প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টা ২০ মিনিটে মারা যান তিনি। বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। ২০০০ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদে ছিলেন বুদ্ধদেববাবু। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ রাজ্য।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সাহিত্য শিল্পের প্রতি প্রীতির কথা সবার জানা। তিনি কবিতা লিখতেন, আবৃত্তি করতেন। তাঁর লেখা একাধিক প্রবন্ধের বইও আছে। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখার ভক্ত ছিলেন। লেখাপড়া নিয়ে থাকতে ভালোবাসতেন। কিন্তু ব্যক্তি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সম্পর্কে এমন অনেকে অজানা তথ্য আছে যেগুলো হয়তো অনেকেই জানেন না। বুদ্ধদেব ভট্টচার্য ক্রিকেট খেলতেন। ভালো ক্রিকেটার ছিলেন।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সম্পর্কে ৫ অজানা তথ্য
১) বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তেলেভাজা খেতে খুব ভালোবাসতেন। তেলেভাজায় তিনি কখনও না বলতেন না। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনও গাড়ি থামিয়েও তিনি তেলভাজা খেয়েছেন এমন দৃষ্টান্তও রয়েছেন। বুদ্ধদেব ভট্টচার্য মাছ খেতে ভালোবাসতেন। তেলেভাজা ও নোনতা ছিল তাঁর প্রিয়। একবার ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজে দলের এক সম্মেলন ছিল। সম্মেলন শেষ হতে বিকেল হয়ে যায়। গাড়িতেই ফিরছিলেন তিনি। তখন তাঁর ইচ্ছে হয় তেলেভাজা খাওয়ার। তাই তিনি গাড়ি থেকে নেমে তেলেভাজা ও দই খান। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য চেন স্মোকার ছিলেন। ঘন ঘন সিগারেট খাওয়ার জন্য ডাক্তারদের কাছে বিভিন্ন সময় ধমকও খেয়েছেন।
২) বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে সাদা ধুতি ও পাঞ্জাবি পরে থাকতে দেখতেই অভ্যস্ত বাংলার মানুষ। তাঁকে কোনওদিন প্যান্ট শার্ট পরতে দেখেননি কেউ। সেই কিশোর অবস্থা থেকে তিনি ধুতি পাঞ্জাবি পরতেন। তবে একবার তিনি প্য়ান্ট শার্ট পরেছিলেন। ১৯৮২ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রমোদ দাশগুপ্তর সঙ্গে গিয়েছিলেন চিনে। সেখানে তিনি প্যান্ট ও শার্ট পরেছিলেন। সেই প্রথমবার। তিনি প্যান্ট শার্ট পরতে অভ্যস্ত ছিলেন না। ফলে অস্বস্তি হচ্ছিল হয়তো। তাই নিয়ে প্রমোদবাবু তাঁকে রসিকতা করেন। উত্তরে বুদ্ধবাবু বলেন, 'এটা তো ট্রায়াল প্যান্ট। অভ্যেস নিয়ে। অভ্যাস হয়ে যাবে।' তবে বুদ্ধদেব বাবু প্যান্ট পরার চর্চা এগিয়ে নিয়ে যায়নি।
৩) বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ক্রিকেটার ছিলেন তা অনেকেই জানেন না। তিনি অম্বর রায়ের মতো বিখ্যাত ক্রিকেটারের সঙ্গে খেলতেন। খেলোয়াড় হিসেবে নামডাকও ছিল। তবে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়ার পর তিনি খেলা থেকে সরে আসেন। তবে খেলার প্রতি প্রীতি তাঁর ছিল। সেই কারণে যখনই দলের কোনও অনুষ্ঠান থাকত, খেলা থাকত তিনি ব্যাট হাতে মাঠে নেমে পড়তেন। অনেকবার এমন করেছেন। সিপিএম নেতা রবীন দেব জানান, একটা দিন তো ব্যাট হাতে নেমে পড়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
৪) বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছিলেন বইপোকা। তিনি বই পড়তে ভালোবাসতেন। রবীন দেব একবার জানিয়েছিলেন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখনও তিনি বই পড়তেন। বাড়ি ফিরে লেখাপড়া করতেন। কোথাও যাওয়ার সময় গাড়িতে বই থাকত তাঁর সঙ্গী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন তাঁর প্রিয় লেখক। রবীন্দ্র পরবর্তী কবিদের বই পড়তে ভালোবাসতেন। শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গাঙ্গুলীদের বই ভালোবাসতেন। এছাড়াও রাজনৈতিক বই ছিল তাঁর প্রিয় বিষয়।
৫) একবার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য দোভাষির কাজও করেছিলেন। সময়টা ২০০৫। কলকাতায় এসেছিলেন ভেনেজুয়েলার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজ। সেই মঞ্চে স্প্যানিসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'চিত্ত যেথা ভয় শূন্য' পাঠ করা হয়। কিন্তু সেটা অনেকের পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল না। তখন বুদ্ধদেববাবু নিজে হাতে মাইক নিয়ে সেই কবিতাটি বাংলায় বলেন।