’দেশের সংঘর্ষ বিরতির পরে পূর্ণমের দেশে ফেরা নিয়ে ফের আশার আলো দেখতে শুরু করে তাঁর পরিবার। অবশেষে বুধবার মুক্তি পেলেন পূর্ণম। ফিরলেন নিজের দেশে। তবে এই ঘটনা নিয়েও রাজনৈতিক দড়ি টানাটানি। একদিকে যখন BJP-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের পূর্ণনের দেশের ফেরার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কৃতিত্ব দেখছেন, অন্যদিকে তখন তৃণমূল কংগ্রেস BSF জওয়ানের স্ত্রী পাশে থাকার জন্য কৃতিত্ব দিচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কী বলছে পূর্ণমের পরিবারের সদস্যরা? কার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছেন তাঁরা?
২০ দিন পর পাকিস্তান থেকে ছাড়া পেলেন বাংলার বাসিন্দা পূর্ণম কুমার সাউ। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ অটারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ভারতে ফেরানো হয়েছে তাঁকে।
স্বামীকে মুক্ত করতে আট বছরের ছেলে এবং আত্মীয়দের নিয়ে গত মাসের ২৮ তারিখ হিমাচল প্রদেশের কাংড়ায় BSF-এর সদর দফতরে গিয়েছিলেন স্ত্রী রজনী সাউ। ফিরোজ়পুর সীমান্তেও যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভারত-পাক উত্তেজনার আবহে সেখানে যাওয়ার ছাড়পত্র মেলেনি। ফিরে আসেন তিনি। কেন্দ্রের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয় তাঁকে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সতীশ দুবে জানিয়েছিলেন, বায়ুসেনা অভিনন্দন বর্তমানের মতোই ফিরিয়ে আনা হবে পূর্ণম সাউকে। তারপর থেকে স্বামীর মুক্তির অপেক্ষায় প্রহর গুনছিলেন রজনী।
BSF একটি প্রেস বিবৃতি দিয়ে বুধবার জানায়, পাকিস্তান রেঞ্জার্সের সঙ্গে ‘ফ্ল্যাগ মিটিং’ এবং বিভিন্ন মাধ্যম মারফত আলোচনা সফল হয়েছে। পূর্ণমকে প্রত্যর্পণ করেছে পাকিস্তান। সাড়ে ১০টায় তাঁকে ওয়াঘা-অটারি সীমান্ত দিয়ে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জয়ধ্বনি করেছেন BJP সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, 'অপারেশন সিঁদুরের সাফল্যের পর আরও একবার ভারতের কূটনৈতিক জয়!বাঙালি বীর BSF জওয়ান পূর্ণম কুমার সাউয়ের পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তন শুধুই একজন সেনার মুক্তি নয়, এই ঘটনা সারা বিশ্বের কাছে প্রমাণ করে দিল ভারতের দৃঢ় সংকল্প, সম্মান ও নেতৃত্বের বিজয়।' তাঁর সংযোজন, 'এটাই নরেন্দ্র মোদীজির শাসন। যেখানে একজন জওয়ানের গায়ে হাত পড়লে, দিল্লি জবাব দেয় বজ্রনিনাদে! মোদীজির নেতৃত্বে ভারত আর নীরব থাকে না, ভারত প্রবল বিক্রমের সঙ্গে প্রত্যাঘাত করে। ভারত শুধু ক্ষমা করে না, বরং ইতিহাস লেখে। এবারও ভারত জিতেছে, কারণ আমাদের অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী মোদীজি রয়েছেন!'
অন্যদিকে, হুগলির রিষড়ার বাসিন্দা পূর্ণমকে আশ্বাস দেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। এদিন জওয়ানের ঘরওয়াপসি নিশ্চিত হতেই রজনীকে ফোন করেন মমতা। তিনি বলেন, 'আমি তো আপনাকে বলেইছিলাম ও ভাল আছে। আমি যেখান থেকে ধরেছিলাম, সেখান থেকে খালি হাতে ফেরার জায়গা ছিল না। বলেইছিলাম দ্রুত ফিরবে।' BSF জওয়ান পত্নীও তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, 'ম্যাডাম আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি আমায় আশ্বাস দেওয়ার তিন দিনের মধ্যেই উনি ফিরে এলেন।'
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এক্স হ্যান্ডল পোস্টে লেখেন, 'আমাদের BSF জওয়ান পূর্ণম কুমার সাউয়ের মুক্তির খবরে আমি খুব খুশি। ওঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলাম। স্ত্রীর সঙ্গে তিনবার কথা বলেছি। আজও ওকে ফোন করেছিলাম। ভাইয়ের জন্য অনেক শুভেচ্ছা।' তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন রজনী। তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী মোদী থাকলে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। উনি সিঁদুর মোছার বদলা নিয়েছেন আর আমার সিঁথির সিঁদুরও অক্ষয় রয়েছে।'